class="post-template-default single single-post postid-21611 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস ‘কৃ’ পর্ব-৮

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস ‘কৃ’ পর্ব-৮

ধ্রুব নীল

পুরো বইটির হার্ড কপি পেতে এখানে ইনবক্স করুন। 

কিছুদিন পর। তুলির শেষ আঁচড়ের পরও মনে হলো কৃর চোখের সেই বিদ্যুৎ ঝলকানির রিফ্লেকশনটা ঠিকমতো আসেনি। তবে বেদনাভরা ভালোবাসায় কাতর চোখগুলো স্পষ্ট।
‘কে এই মেয়ে? কখনো দেখেছি বলে তো মনে হয় না। বৃষ্টি বাদলার মধ্যে বিয়ের শাড়ি পরা, তাও আবার গ্রামের রাস্তা। কোনো কিছুই তো মিলছে না।’
‘মিলামিলির দরকার কী। ও হচ্ছে কৃ। ওর সঙ্গে কিছুই মিলবে না।’
‘কী নাম? কিরিমিরি?’
‘যা খুশি বলো।’
‘ওহ। তা হলে প্রেমিকা জুটিয়ে ফেলেছো?’
‘হুম। এ প্রেমিকা উড়তে জানে।’
‘উড়বেই তো, অল্পবয়সী মনে হচ্ছে। পাখা তো গজাবেই।’
নির্লিপ্ততা নিয়ে চলে গেল রেশমা। তার ফিরে আসার গল্প আপাতত তোলা থাক। আমি ডুবে আছি কৃর সঙ্গে কাটানো শেষের দিনগুলো নিয়ে।
গত সাত দিন ধরে দেখা নাই। কোথায় গেছে জানি না। হুট করে আবার গায়েব। তবে আমি নিশ্চিত আবার কোনো না কোনো উদ্ভট জায়গায় তার সঙ্গে আমার দেখা হবে।

তারপর? ওই রাতের পর কী ঘটেছে? আমাকে নিয়ে আর উড়তে পারেনি কৃ। অনেক রক্তক্ষরণের কারণে আমারও চোখে ঘুম জেঁকে আসছিল খুব। ভোর পর্যন্ত দুজন কাকভেজা হয়ে বসেছিলাম একটা টং দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে। আমার জ্বর এসেছিল এটুকু মনে আছে।
ভুলে যাওয়ার মতো যদিও যথেষ্ট সময় পার হয়নি তবুও আমার স্মৃতিটা ঝাপসা। কৃর কোলে মাথা রেখে একসময় ঘুমিয়েই পড়ি। পরে মাঝে একবার আবিষ্কার করলাম আমি দুলছি। এর মধ্যে সম্ভবত স্বপ্নেই হবে, আমরা উড়ছিলাম। আকাশ-মাঠ পেরিয়ে আমার বাসায় এসে পড়েছিলাম। পরেই আবার দেখলাম একটা অচেনা বাস স্টেশন। কৃ আমার ব্যান্ডেজ বদলে দিলো। কী যেন একটা লাগাল, প্রচণ্ড জ্বালা করেছিল। আমাকে ধরে ধরে একটা টয়লেটেও নিয়ে গেল একবার। তারপর পানি খাওয়ালো অনেক। একটা মিষ্টি ফলও খেলাম। এর মাঝে আবার কাকে যেন বলতে শুনলাম, হাসপাতালে নিয়ে যান আপা।
হাসপাতালেও গিয়েছিলাম সম্ভবত। নাকি ক্লিনিক ছিল ওটা। মোটকথা ওই ঘটনার পর দিন কৃ আমাকে নিয়ে দারুণ ঝামেলায় পড়েছিল। একবার ভাবলাম ওকে বলি, আমার এক বড় খালা আছে শ্যামলীতে। তার বাড়ি নিয়ে চলো। কিন্তু রেশমার জায়গায় কৃকে দেখলে ঝামেলা আরো বাড়তো।

