Saturday, April 20
Shadow

প্রেমের গল্প : তোমার অসীমে

ধ্রুব নীলের প্রেমের গল্প : তোমার অসীমে

ধ্রুব নীলের প্রেমের গল্প তোমার অসীমে

রান্নাঘরে খুটখাট শব্দ। শব্দটা সাংসারিক। রবিউলের ঘুম কাটেনি। রাতে নিশ্চিত দরজা খোলা রেখেছিল। সাতসকালে আধা পরিচিত কেউ এসে হাজির। কে আসবে? রবিউলের তো পরিচিত কেই।
খুটখাটের ধরন শুনে বোঝা যাচ্ছে কেউ খুব গোছালোভাবে কিছু রান্না করছে। সকালের নাস্তার সঙ্গে দুপুরের জন্য অ্যাডভান্স সবজি কাটাকুটি করলে যেমন হয়। উঠে বসে ভাবল রবিউল, চোর তো আসবে না। একটা আধা-নষ্ট টিভি আর একটা ছোট ফ্রিজ ছাড়া এই ঘুপচি ফ্ল্যাটে কিছু নেই।
রান্নাঘরে উঁকি দিতেই রবিউল বুঝতে পারলো ডাক্তার দেখাতেই হবে। কারণ কোমরে টকটকে লাল শাড়ি গুঁজে শকুন্তলা টাইপের এক মায়াবতী রুটি বেলছে। চুলায় ভাজির গন্ধটাও স্পষ্ট। মাথা খারাপ হলে নাকেও সেটার প্রভাব পড়ে? ভাজিতে কালোজিরার গন্ধটা একদম পরিষ্কার।
‘দাঁড়িয়ে না থেকে বাজারে যাও।’
‘জি।’
‘জি জি মানে? আগে সবজি কিছু নিয়ে আসো। ফ্রিজে চিংড়ি ছাড়া কিছু নাই। এসে নাস্তা করো। ততক্ষণে ভাজি আর চা হয়ে যাবে।’
‘জি আচ্ছা।’
নিজের মাথা খারাপের বিষয়টা নিজেই ধরতে পেরেছে। সুতরাং চিকিৎসা নিয়ে আপাতত টেনশন নেই রবিউলের। ভাবল, ‘ঘটনা কী? একা একা থাকলে এমন হয় নাকি?’
রবিউল ঘোরতর একা। তিন কূল কেন, তেত্রিশ কূলেও আত্মীয়-স্বজন নেই। জীবনে প্রেমটেমের ধারেকাছেও ছিল না। বায়িং হাউসে একটা চাকরি জুটিয়ে ভালোই চলছে তার। মা-বাবা মারা গেছে অনেক আগে। বড় এক বোন থাকে বিদেশে। কালেভদ্রে কথা হয়। নিজে নিজে বিয়ে করা তার পক্ষে এভারেস্ট জয়ের চেয়েও কঠিন।
‘এখনও বসে আছো!’
‘ফ্রিজের নিচের ড্রয়ারে লাল শাক আছে।’ কল্পনার মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা চলুক। চিকিৎসা পরে করলেও চলবে।
‘আলসের ধাড়ি কোথাকার!’
‘আপনি কে?’
জবাব দিল না প্রায় অপ্সরীর মতো মেয়েটা। অন্তত রবিউলের কাছে তো অপ্সরীই। লাল রঙের পাটভাঙা শাড়ি। খোঁপা করা চুলে নকশা করা কাঁটা। আজকাল এমন কেউ সাজে?
‘চা একটু কড়া করে ফেলেছি। খেতে পারবে তো?’
‘হুম। কিন্তু আপনার পরিচয়? বাসায় ঢুকলেন কী করে?’
‘বাজে কথা বলো না। দরজা লক করে ঘুমাও না কেন? খবরদার এ কাজ আর করবে না!’
‘দরজা খোলা থাকলেই ঢুকে পড়তে হবে?’
মেয়েটা এ জাতীয় প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে। এর মানে সে রবিউলকে বিভ্রান্ত করতে চায়। চট করে মাথায় একটা বিষয় খেলে গেলো। আজকাল আবার বিচিত্র সব ভিডিও বের হয়। কেউ আড়াল থেকে রবিউলকে বোকা বানাচ্ছে না তো? একটু পর একপাল ছেলে-মেয়ে হামলে পড়ে বলবে, ভাই কিছু মনে করবেন না, আপনার সঙ্গে একটু প্র্যাঙ্ক করলাম।
‘টেবিলে নাস্তা। নাকি বিছানার ওপর বসে বসে খাবে!’
‘টেবিলেই থাক। আপনি খাবেন না?’
‘তুমি তো মদ টদ খাও না। বিয়ে করা বউকে আপনি আপনি করছো যে! পার পাবে না বুঝলে!’
‘আপনাকে চিনতে পারছি না।’
