class="post-template-default single single-post postid-18936 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

উচ্চ রক্তচাপের নতুন গাইডলাইন : ডা. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী

উচ্চ রক্তচাপের

উচ্চ রক্তচাপের নতুন গাইডলাইন

নিয়ন্ত্রণে রাখলে উচ্চ রক্তচাপসংক্রান্ত জটিলতা এড়ানো যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে অনেকেই সচেতন নয়। ঠিক কিভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই উচ্চ রক্তচাপ? নতুন গাইডলাইনসহ এ বিষয়ে লিখেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী

 

উচ্চ রক্তচাপ কী?

নলের ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় ভেতরের দেয়ালে যেভাবে পার্শ্বচাপ পড়ে, ঠিক তেমনি রক্তনালির ভেতর দিয়ে রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালির গায়ে পড়া অনুরূপ পার্শ্বচাপই রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার। এই চাপের একটি স্বাভাবিক মাত্রা থাকে, যা ১২০/৮০ মিলিমিটার মারকারির নিচে। যদি এই মাত্রা ১২০/৮০ থেকে ১২৯/৮০ মিমি পর্যন্ত থাকে, তখন তা উচ্চ রক্তচাপের পূর্বাবস্থা বা প্রি-হাইপারটেনশন। আর যদি এ পার্শ্বচাপ সব সময় ১৩০/৮০ মিলিমিটার মারকারি অথবা তার ওপরে থাকে, তখন তাকে হাই ব্লাড প্রেসার, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ বলে। তবে কারো রক্তচাপ একবার মেপেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এক বা দুই সপ্তাহ প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার রক্তচাপ মাপতে হবে।

 

কারণ

♦   ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা। পারিবারিক সূত্র বা বংশগতভাবে পাওয়া এ ধরনের রক্তচাপকে বলে এসেনসিয়াল হাইপারটেনশন।

♦   অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ।

♦   কিডনি, রক্তনালি, রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস ইত্যাদি (৫-১০ শতাংশ)।

♦   অন্তক্ষরা গ্রন্থি বা হরমোনজনিত কারণ।

♦   গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ।

♦   জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, বিষণ্নতারোধক, ব্যথার ওষুধ ইত্যাদি সেবন।

 

লক্ষণ

৫০ শতাংশ মানুষের তেমন শারীরিক সমস্যা হয় না। অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তখন উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। তাই শারীরিক লক্ষণ থাকা ভালো, যাতে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রোগী দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারেন। তা না হলে নীরবে ক্ষতি করে। ৫০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—

♦  ঘাড়ে ব্যথা, ঘাড়ে চাপ অনুভব করা

♦   মাথা ভারী ভারী লাগা

♦   মাথা ঘোরানো বা মাথা ব্যথা

♦   বুকে চাপ চাপ ভাব বা বুকে ব্যথা

♦  বুক ধড়ফড় করা

♦   চোখে ঝাপসা লাগা

♦   ঘুম ব্যাহত হওয়া

♦   খিটমিটে মেজাজ

♦   অল্পতেই ক্লান্ত হওয়া ইত্যাদি।

 

জটিলতা

যেহেতু রক্তনালির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত রক্ত সার্বক্ষণিক নালির ভেতরের গায়ে পার্শ্বচাপ দেয়, তাই তা রক্তনালির ক্ষতিসাধন ঘটিয়ে হার্টে রক্ত চলাচল ব্যাহত ও ক্ষতিসাধন করে। যেমন—

♦   উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক হয়ে মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতা হারাতে পারে বা দেহের অর্ধাংশ অক্ষম বা প্যারালাইসিস হতে পারে।

♦  হৃিপণ্ডের রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়ে মায়োকার্ডিয়াল ইসকেমিয়া, হৃিপণ্ডে ব্লক, এরিথমিয়া ইত্যাদি হতে পারে।

♦   ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রোটিন নির্গত হওয়া।

♦  যৌনকার্যে অক্ষমতা।

♦   পায়ের রক্তনালির সমস্যা, পায়ের মাংসে ব্যথা বা কামড়ানো।

♦   চোখের সমস্যা বা রেটিনোপ্যাথি।

 

নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ সারা জীবনের রোগ, এটা মেনে নিয়েই নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ জন্য কিছু করণীয় হলো—

 

♦   জীবনযাপন পদ্ধতি বা লাইফস্টাইলের পরিবর্তন।

♦   খুব জোরেও নয় আবার খুব আস্তেও নয়, এমনভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মতো হাঁটা। সপ্তাহে পাঁচ দিন এভাবে হাঁটলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৪-৯ মিলিমিটার মারকারি কমানো সম্ভব।

♦   শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখতে যথাসম্ভব কম খাওয়া আর নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। তবে খাওয়া না কমিয়ে শুধু হাঁটলে বা ব্যায়াম করলে ওজন কমবে না। ১০ কেজির মতো ওজন কমালে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৫-২০ মিলিমিটার মারকারি কমানো সম্ভব।

 

♦   চা চামচের এক চামচ লবণের পরিমাণ ছয় গ্রাম। প্রতিদিন মোট লবণের পরিমাণ (তরকারিতে বা পাতে) এই এক চামচের বেশি যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ এড়ানোর জন্য পাতে আলগা লবণ একেবারেই নয়। তরকারিতে যতটা সম্ভব লবণ কম দেওয়ার চেষ্টা করা। এ ছাড়া লবণাক্ত জিনিস যেমন—লবণাক্ত বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ইত্যাদি কম খাওয়া। লবণের ব্যবহার নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে কাঁচা লবণের পরিবর্তে লবণ ভেজে খেলে কোনো সমস্যা হয় না অথবা পাতে অতিরিক্ত লবণ না নিয়ে ওই পরিমাণ লবণ তরকারিতে বাড়িয়ে দিলে কোনো ক্ষতি হয় না। এ ধারণা আসলে সঠিক নয়। কাঁচা হোক বা ভাজা হোক—যেকোনো অবস্থায়ই ছয় গ্রাম বা এক চামচের বেশি যাতে না হয়। এভাবে নিয়ম মানলে সিস্টোলিক প্রেসার ২-৮ মিলিমিটার মারকারি কমানো সম্ভব।

 

♦   ভাত অথবা রুটি, চর্বিজাতীয় খাবার, লাল মাংস (গরু, খাসি ইত্যাদি), ডিমের কুসুম, দুধের সর ইত্যাদি কম গ্রহণ।

♦   শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি খেতে বাধা নেই। এগুলো খেয়ে ৮-১৪ মিলিমিটার মারকারি রক্তচাপ কমানো সম্ভব।

♦   দুশ্চিন্তা বা অতিরিক্ত টেনশন নয়। এর ফলে স্নায়ুতন্ত্রের সিমপ্যাথেটিক সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়ে, এতে রক্তচাপও বাড়ে।

♦   ধূমপান রক্তনালিকে সংকীর্ণ করে, হৃিপণ্ডের গতি বাড়িয়ে দেয়, রক্তে খারাপ চর্বির (এলডিএল) পরিমাণ বাড়ায়, ভালো চর্বির (এইচডিএল) পরিমাণ কমায়, ফলে রোগীর ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। তাই ধূমপান পুরোপুরি বর্জন করুন।

♦   এত কিছুর পরও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। এসব ওষুধের তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR2PgvHandbw9lroWVRmjRpw3ce4ZB15Fsy21fYJNV5o6fwhk-qjltdvQNQ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!