Saturday, May 24

জ্ঞানের ছটায় বিকশিত হচ্ছে ক্যাম্বোডিয়ার তারুণ্য, পাশে চীন

‘জ্ঞানই ভাগ্য পরিবর্তনের চাবি’—এই বিশ্বাস তারাই আঁকড়ে রাখেন, যারা শিক্ষা গ্রুহণ ও তা ছড়িয়ে দেওযার মাধ্যমে জীবন বদলাতে চায়। এই বিশ্বাসই পথ দেখাচ্ছে কম্বোডিয়ার অনেক তরুণকে।

china cambodia education program

২১ বছর বয়সী মভ ইউস নতুন প্রযুক্তি শিখে ভালোভাবে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখছেন। চীনের সহায়তায় তার সেই স্বপ্নে তরী এগিয়ে চলছে তরতর করে।

কম্বোডিয়ার সিয়েম রিয়াপ প্রদেশে অবস্থিত ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অব আঙ্কোরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মভ ইউস তার ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত। তিনি মেকাট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে পড়ছেন এবং পূর্ণ স্কলারশিপে সেখানে ভর্তি হয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘অনেক মেয়ে দেশে সার্ভিস সেক্টরে কাজ করে, আমি তথ্যপ্রযুক্তি শিখতে চেয়েছি, কারণ এটি এখন দেশের উন্নয়নের বড় চালিকাশক্তি।’

মভ সেই ২,৪০০ শিক্ষার্থীর একজন যারা চীনের হাইনান টেকনিশিয়ান কলেজ থেকে পেশাগত প্রশিক্ষণ পেয়েছে বা পাবে।

কম্বোডিয়ার শ্রম ও কারিগরি প্রশিক্ষণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে আইএলও/চায়না পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম ২০২০ সালে কম্বোডিয়ায় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করে। চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগে সহায়তা করেছে।

এই কর্মসূচি কারিগরি প্রশিক্ষণকে চাকরির বাজারের সঙ্গে যুক্ত করেছে, সবুজ ও ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াচ্ছে, এবং চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ছে।

ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক প্লেক প্রোনি তিনবার চীন গেছেন প্রশিক্ষণ নিতে। তিনি বলেন, ‘চীনের অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও দক্ষতা অনেক আধুনিক। চীনের প্রযুক্তিপূর্ণ কারখানা ঘুরে দেখা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চীনের দেওয়া অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি এখন আমরা ব্যবহার করি, তাই আমাদের নতুন প্রযুক্তি শিখতে হয়। প্রশিক্ষণের ফলে ছাত্রছাত্রীরা চাকরি পাচ্ছে, পদোন্নতি পাচ্ছে, এমনকি বেতনের পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে অনেক জায়গায়।’

প্রোনি জানান, তার অনেক ছাত্র চীনে যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তিনি চীনে গিয়ে দেখেছেন, সেখানে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং ভালো ফল করে।

ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক রাথ রতানাক বলেন, যদিও প্রযুক্তির দুনিয়া এগিয়ে গেছে, কম্বোডিয়ায় এখনো প্রযুক্তিগত সাপোর্ট ও সুবিধার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা রন্ধন শিল্প বা পর্যটন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এখন ক্লাউড টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কম্পিউটার সায়েন্স এবং রোবট নিয়ন্ত্রণের মতো আধুনিক দক্ষ লোকজনের অভাবে ভুগছি।’

তিনি আরও জানান, আইএলও/চায়না প্রোগ্রাম নির্মাণ খাতের জন্য একটি ডিজিটাল স্বীকৃতি সিস্টেম চালু করেছে, যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৫০০ জনকে সনদ দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রশিক্ষণের মানও উন্নত হয়েছে।

এ প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ম্যানেজার তিয়ান ফেং জানান, কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারে দক্ষতা উন্নয়নই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার জন উপকৃত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী।

তিনি জানান, ‘কম্বোডিয়ায় শুধু আইটি পেশাদারদের নয়, আমরা ১৯৪ জন পর্যটন পেশাজীবীকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যাদের মধ্যে ১১৩ জন নারী ছিলেন। প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল খাদ্য পরিবেশন এবং চাইনিজ রন্ধনশিল্প।’

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে আয়োজিত ‘আসিয়ান প্লাস থ্রি’ শ্রমমন্ত্রীদের বৈঠকে কম্বোডিয়ার শ্রমমন্ত্রী হেং সউর এই প্রোগ্রামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এটি শ্রমবাজারে দক্ষতা উন্নয়ন, সিস্টেম উন্নয়ন এবং সরকারি-বেসরকারি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!