class="post-template-default single single-post postid-51698 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ডায়াবেটিসের জন্য ভালো ব্যায়াম, জুতা ও ইয়োগা

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ব্যায়াম করাটা ওষুধের চেয়েও অনেক উপকারী। এতে বেশ ভালোভাবেই গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিসের জন্য ভালো ব্যায়াম কোনটি তা আগে জেনে নিতে হবে।

  • ব্যায়ামে শক্তি খরচ হয়, যাতে ওজন কমে। এতে প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে ইনসুলিন তৈরি বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ায় ব্যায়াম। ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয়, তাতেই গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ব্যায়ামের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
  • ব্যায়াম করলে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে এবং খারাপটা (LDL) কমে। উচ্চ রক্তচাপ কমে। দুশ্চিন্তা দূর করে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে ব্যায়াম। ঘুমও ভালো হয়।
  • এটি হাড় ও হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী করে। হাড়ের জোড়াগুলো সচল রাখে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

ডায়াবেটিসের জন্য ভালো ব্যায়াম

অ্যারোবিক ব্যায়াম : হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, বাইসাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা অ্যারোবিক ব্যায়াম। এগুলোতে অনেক মাংসপেশি অনেকক্ষণ সচল থাকে। শক্তি ক্ষয় হয় বেশি। এ ব্যায়ামে নাড়ির গতি, শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ে।

স্ট্রেনদেনিং ব্যায়াম : মাংসপেশির শক্তি বাড়ায় এ ব্যায়াম। ওজন তোলা বা স্প্রিং টানা এ ধরনের ব্যায়াম। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ব্যায়াম শুরু করা যাবে না।

স্ট্রেচিং : মাংসপেশি এবং হাড়ের জোড়ার জড়তা কাটিয়ে সচল করাই হলো এ ব্যায়ামের উদ্দেশ্য। অ্যারোবিক ব্যায়াম শুরুর আগে স্ট্রেচিং করা উচিত।

ব্যালান্সিং ব্যায়াম : ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যায়াম এটি। যেমন, এক পায়ের ওপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এ ধরনের ব্যায়াম রোগীর ভারসাম্য বাড়ায়।

সপ্তাহে কয়দিন ও কতক্ষণ

  • সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন এবং দিনে ৩০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে। একনাগাড়ে ৩০ মিনিট ব্যায়াম না করতে পারলে ১০ মিনিট করে দিনে তিনবার ব্যায়াম করলেও হবে। প্রতিদিন তিনবার খাওয়ার আগে ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করা যেতে পারে।
  • ব্যায়াম শুরু করতে কোনো সমস্যা নেই, তবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কোনো জটিলতা আছে কিনা তার জন্য ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো।
  • ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়বে। প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে বাড়িয়ে সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ মিনিট হবে।
  • ব্যায়ামের শুরুতে ওয়ার্মআপ ও স্ট্রেচিং করে নিতে হবে। হুট করে না থামিয়ে শেষ পাঁচ মিনিট আস্তে আস্তে কমিয়ে ব্যায়াম করা থামাবেন।

কখন ব্যায়াম করবেন না

  • এটা নির্ভর করবে আপনার দৈনন্দিন কাজ, খাবারের সময়, কখন কী ওষুধ খাচ্ছেন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ইত্যাদির ওপর।
  • রক্তে খাওয়ার পর গ্লুকোজের মাত্রা ৩০০ মিলি গ্রাম বা খালি পেটে ২৫০ মিলি গ্রামের ওপর থাকলে ব্যায়াম করবেন না। খাওয়ার পরপরই ব্যায়াম করবেন না।
  • রোদের মধ্যে ব্যায়াম করবেন না। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শরীর থেকে পানি বেরিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ভোরে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা উত্তম।
  • জোরে হাঁটা উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। তবে হাঁটুতে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিস থাকে বা নার্ভের ক্ষতির কারণে পায়ে অনুভূতি কম থাকলে এটা করা যাবে না।
  • আরামদায়ক জুতো ও সুতির মোজা ব্যবহার করবেন। হাঁটার পর যদি ফোসকা, ব্যথা বা পা লাল হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

