class="post-template-default single single-post postid-19001 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ম্যালেরিয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য : ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ম্যালেরিয়া Malaria

২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস

ম্যালেরিয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য

মশাবাহিত সংক্রামক রোগ ম্যালেরিয়া। সংক্রমিত স্ত্রীজাতীয় অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়, যা জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধেও নওয়া যায় নানা ব্যবস্থা। পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও মেডিসিন ইউনিটের ডিন ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

কারো ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না এটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়

ম্যালেরিয়ার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের এক ধরনের অণুজীব, যা প্রটোজোয়ান (এককোষী প্রাণী) প্যারাসাইটস (পরজীবী প্রাণী)। বাংলাদেশের ১৩-১৪টি জেলায় দুই কোটির মতো মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ি এলাকা, বিশেষ করে তিন পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে প্রকোপ বেশি। তবে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়ও ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

ম্যালেরিয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য

সুপার ম্যালেরিয়া

সুপার ম্যালেরিয়া নামে এক ধরনের ম্যালেরিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে বেশ কিছুদিন আগে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৮ সালে কম্বোডিয়ায় এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে। পরে এর জীবাণু থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপকভাবে ম্যালেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী বা ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট।

সাধারণত অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল ওষুধগুলো প্রয়োগ করে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা যায়। সুপার ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এই ওষুধসহ অন্য প্রধান ওষুধগুলোও তেমন কাজ করছে না বলে এটা নিয়ে কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এখনো এই রোগ দেখা যায়নি।

 

কারণ

সংক্রমিত অ্যানোফিলিসজাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া শুরু হয়। পরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু লালার মাধ্যমে প্রোটেস্টের সংবহনতন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং যকৃতে পৌঁছে। সেখানে তারা পরিপক্ব হয় এবং বংশ বৃদ্ধি করে। এই মশা যখন অন্য কাউকে কামড়ায়, তখন তার রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায় এবং সেও আক্রান্ত হয়। অ্যানোফিলিস ছাড়াও ভাইভক্স, ওভালে বা ম্যালেরির—যেকোনো একটি জীবাণু বহনকারী মশার দংশনেও ম্যালেরিয়া হতে পারে। ম্যালেরিয়াবাহী মশা মূলত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে কামড়ায়।

 

লক্ষণ

কারো ম্যালেরিয়া হলে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায়। এই রোগের প্রধান লক্ষণ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। জ্বর ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। তবে অনেক সময় জ্বর আসা-যাওয়া করে নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে (যেমন একদিন পর পর জ্বর এসে তা তিন-চার ঘণ্টা দীর্ঘ হতে পারে)। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যায়। এগুলো ছাড়াও ম্যালেরিয়া রোগের কিছু উপসর্গ রয়েছে।  যেমন :

♦ মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব।

♦ মাথা ধরা

♦ অনিদ্রা

♦ খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা

♦ কোষ্ঠকাঠিন্য

♦ বমি বমি ভাব অথবা বমি

♦ হজমে গোলযোগ

♦ অত্যধিক ঘাম হওয়া

♦ খিঁচুনি

♦ পিপাসা লাগা

♦ ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা

♦ মাংসপেশি, তলপেটে ব্যথা অনুভব

♦ লাল রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা

♦ রক্তে শর্করার কম উপস্থিতি

♦ কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দেয়।

 

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

কারো ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না এটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। সাধারণত ব্লাড ফিল্মস ব্যবহার করে রক্তের দূরবীক্ষণযন্ত্রের মাধ্যমে এই পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া এখন দ্রুত সময়ে এক বিন্দু রক্ত নিয়ে ম্যালেরিয়ার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। কারো ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে যেকোনো সময়ই রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে হতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী এক সপ্তাহে সুস্থ হয়ে যায়। তবে কোনো সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।

কারো ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে প্রথমবার পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়ার কিছু না পাওয়া যায়, তবে পর পর তিন দিন পরীক্ষাটি করা উচিত। একান্তই যদি ম্যালেরিয়া সনাক্ত হয়, তাহলে দেরি না করে বা উদ্বিগ্ন না হয়ে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। এই রোগ নিরাময়ে পাইপেরাকুইনের সমন্বয়ে তৈরি ‘আর্টেমিসিনিন’ নামের ওষুধটি বেশ কার্যকর। দেশের প্রায় সব হাসপাতাল, যেমন থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পাওয়া যায়।

 

ঝুঁকি বেশি যাদের

যাদের ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি রয়েছে তারা হলো—

♦ যারা ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় থাকে অথবা যারা ওই সব এলাকায় বেড়াতে যায়।

♦ অল্প বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক হতে পারে।

♦ গর্ভবতী মায়েদের ম্যালেরিয়া হলে গর্ভস্থ শিশুরও ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

♦ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে রক্ত দিলে তারও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

 

প্রতিরোধে করণীয়

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকারযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য। মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এই রোগ প্রতিরোধের উপায়। অর্থাৎ মশার কামড় প্রতিরোধ করার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ দূর করা সম্ভব। এ জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন—

♦ দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা।

♦ দরজা-জানালায় মশক নিরোধক জাল, প্রতিরোধক ক্রিম, স্প্রে ব্যবহার করা।

♦ ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা বা স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা।

♦ জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে বেশি। এসব স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া।

♦ ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সঙ্গে রাখা।

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!