সৈয়দ আখতারুজ্জামান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
ব্রিজ ইনস্টিটিউট অব ট্রেনিং
অ্যান্ড কনসালট্যান্সি
সব অফিস এক রকম নয়। অনেক অফিসে কাজের পরিবেশ, বিশেষ করে নারীকর্মীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিস্থিতি আরো সহায়ক হয়ে উঠছে।
পাশাপাশি এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে নারীকর্মীদের নিরাপত্তা আরো জোরদার করার সুযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কাজের সংস্কৃতি আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা এই নিরাপত্তা ব্যূহ তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।
এই নিরাপত্তা বলতে যেকোনো ধরনের নিরাপত্তাকেই বোঝানো হচ্ছে। চাকরির নিরাপত্তা, যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নের নিরাপত্তা, মর্যাদাপ্রাপ্তির নিরাপত্তা, সমান পরিশ্রম ও মেধা ব্যয় করে সমান বেতন-ভাতা প্রাপ্তির নিরাপত্তা; সঙ্গে শারীরিক আর মানসিক নিরাপত্তা তো আছেই। হয়রানির রকম আর প্রভেদের তো শেষ নেই। রইল কিছু পরামর্শ :
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করণীয়
এক.
নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন কোনো সুযোগই তৈরি হতে দেবেন না। প্রতিরোধের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। বাকিটা পরিবেশ বুঝে সামলাতে হবে। তবে মনে রাখবেন, একবার সুযোগের দরজা খুলে ফেললে এই দরজা বন্ধ করা কঠিন।
যদি কোনো পরিস্থিতিতে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ বা সম্মতি থেকে থাকে, অবশ্যই তাকে অফিস থেকে দূরে রাখবেন।
দুই.
আপনার সব সহকর্মী, কাজ ও দৃষ্টির আদান-প্রদান হয় এমন সব সহকর্মী, তাতে সে পুরুষ বা নারী যে-ই হন না কেন, তাঁকে বুঝুন ও বোঝার চেষ্টা করুন। কাকে নিরাপদ মনে হয় না তাঁকে চিহ্নিত করুন। তাঁদের সঙ্গে যেকোনো রকম কাজ, কথাবার্তা, আচার-আচরণে সংযত রাখুন। নিজের নিরাপত্তা বৃত্ত থেকে বের হবেন না। মাপা কথা, মাপা কাজ। যেটুকু সৌজন্যপ্রদ, সে পর্যন্তই।
তিন.
যাঁদের সঙ্গে সব সময় কাজ করছেন, আলাপ-আলোচনায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন, একসঙ্গে লাঞ্চ করছেন বা অফিস থেকে বাসায় একসঙ্গে যাচ্ছেনÑসমস্যাটা তাঁদের দিক থেকেও আসতে পারে। সুতরাং নিজের নিরাপত্তা বৃত্ত সর্বত্রই সুরক্ষিত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
চার.
অফিসের ভেতর আপনার বসার জায়গা এবং অফিসের দায়িত্ব পালনে আপনার চলাচলের পথ ও স্থান নিরাপদ হওয়া দরকার। বিশেষ জরুরি কাজে ছুটির দিনে, অফিস আওয়ার শেষে এবং অফিসের বাইরের কাজ করার ক্ষেত্রগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পাঁচ.
কাজের বাইরের আলোচনা কারো সঙ্গেই দীর্ঘ করবেন না। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আলোচনা বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে, যাঁরা আপনার কার্যক্রম, অবস্থান ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেন।
ছয়.
আপনার পোশাক, আচার-আচরণ, চলাচল এমনভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন না, যা আপনার নিরাপত্তা দুর্বল করতে পারে।
সাত.
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিবাদী হবেন, না কৌশলী হবেন সে সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বুঝে নিন। সর্বত্রই প্রতিবাদী হবেন না, কৌশলী হবেন না।
আট.
এমনও জটিল পরিস্থিতি ও জটিল জালে আটকা পড়তে পারেন, যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই মুশকিল। বিষয়টি হয়তো এমন পর্যায়ে যখন অভিযোগ করার আর কোনো স্থান বা সুযোগ নেই। বিষয়টি অফিসের বলয় ছাড়িয়ে গেছে আর এটা যখন আবিষ্কার করলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র বহুমাত্রিক কৌশলই আপনাকে বাঁচাতে পারে।
নয়.
আপনার ব্যক্তিত্বই আপনার প্রধান রক্ষক। চৌকস পেশাদার ও দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকবেন। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে সাফল্যের বিপরীতে পরিশ্রম আর বুদ্ধি ছাড়া শর্টকাট কোনো পথ নেই, যা স্থায়ী আসন দিতে পারে। আজকে যাকে নিরাপদ মনে করছেন তিনিই সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন, একইভাবে উল্টোটাও সত্যি। ফলে কোনো কিছুই শেষকথা নয়।
সহকর্মীদের করণীয়
এক. অফিসের পরিবেশ নারীকর্মীদের জন্য নিরাপদ করতে সহযোগিতা করুন।
দুই. এমন যদি কিছু নজরে আসে, যা অফিসের পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানান। মনে রাখবেন বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, ফলে কৌশলী হোন।
তিন. কোনো পছন্দ থাকলে এমনভাবে সামাল দিন, যাতে অফিসের রীতিনীতি কোনোটারই বিরুদ্ধাচরণ না হয়, যাতে অফিসের কোনোভাবেই নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। বিষয়টি খুবই জটিল এক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধক্ষেত্র। আপনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন ও সতর্ক থাকতে হবে।
চার. আপনার পেশাদারির বৃত্ত অতিক্রম করবেন না।
অফিসের করণীয়
এক. নারীকর্মীদের নিরাপত্তায় কঠোর নীতিমালা তৈরি করুন ও বাস্তবায়ন করুন।
দুই. নারীকর্র্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পর্কে অফিসের সব কর্মকর্তাকে সচেতন ও সতর্ক রাখুন।
তিন. কোনো অভিযোগ থাকলে তা উত্থাপন করতে উৎসাহিত করুন। যাতে তাঁরা নিরাপদে যেকোনো অভিযোগ করতে পারেন, তার জন্য যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখুন।
চার. অফিসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ব্যক্তিটি যদি সঠিক, অটল আর সচেতন থাকেন, তাহলে ভালো। বলা উচিত, এর চেয়ে ভালো আর কিছু নেই।