ব্যায়ামের কারণে ডায়াবেটিস রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি

  • আপনি যদি ইনসুলিন নেন এবং সালফোনিউরিয়া বা মেগ্লিটিনাইড ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তবে ব্যায়ামের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিপজ্জনক হারে কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এর লক্ষণ হলো—মাথা ঘোরা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধা লাগা, দুর্বল লাগা, ঘাম হওয়া ইত্যাদি।
  • বায়াম শুরু করার আগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নেবেন। ১০০ মিলিগ্রামের নিচে হলে কিছু খেয়ে নেবেন।
  • যদি ইনসুলিন নেন তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। ব্যায়াম করার সময় পকেটে গ্লুকোজ, চিনি বা মিষ্টি ফলের রস রাখবেন। খারাপ লাগা শুরু হলেই খেয়ে নেবেন।
  • যদি অনেকক্ষণ ব্যায়াম করতে হয় তবে ব্যায়াম শেষ করার আগেও কিছু খেয়ে নিতে পারেন। ব্যায়াম শুরুর আগে, ব্যায়াম করার সময় বা পরে পানি খাবেন।
  • ব্যায়ামের শেষে আবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। কী পরিমাণ ব্যায়াম কতটুকু গ্লুকোজ কমায়, সেই ধারণা পাবেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন জুতা ভালো?

  • প্রথমে, একটি নরম ফোকর আছে এমন জুতা নিন। ফ্ল্যাট সোল, ফ্লিপ-ফ্লপ এবং হাই হিল জুতা এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো পায়ের চাপ বণ্টন করতে দেয় না। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনার জুতো সাবধানে বাছাই করা উচিত। পায়ে যাতে কিছুতেই ফোস্কা না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো প্রকার অস্বস্তি টের পেলে সেই জুতা পরা যাবে না।
  • চওড়া এবং গভীর পায়ের বাক্স সহ জুতাগুলি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। কারণ তারা ঘর্ষণ এবং ঘষা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। জুতার মধ্যে আপনার পা কীভাবে অবস্থান করছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। জুতা পরতে বা খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।
  • নরম ইনসোলসহ চামড়া, ক্যানভাস বা সোয়েড দিয়ে তৈরি জুতা নিন। এতে পর্যাপ্ত বায়ু সঞ্চালন হবে। Velcro স্ট্র্যাপযুক্ত জুতা নিতে পারে। এটি সহজেই ফিট করা যায়।
  • এমন জুতা পরুন যা আপনার পাকে চেপে ধরবে না। গোড়ালির দিকে ঘষা লাগলে তেল বা লুব্রিকেন্ট ব্যবহার না করে জুতাই বদলে ফেলুন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন জুতা বিপদজনক?

স্যান্ডেল, ফ্লিপ-ফ্লপ বা অন্যান্য খোলা পায়ের জুতা থেকে দূরে থাকুন। স্ট্র্যাপগুলি আপনার পায়ের কিছু অংশে চাপ দিতে পারে, যার ফলে ঘা এবং ফোস্কা হতে পারে। খোলা পায়ের জুতা আপনাকে আঘাত প্রবণ করে তুলতে পারে। নুড়ি এবং ছোট পাথরের জন্য তখন জুতার ভিতরে প্রবেশ করাও সহজ। এগুলি আপনার পায়ে ঘষা খেতে পারে। যা থকে ঘা এবং ফোস্কা হতে পারে। আর ডায়াবেটিক রোগীর পায়ে ঘা মানেই মারাত্মক বিপদের।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু ইয়োগা

যোগব্যায়াম আপনার শরীরকে মনের মধ্যে শিথিল করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে পারে – বিশেষ করে যদি আপনি ডায়াবেটিস নিয়ে থাকেন। কিছু ভঙ্গি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং সঞ্চালনকেও উন্নত করতে পারে।