কথাটা বলতে সংকোচ হলো রবিউলের। মেয়েটা কষ্ট পেলো না তো? পেয়েছে মনে হচ্ছে। ঝিম মেরে বসে রইল ডাইনিং টেবিলের পাশে রাখা চেয়ারটায়।
‘স্যরি, ইয়ে মানে।’
‘না, স্যরি বলবে কেন। স্যরি তো আমি বলবো। তোমার সংসারে বিনা দাওয়াতে মেহমানের মতো ঢুকে পড়েছি। এখন বিদেয় করতে পারছো না।’
এ কী! মেয়েটা কাঁদছে নাকি? রবিউল কয়েকবার চিমটি কেটে স্বপ্ন-পরীক্ষা চালাল। কাজ হলো না। একবার মনে হলো, স্বপ্নে চিমটি কাটলেও মনে হয় মানুষ ব্যথা পায়।
একা থাকতে থাকতে রবিউলের মস্তিষ্ক নিজের মতো করে মায়াবতী এক সঙ্গী তৈরি করেছে? বিষয়টা মন্দ না।
‘তুমি চা খাবে?’ কল্পনার মেয়েকে তুমি করেও বলা যায়।
কিন্তু অভিমানে জমে আছে মেয়েটা। রবিউলের ইচ্ছে হলো মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সে চায় মেয়েটা তার দিয়ে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিক। কাপ ধরার সময় একটু আঙুলের ছোঁয়া পাওয়া যাবে।
টলটলা চোখে মেয়েটা তাকালো। ‘আমি খাওয়ার জন্য তো বানাইনি। তোমার জন্য বানিয়েছি। তুমি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
‘আমি কি পাগল হয়ে গেছি।’
‘বাজে কথা বললে…।’
রবিউল রুটি ছিঁড়ে মুখে দিলো সাবধানে।
‘এমনভাবে খাচ্ছো যেন বিষ দিয়েছি। আমি তো একটা ডাইনি!’
রবিউল ভাবছে, জিন-পরী টাইপ কিছু না তো। হলে হোক। পরীর হাতের ভাজি অমৃতসম।
‘চায়ের কাপটা একটু এগিয়ে দেবে?’
‘কেন আমার হাত ধরার শখ হয়েছে?’
রবিউল শতভাগ নিশ্চিত বিষয়টা তার কল্পনা। তা না হলে এটা জানার কথা নয় মেয়েটার।
‘সরাসরি ধরলেই তো পারো।’
এই বলে খপ করে রবিউলের হাত ধরল মেয়েটা। রবিউলের মনে হলো এ মেয়ে নির্ঘাৎ তার বউ। কোনো কারণে তার স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে।
কলিং বেল বাজতেই হাত ছেড়ে দিলো মেয়েটা। কেমন সন্ত্রস্ত দেখালো। সে চায় না রবিউল দরজা খুলুক।
দরজা খুলতেই এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।
‘ইয়ে, ইরাবতী কি এখানে? আমার মেয়ে। মাথায় সমস্যা। হুটহাট অন্য বাসায় চলে আসে।’
‘জি আছে। আসুন।’
এরপর ইরাবতীর বাবার সঙ্গে টুকটাক অর্থহীন কথা হয় রবিউলের। ইরাবতী চুপটি করে চেয়ারেই বসে আছে। ভদ্রলোক জানালেন, ইরাবতী মাঝে মাঝে যখন স্বাভাবিক যখন থাকে, তখন তাকে আটকে রাখতে হয় না। এমনিতে একজন বডিগার্ড আছে তার। আজ ওই গার্ডকে ফাঁকি দিয়ে রবিউলদের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ে। আশপাশের চারটা বিল্ডিং চেক করার পর রবিউলের ফ্ল্যাটের খোঁজ মেলে। রাস্তায় গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন ইরাবতীর বাবা। গার্ডের ফোন পেয়ে নিজেই উপরে আসেন।
বাবার হাত ধরে ইরাবতীয় চলে যাচ্ছে। রবিউলের দিকে তাকাচ্ছেও না। আগের সেই চঞ্চলতাও নেই। কেমন যেন ক্লান্ত। রবিউলের জানতে ইচ্ছে হলো, এই কোটি কোটি মানুষের শহরে ইরাবতী কি ভুল করে তার বাসায় আবার আসবে?

প্রেমের গল্প : মালতী

অতিপ্রাকৃতিক গল্প : খোলস | লেখক : ধ্রুব নীল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!