Saturday, April 27
Shadow

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেলের পরামর্শ : স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে করণীয়

স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল বললেন, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক আলাদা

স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক সম্পূর্ণ ভিন্ন রোগ। স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগ এবং হার্ট অ্যাটাক হূদপিণ্ডের রোগ। অথচ অনেক সময় স্ট্রোক হলেও রোগীকে দ্রুত হূদরোগ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এতে মূল্যবান সময় ও অর্থের অপচয় হয়। অথচ হার্ট অ্যাটাক হলে হূদরোগ বিশেষজ্ঞ, আর স্ট্রোক হলে ম্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য।

স্ট্রোক : কোনো কারণে মস্তিষ্কের নার্ভকোষে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে বা রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে (প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে) অথবা ফেটে গেলে স্ট্রোক হয়। তবে আঘাতজনিত কারণে কখনো স্ট্রোক হয় না।

হার্ট অ্যাটাক : হূদপিণ্ডের কোষে রক্ত সরবরাহ না পেয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়াই হার্ট অ্যাটাক। একিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন এবং আনস্ট্র্যাবল অ্যানজাইনায় এ রকম জটিল অবস্থা তৈরি হয়।

 

স্ট্রোকের কারণ

স্ট্রোকের বেশ কিছু ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ রয়েছে যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বেশি বয়স, ধূমপান, হূিপণ্ডের নানাবিধ সমস্যা, মস্তিষ্কের রক্তনালি সরু হয়ে যাওয়া, অ্যালকোহল, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল ইত্যাদি। পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের স্ট্রোক বেশি হয়।

 

চেনার সহজ উপায়

সহজে এবং দ্রুত স্ট্রোক শনাক্ত করার কার্যকর একটি পদ্ধতি বের করেছেন চিকিৎসকরা, যাকে বলে ফাস্ট। এর সাহায্যে যে কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিনে নিতে পারেন।

এফ = ফেস : অর্থাৎ লক্ষ করতে হবে রোগীর চোখ-মুখ ঝুলে গেছে কি না, হাত-পায়ে শক্তি রয়েছে কি না। অথবা মুখ বেঁকে গেছে কি না, হাসলে বেঁকে যাচ্ছে কি না?

এ = আর্মস : রোগী নিজে নিজে দুই হাত ওপরে তুলতে পারে কি না এবং একইভাবে কিছুক্ষণ ধরে রাখতে পারে কি না।

এস = স্পিচ : খেয়াল করতে হবে কথা বলতে গেলে জড়তা আসে কি না অথবা মুখের কথা এলোমেলো হয়ে যায় কি না।

টি = টাইম : যদি ওপরের তিনটি লক্ষণের যেকোনো একটি দেখা যায় তবে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত নিউরোলজি হাসপাতালে নিতে হবে।

 

চিকিৎসা

স্ট্রোকের চিকিৎসায় প্রথমেই দেখা হয় রোগীর পালস, শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তচাপ ঠিক আছে কি না  এসব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। রোগীর পুষ্টি ঠিক রাখার জন্য সঠিক খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। রোগী খেতে না পারলে প্রয়োজনে নাকে নল দিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্ট্রোকের রোগীকে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর এপাশ-ওপাশ করে শোয়ানো উচিত। তাহলে পিঠের ঘা প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগী ঠিকমতো মলমূত্র ত্যাগ করছে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

স্ট্রোকের কারণগুলো যেমন—রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে খুব দ্রুত। জ্বর, নিউমোনিয়া, লবণের স্বল্পতা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করতে হবে। এরপর কোন ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা করতে হবে।

 

প্রতিরোধে করণীয়

কিছু ভালো অভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, টেনশনমুক্ত জীবন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখা, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য ভালো। এ ছাড়া শাকসবজি, দুধ, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, ভূষিসমৃদ্ধ খাবার, যেমন : ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত ইত্যাদি সুষম খাদ্য খাওয়া ভালো।

লেখক :  রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল,  স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!