পা দেয়ালের সঙ্গে খাড়া ভাবে রাখুন

  • বসার জন্য একটি কম্বল বা তোয়ালে ভাঁজ করুন।
  • আপনার ডান পাশে একটি দেয়ালের বিপরীতে বসুন।
  • আপনি যখন আপনার পিঠে সমতল শুয়ে থাকতে যান তখন আপনার পা দেয়াল বরাবর সুইং করুন।
  • আপনার শরীরের দেয়ালের বিপরীতে একটি 90-ডিগ্রি কোণ তৈরি করা উচিত।
  • আপনার বসার হাড় যতটা সম্ভব দেয়ালের কাছাকাছি রাখুন।
  • আপনার ঘাড়, চিবুক এবং গলা শিথিল করুন।
  • আপনার হাতের তালু উপরের দিকে রেখে পাশের দিকে প্রসারিত করুন।
  • এই ভঙ্গিতে 5 থেকে 15 মিনিটের জন্য থাকুন।
  • ধীরে ধীরে আপনার পা নিচের দিকে স্লাইড করে ছেড়ে দিন।

বলাসন : ডায়াবেটিসের জন্য ভালো ব্যায়াম

  • বসার সময়, পায়ের তলগুলি একসাথে আনুন। আপনার হাঁটু পাশ থেকে বাইরে থাকা উচিত.
  • আপনি সমর্থনের জন্য আপনার হাঁটুর নীচে একটি কোলবালিশ রাখতে পারেন।
  • আপনার পিঠ মেঝেতে সমতল না হওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে পিছনে ঝুঁকুন।
  • নিতম্বের চারপাশের অঞ্চলটি শিথিল করুন।
  • হাত আপনার শরীরের পাশাপাশি হাতের তালু উপরের দিকে রেখে বিশ্রাম দিন।
  • পা এবং নিতম্বের প্রসারিত অংশকে আলতো করে গভীর করতে উরুতে চাপ দিতে পারেন।
  • 10 মিনিট পর্যন্ত এই ভঙ্গিতে থাকুন।
  • ছেড়ে দেওয়ার জন্য, আপনার হাঁটু একসাথে তুলতে এবং চাপতে আপনার হাত ব্যবহার করুন। ধীরে ধীরে উঠে বসুন।
ডায়াবেটিস ইয়োগা বলাসন

পশ্চিমোত্তনাসন

  • চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
  • দু’ হাত মাথার দু’ পাশে ওপরে রাখুন। ধীরে ধীরে বসে ঝুঁকে দু’ হাত দিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন।
  • পায়ের মাঝখানে কপাল ঠেকান এবং বুক ও পেট ঊরুতে লাগান
  • হাঁটু ভাঁজ হবে না।
  • এ অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে ১০ থেকে ক্রমশ ৩০ গুনুন।

ডায়াবেটিসের জন্য ভালো ব্যায়াম : সর্বাঙ্গাসন

  • চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন।
  • পা জোড়া থাকবে এবং আঙুলগুলো উপর দিকে থাকবে।
  • হাত দুটো পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন। হাতের উপর ভর দিয়ে পা দু’টো জোড়া ও সোজা অবস্থায় উপরে তুলুন।
  • দুই হাত কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে কোমরের দুই পাশে ধরুন
  • কনুইয়ের উপরে জোর দিয়ে কোমর ও পা সোজা অবস্থায় উপরে তুলে নিয়ে আসুন।
  • পায়ের বুড়ো আঙুল ঠিক মাথা বরাবর উপরে থাকবে
  • কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত দেহটি ঠিক ৯০ ডিগ্রীতে থাকবে।
  • কনুইয়ের উপর জোর রেখে হাত দিয়ে দেহটি উপর দিকে ঠেলে রাখুন।
  • চিবুকটি বুক ও কণ্ঠনালীর সংযোগস্থলে লেগে থাকবে।
  • কনুই থেকে হাতের উপরাংশ, কাঁধ, ঘাড় ও মাথার পেছনদিক মাটিতে থাকবে।
  • ২০-৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকুন।
  • কনুইয়ের উপর জোর রেখে ধীরে ধীরে পা নামান এবং শবাসনে বিশ্রাম নিন।
  • আসনটি প্রথম প্রথম ২/৩ বার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!