ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন নাহিদ হাসান জয়। প্রথম বর্ষ থেকেই তিনি সহকারী জজ হওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় প্রথমবারেই সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। যাদের সহকারী জজ হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে, তাদের জন্য নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ দিয়েছেন জয়। তার অভিজ্ঞতা শুনেছেন ইরফান উল্লাহ রাফসানজানি।

১. বিজেএস সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ
বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতির শুরুতেই অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাসটি প্রিন্ট করে কয়েকদিন সেটি নিয়ে ভাবা উচিত। কোন বিষয়গুলো একজন পরীক্ষার্থীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোন বিষয়গুলো দুর্বল, তা চিহ্নিত করা প্রথম ধাপ।
২. বাংলা ও ইংরেজিতে বিশেষ নজর
বাংলা ব্যাকরণের জন্য ৪০ নম্বর এবং ইংরেজি ব্যাকরণের জন্য ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে, তাই এই অংশে প্রথম থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কোন কোন বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, তা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলোর বিস্তারিত অধ্যয়ন করা জরুরি। বাকিরা অংশ ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে।
৩. গণিত বুঝে পড়া
অনেক পরীক্ষার্থী গণিতে দুর্বলতা অনুভব করেন, তাই প্রস্তুতির শুরু থেকেই প্রতিদিন অনুশীলন করা উচিত। মাধ্যমিক পর্যায়ের গণিতের ওপর দক্ষতা বাড়িয়ে তারপর বাজারের প্রচলিত বই থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে পরিকল্পিত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।
৪. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশ-বিদেশে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা জরুরি।
৫. বিজ্ঞান অংশ
১৭তম বিজেএস লিখিত প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট ১৩টি প্রশ্ন থাকে, যার মধ্যে ১০টির উত্তর দিতে হয়। এই অংশে ভালো করতে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান বইগুলো পড়ে বেসিক ধারণা পরিষ্কার করা জরুরি। পাশাপাশি বাজারের প্রচলিত বই ও পূর্ববর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা সম্ভব।
৬. সমসাময়িক বিষয় ও পত্রিকা পড়া
ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং দক্ষতা বাড়াতে হলে সমসাময়িক বিষয়ে আপডেট থাকা জরুরি, আর এক্ষেত্রে পত্রিকা পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
৭. আইন সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শিতা
ক. আইন অংশে মোট ৬০০ নম্বর থাকে।
এই অংশে ভালো করতে হলে মুসলিম আইনের উত্তরাধিকার এবং হিন্দু আইনের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অধ্যায় থেকে অন্তত ৪০ নম্বর নিশ্চিত করা সম্ভব। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই পারিবারিক আইন পড়ানো হয়, তাই এই অংশে ভালো করা তুলনামূলক সহজ।
খ. দেওয়ানি আইন বিষয়ক প্রস্তুতি
দেওয়ানী বিষয়ে কৌশলী হওয়া জরুরি। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, তামাদি আইন এবং সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট ভালোভাবে পড়লে ৬০ নম্বর কভার করা সম্ভব।
গ. সাংবিধানিক আইন
এই অংশে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের সংবিধান ভালোভাবে আয়ত্তের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা উচিত। সংবিধানের ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও সংশোধনী সম্পর্কে ধারণা থাকলে ১০০ নম্বরে ভালো করা সম্ভব।
ঘ. সম্পত্তি ও ভূমি আইন
মূল আইনগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। উদাহরণসহ অধ্যয়ন করলে এই অংশ সহজ হয়ে যাবে।
ঙ. ফৌজদারি আইন
এই অংশ কিছুটা বড় হলেও কৌশলী হওয়া জরুরি। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে বারবার আসা অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি রেফারেন্স বই থেকে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে।
চ. ঐচ্ছিক বিষয়
স্পেশাল সেটের জন্য শিক্ষার্থীর পছন্দ গুরুত্বপূর্ণ। ঐচ্ছিক ১ ও ২ স্বাধীনভাবে নেওয়া যায়। এই অংশে মূল আইনের ধারাগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করাই যথেষ্ট। আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থাকলে, সেটি ধারার সঙ্গে সংযোগ করে পড়া উচিত।
৮. খাতায় লেখার মান ও ভাষা
খাতায় লেখার মান ভালো হতে হবে। বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষাতেই লেখা হোক, সেটির গুণগত মান বজায় রাখা জরুরি।
৯. নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুনদের জন্য পরামর্শ হলো ধৈর্যশীল ও বিনয়ী হওয়া। সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা জরুরি। কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, তাই ধারাবাহিকভাবে অধ্যবসায় বজায় রাখতে হবে।
ইরফান উল্লাহ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া