ক্লিন্ট ইস্টউড আসলে এখন আর শুধু ব্যক্তির নামও নয়, এটা একটা স্কুলের নামও। যে স্কুলের ছাত্ররা এখন হলিউডে মারদাঙ্গা ওয়েস্টার্ন ছবি বানায়।
আমাদের এদিকটায় সিনেমার নায়ক হওয়ার একটা বয়স লাগে। বয়স পয়ত্রিশ ছাড়ালেও বহু কষ্টে তাকে ভার্সিটির ছাত্র বানিয়ে দেয়া হয়। এদিক দিয়ে বয়সের বেড়ামুক্ত হলিউড। নায়কসুলভ গাম্ভীর্যটা আসতে আসতেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। তার আগ পর্যন্ত সবাই ছোকড়া। তো, যাকে নিয়ে এ লেখা তার ভূমিকায় আসলে নতুন করে রাজা-বাদশাদের মতো লম্বাচড়া বিশেষণ দরকার নেই। তিনি ক্লিন্ট ইস্টউড । যার নামের আগে পরে কণা পরিমাণ বিশেষণেরও দরকার নেই। ধরুন, এ লেখাটা যদি মিস্টার এক্স নামের একজন ওয়েস্টার্ন ছবির পরিচালককে নিয়ে হতো, তখন বলা যেত, মিস্টার এক্সের মধ্যে ক্লিন্ট ইস্টউডের ছায়া দেখতে পাচ্ছি আমরা।
ক্লিন্ট ইস্টউড আসলে এখন আর শুধু ব্যক্তির নামও নয়, এটা একটা স্কুলের নামও। যে স্কুলের ছাত্ররা এখন হলিউডে মারদাঙ্গা ওয়েস্টার্ন ছবি বানায়। সেই একই রুক্ষ্ম দৃষ্টি, একইভাবে দাঁতের কোণে ধীরলয়ে ম্যাচের কাঠি চিবুনো, হোলস্টারের ওপর টানটান হাতের তালু; এসব যেন ওয়েস্টার্নের অস্থিমজ্জায় মিশিয়ে দিয়েছেন ইস্টউড।
আগে দুয়েক বছর পরপরই পর্দায় দেখা যেত তিন প্রজন্মের এই আইডলকে। কিন্তু সর্বশেষ গ্র্যান তোরিনোতে এক খেপাটে বুড়োর চরিত্রে অভিনয় করার পর দীর্ঘ চার বছরের বিরতি নিয়ে বসেন। ভক্তরা পুরো একটি আঙুল গুনে শেষ করতেই আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠেন ক্লিনটন ইস্টউড জুনিয়র। বেজবল টিম তৈরির মিশন নিয়ে গল্পটা। মুক্তি পাবে এ মাসের ২১ তারিখ। যথারীতি এ ছবিতেও বুড়ো দেখায়নি ইস্টউডকে।
পরিচালনা হোক আর অভিনয়, ইস্টউড ছবিতে থাকা মানেই ঘোর লাগা কোটি কোটি চোখ পর্দায় সেঁটে থাকবে। ক্লিন্ট ইস্টউডের ছবি মানেই টানটান একটা কিছু। ওয়েস্টার্ন ছবি যে শুধু বন্দুকের ভেতর বাজি পোড়ানো নয়, সেটা তিনিই দেখিয়েছেন।
স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন নামের একটি কম বাজেটের ঘরানা আছে পশ্চিমের ছবির জগতে। এই ঘরানায় মাইলফলক গেঁড়ে দেয় ইস্টউড অভিনীত আর ফিস্টফুল অব ডলারস। তখন অভিনেতা ইস্টউডের বেড়ে ওঠার সময়। তার আগে গুটিকয়েক ছবি আর টিভি সিরিজের কথা আপাতত বাদ দেয়া যাক। ফিস্টফুলের পর ফর আ ফিউ ডলারস মোর ও ট্রিলোজির শেষ ছবি দ্য গুড দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র পর ইস্টউড হয়ে যান অদ্বিতীয়। এরপর ইংরেজিতে যাকে বলে ব্লা ব্লা ব্লা। মানে তুফানের পর গাছ থেকে ঝরে পড়া আমের একটার পর একটা পুরস্কার কুড়োতে লাগলেন ইস্টউড।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট থেকে আমেরিকার সেরা মুভি স্টার; সম্মান কোনোটা কারোর চেয়ে কম নয়। আর ফরগিভেন থেকে মিলিয়ন ডলার বেবি, চ্যাঞ্জেলিং, গ্র্যান তোরিনো; এক জীবনে পেলেন চারটি অস্কার ১২৬টি সেরা পুরস্কার। অপূর্ণতা আছে? আছে বৈকি। অভিনয়ের জন্য অস্কারটা কী করে যেন ফসকে গেল। পরিচালনাটাই বোধহয় ভালোমতো ধরেছিল।
ইস্টউডের অভিনয়ে অস্কার না পাওয়ার অবশ্য আরেকটা কারণ থাকতে পারে। নিজস্ব কিছু ট্রেডমার্কের জন্য বিখ্যাত ইস্টউড। বয়স এখন ৯২ হলেও এখনো নাকি সবাই তার ভেতর সেই বুনো পশ্চিমের রহস্য আর খেপাটে চেহারাটা খুঁজে বেড়ায়। ভক্তদের এ চাহিদার একটা প্রভাব সম্ভবত তার অভিনয় প্রতিভার অন্তর্জালে আটকা পড়ে যায়। আর অস্কার তো বরাবরই নাক উঁচু পুরস্কার। জনপ্রিয়তার চেয়েও কে কতখানি তাল লয় বজায় রেখে মাপমতো চরিত্রায়ন করতে পারল সেটাই বিবেচ্য। সে যাকগে। ডিরেক্টরস গিল্ড, গোল্ডেন গ্লোব ও পিপলস চয়েজ যে কতবার পেয়েছেন সেটা আবার আঙুলের করে গুনতে হবে।
ইস্টউডের বিখ্যাত ছবি? দ্য বিগিল্ডের কথা না বললেই নয়। আহত এক সেনার অভিনয় করে আবেগাহত করে দিয়েছিলেন সমালোচকদের। প্লে মিস্টি ফর মি, ডার্টি হ্যারি, ব্রিজি, দ্য আউটল জোসি ওয়ালেস, এসকেপ ফ্রম আলকাতরাজ, ব্রংকো বিলি, সিটি হিট, পেল রাইডার, দ্য রুকি ইত্যাদি ইত্যাদি; ইস্টউডের কোনো ছবির চেয়ে কোন ছবি ভাল সেটা নিয়ে থিসিস পেপার করা যেতে পারে।
সে বিতর্ক এখান থাক। খেপাটে বুড়ো আরো কয়েকটা ছবি করে যাক, ভক্তরা মনেপ্রাণে এটাই চায়। বারে বারে রিলিজ পাক মহানায়কের ছবি। কোন ছবি কত টাকার ব্যবসা করলো আর তিনি কোন পুরস্কার পেলেন এসব নিতান্তই তুচ্ছ ঠেকে তার দরবারে। ইস্টউড আর কী পুরস্কার নেবেন। তার নামেই একটা পুরস্কার চালু করার সময় এসে গেছে।