class="post-template-default single single-post postid-49710 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

কাইকারটেক হাটের পুতা মিষ্টি কেন বিখ্যাত

নারায়ণগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাট জমে উঠে প্রতি রবিবার। ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি দেড় কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির পুতা মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। প্রায় দুইশ বছরের পুরনো এই হাটে এখনো গ্রামীণ বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

পুতা মিষ্টি
পুতা মিষ্টি

সামিয়ানা টানিয়ে দোকান পাঠ বসেছে খোলা পরিবেশে। রোববার ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই হাট। লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে সাপ্তাহিক এই হাটটি। অনেক দর্শনার্থী ভিড় করে হাটের গ্রামীন পরিবেশ উপভোগ করতে।

কাইকারটেক হাটের বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করতে সবাই এক বাক্যে ২শ বছর বলে দিল। পরে এর ইতিহাস জানার জন্য জবুথবু এক বৃদ্ধ হারিছ মিয়াকে দেখিয়ে দিল হাতের বিক্রেতারা। হারিছ মিয়াকে জিজ্ঞাসা করি, ‘এই হাটের বয়স কত?’ জবাবে ২শ বছরের পুরনো নানা কথা উঠে আসে। হারিছ মিয়া তার বাবা-দাদার কাছে শুনেছে এই হাটে এক সময় হাতি-ঘোড়া সবকিছু বিক্রি হতো এই হাটে। এক সময়ে জমিদাররা এই হাটে আসতো।

পুতা মিষ্টি
পুতা মিষ্টির বিক্রেতা

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার মধ্যবর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের ওপরে কাইকারটেক ব্রিজের পাশে এই হাটটি অবস্থিত। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাটে প্রবেশ করতেই বিশাল আকৃতির মিষ্টি চোখে পড়বে যা দেখতে অনেকটা শীল পুতার সাদৃশ্য। এজন্য এই মিষ্টি পুতা মিষ্টি নামে পরিচিত। দেড় থেকে এক কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির পুতা মিষ্টি দেখলেই জিভে জল চলে আসে। তাছাড়া বিশাল আকৃতির ফলে সকলের নজর কাড়ে।

মিষ্টি দেখতে দেখতে কথা হয় দোকানি ও মিষ্টির কারিগর সঞ্জয় ঘোষের সাথে। তিনি বলেন, ‘এই হাট পুতা মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। হাটে আসলে পুতা মিষ্টি দিয়ে পরোটা না খেলে আফসোস থেকে যাবে। প্রতিকটি মিষ্টি দেড় থেকে এক কেজি ওজনের হয়ে থাকে। প্রতি কেজি মিষ্টি ১২০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়াও ছোট পুতা মিষ্টি রয়েছে। রয়েছে রসগোল্লা, কাল জাম, বালুসা, দই। একদিনে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হলে জানালেন এই বিক্রেতা।

পুতা মিষ্টি

তিনি আরো বললেন, ‘আমি ১০ বছর যাবত এই মিষ্টি তৈরি করে হাটে ও আমার দোকানে বিক্রি করছি। পূর্ব পুরুষের এই পুতা মিষ্টি তৈরির ব্যবসা এখনো ধরে রেখেছি। এই হাটে যাদের পুতা মিষ্টি বিক্রি করতে দেখছেন তারা সবাই আমাদের আত্মীয় স্বজন। এখন অবশ্য অনেক কর্মচারী আমাদের কাছ থেকে মিষ্টি তৈরির কাজ শিখে নিজেরা ব্যবসা শুরু করেছে।

 

পুতা মিষ্টি বিক্রেতা ও কারিগর প্রদিপের সাথে কথা হয়। এই মিষ্টির বিশাল আকার সম্পর্কে ধারণা দিলেন। তিনি বলেন, ‘এই মিষ্টি ৪-৫ কেজি ওজনের বানিয়ে দেয়া যাবে। অর্ডার দিলে বড় বানিয়ে দেই। এক কেজি ও দুই কেজি মিষ্টি চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এজন্য বড় সাইজের মিষ্টি বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয়না। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের তৈরি মিষ্টি বাজারে আনি। রসগোল্লা, চমচম, কাল জাম, বালুসা, দই বিক্রি করি। এর সাথে পরোটা ভাজি চলে দিনভর। এসব বিক্রি করে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হবে একদিনে।

তিনি আরো বললেন, এই হাটে যুগ যুগ ধরে পুতা মিষ্টির চাহিদা রয়েছে। আমাদের এখানেই প্রথম এই পুতা মিষ্টির প্রচলন শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে এর কারিগর ছড়িয়ে পড়েছে। এই মিষ্টি জেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন জেলায় যায়। ভিন্ন ভিন্ন জেলা থেকে আমাদের কাছে অর্ডার আসে।

মিষ্টির দোকানের পাশে জিলাপি, নিমকি, শন পাপড়ি, পিটি, চানাচুর, চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, শরবত সহ হরেক রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। চোখের সামনে গরম গরম জিলাপি ভেজে পরিবেশন করা হচ্ছে যা দেখে লোভ সামলানো মুশকিল। এছাড়াও বাহারি ধরনের খাবার রয়েছে এই হাটে।

পুতা মিষ্টি

খাবারের দোকান ছেড়ে একটু সামনে এগোতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও কবুতর আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। হুমা, গিরিবাজ, লক্ষ্যা, বাজিগর, কোয়েল, কাকাতুয়া, টার্কি, চিনা মুরগি, রাজ হাঁস বিক্রি হচ্ছে দুই সারিতে। তবে রং বেরঙের বিদেশি জাতের পাখি দেখে চোখ ফেরানো সম্ভব হচ্ছিল না।

 

নদীর তীর ঘেঁষে বিশাল আকৃতির লম্বা লম্বা বাঁশ সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এর পাশে কাঠ বিক্রির দোকান। বিপরীত দিকে এগোতে জাল, টেটা, দা, রাম দা, বটি, চাপাতি, কাস্তে, কোদাল, শাবল সহ লোহার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখা যায়।

 

মাছ ধরার জাল নিয়ে বসে আছেন দোকানি জামান মোল্লা। ঝাকি জাল ১২শ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেন। দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবত তিনি এই হাটে জাল বিক্রি করছেন।

টুকড়ি, মাছ ধরার চাই, কুলা, ডুলি, সহ নানা পণ্য নিয়ে দোকান পেতে বসেছেন আসাদ আলী। ১২ বছর যাবত এই হাটে মালামাল বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন।

মাছের দোকান, সবজির দোকান, মসলার দোকান, ফুল গাছের দোকান থেকে শুরু করে গরু, ছাগল কি নেই এই হাটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছু পাওয়া যায়। এছাড়াও এই হাটের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে এই হাটে নৌকা বিক্রি হয়। পুতা মিষ্টির পাশাপাশি এই হাট নৌকা বিক্রির জন্য বেশ জনপ্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!