প্রথম সুখবর হলো বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ খুব ধীরে হলেও কমতে শুরু করেছে। এমনকি আমাদের দেশেও করোনা সংক্রমণ সপ্তাহখানেক ধরে কমবেশি ৫০০-এর কাছাকাছি এবং মৃত্যুহারও দিনে গড়ে ৫-৭ এর মধ্যে। যদি এটাই চলতে থাকে, তাহলে আশা করা যায়, এর প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। অবশ্য এ কথা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি। দেখতে হবে আরও সপ্তাহখানেক।
কেন কমের দিকে যাচ্ছে? কারণ, সব দেশই কয়েক মাস ধরে লকডাউন চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য অনেক দেশে এবং আমাদের দেশে তো বটেই, মানুষ কাজে যোগদানের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। কী করবে? খেয়েপরে তো বাঁচতে হবে। তাই লকডাউন কোনো কোনো স্থানে শিথিলভাবে চলছে। এর মধ্যেও সংক্রমণ যে কমের দিকে, সেটা আশার কথা।
অবশ্য অন্যদিকে যাঁরা দিন আনে দিন খান, তাঁদের উপার্জনের একটা পথও চাই। সরকার যে সহায়তা দিচ্ছে, সেটা যথেষ্ট হবে না। আর কৃষির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নীতি কার্যকর করতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই আগামী দিনগুলো আমাদের ভালোর দিকেই যাবে।
একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিককালে বিশ্ব অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে শক্তি ও গতি অর্জন করেছে, তা এক করোনাভাইরাসের জন্য ধসে পড়তে পারে না। আমরা নিশ্চিত যে শিগগিরই এই ভাইরাসকে আমরা পরাজিত করতে পারব। কারণ, ভাইরাসটির সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো, এটা বাতাসে বা পানিতে ছড়ায় না, শুধু ছোঁয়াছুঁয়ি আর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। এর সব কৌশলই আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। শুধু চাই জনসচেতনতা। এটা খুব কঠিন কিছু নয়।
কার্যকর ওষুধ
এটা হলো দ্বিতীয় সুখবর। বলা যায়, এই ভাইরাসের চিকিৎসার ওষুধ এখন প্রায় হাতের নাগালে। আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শিকাগোতো পরীক্ষিত ওষুধ রেমডেসিভির ব্যবহারের কথা বলেছে। যদিও এর সুফল এখনো খুব বেশি হারে পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও এটা রোগীদের ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে এটা করোনাভাইরাসের জন্য একটি কার্যকর ওষুধ । তা–ও এটা এখনো পর্যবেক্ষণের পর্যায়ে রয়েছে। এ ধরনের আরও কিছু ওষুধ আবিষ্কারের কথা আমরা শুনছি। কিন্তু গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা হবে, তারপরই বাজারে আসবে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
করোনাভাইরাসের টিকা
এটা হলো তৃতীয় সুখবর। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের যে পরীক্ষা কয়েক দিন আগে শুরু হয়েছে, তার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বলে উৎসাহিত হওয়ার মতো খবর আমরা পাচ্ছি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য রিজিয়াস প্রফেসর অব মেডিসিন স্যার জন বেল বিবিসি রেডিও ফোরের ‘টু ডে’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, জুনের মাঝামাঝি মানুষের ওপর এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগের ফলাফল আমরা জানতে পারব (https://www.independent.co.uk/news/health/coronavirus-vaccine-oxford-trial-drug-treatment-astrazeneca-a9491556.html)। সাধারণত টিকা আবিষ্কারে দেড়-দুই বছর সময় লাগে। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব এত সময় দিতে রাজি নয়। ‘নেচার’ পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত একটি গ্রাফিক্যাল গাইড বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীদের অন্তত ছয়টি দল পরীক্ষামূলকভাবে স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের টিকা পরীক্ষা করে দেখছে। এর অর্থ হলো, টিকা আবিষ্কারও খুব বেশি দূরে নয়। যদি দ্রুততম সময়ে টিকা আবিষ্কার সম্ভব হয়।
দরকার সূর্যের আলো
সূর্যের আলো যে কত দরকার, সে কথা আমরা আগেও বলেছি। কারণ, এটা শুধু শরীরে ভিটামিন ডি উজ্জীবিত করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, তা-ই নয়, এটা সরাসরি করোনাভাইরাসকে কাবু করে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর (২৮ এপ্রিল ২০২০) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট রে) করোনাভাইরাসকে দুর্বল করে দেয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আমরা এই সুবিধাটা সহজে পাই। অবশ্য মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত আলট্রাভায়োলেট রে ত্বকের ক্ষতি করে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
আমরা আশাবাদী হতে চাই। হয়তো দ্রুতই অন্তত চলনসই একটা অবস্থায় যেতে পারব।