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস ‘কৃ’ পর্ব-৮

পরদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে। অ্যাডভেঞ্চার হয়েছিল খুব। ওই ওঝা বেঁচে গিয়েছিল। পরদিনই মামলা করতে গিয়েছিল আমার নামে। আমার ছবি ছিল তার কাছে। কারণ ওই রাতের অনুষ্ঠানে কিশোর কিশোরীরা অনেক ছবি তুলেছিল। সাক্ষীর অভাব ছিল না। কিন্তু পুলিশ নিশ্চয়ই বেশ বিভ্রান্তিতে পড়েছিল। একটা অচেনা মানুষের বিয়ের আয়োজন কেনই বা করেছিল ওরা, কেনইবা সেখানে আচমকা একদল মানুষ এসে বলল, তারা আমাদের উড়তে উড়তে নামতে দেখেছে। ওই পেটমোটা ওঝাই বা কী করতে গেল ওই বাড়িতে। এসব হিসেব মেলাতে গিয়ে মামলাটা শেষপর্যন্ত হলো না।
যাই হোক, এ সবে আমি পাত্তা দিলাম না। হোক মামলা। ধরা পড়ার ভয়ে ভয়ে থাকি। অন্তত আরেকটা উত্তেজনা থাকুক এ জীবনে।
খবরটা যখন কৃকে জানালাম, তার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। তার অপরাধবোধের মাত্রা মানুষের তুলনায় একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি। আমি হাই তুলতে তুলতে বলেছিলাম, চলো আমরা উড়ে উড়ে নরওয়ে চলে যাই। ভিসা টিসা তো লাগবে না। দেশটা আমাকে খুব টানে। বছরের ছয় মাস সন্ধ্যার বিষণ্নতা। কৃ জবাব দেয়নি। সে কি তার ওড়ার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে? সে কি আগের মতো আমার মন পড়তে পারছে না? না পড়তে জানলে মহাবিপদ। আমি যে কী পরিমাণ তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি এটা ওকে জানাতে না পারলে আমার খাবার হজম হবে না।

ওই ঘটনার পরের দিন বা তারও পরের দিন আমরা ট্রেনে করে সিলেট গিয়েছিলাম। সেখানে একটা হোটেলে উঠেছিলাম। রাতে একসঙ্গে ঘুমিয়েছি। কৃর সঙ্গে সাধারণভাবে রাত কাটানো সেবারই প্রথম। কারণ এর আগের মদিরা রেস্তরাঁর আন্ডারগ্রাউন্ড বারের আলো-আঁধারির ঘরটার স্মৃতি আমার মাথায় নেই। কৃর থাকতে পারে। তার ভেতর বাড়তি উত্তেজনা দেখা গেল না ওই রাতে। তবে আমার হাত কাঁপছিল খুব। শারীরিক কোনো টান অনুভব করিনি। বসে বসে হাত ধরে গুটুরগুটুর আলাপ করবো এমনটাও হয়নি। মিলেমিশে একাকার হওয়ার মতো অনুভূতি ছেঁকে ধরেছিল আমাদের। কৃ আমাকে বার বার পেঁচিয়ে ধরেছিল শিকার ধরার মতো। আর আমার মনে হচ্ছিল তার শিকার হতে পারাটাই যেন ওই রাতে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। রাতটা ঠিক রাত ছিল না। যেন মহাকালের এক বিশাল অপেক্ষা। সেদিনের গ্রহ নক্ষত্রেরা যেন এ রাতেরই অপেক্ষায় ছিল। আমাদের মিলন যে অপেক্ষার অবসান ঘটাল।

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস ‘কৃ’ পর্ব-৮

পরের সারাদিন কেটেছে রাতারগুলে। ছইওয়ালা নৌকা ভাড়া নিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে বসে একদিকে ঘন সবুজ আর নিরিবিলি রাতারগুল, অন্যদিকে লাল শাড়ি পরা কৃ। আগের রাতের পর থেকে আমার সঙ্গে হুঁ হাঁ ছাড়া কথাই বলেনি।
‘তোমার অন্য কৃরা কোথায়?’
‘ওরা খুঁজে পাবে না।’
‘কেন!’
‘আমি মনে হয় মানুষ হয়ে যাচ্ছি। ওরা মানুষদের দেখতে পারে না।’
‘মাই গড! মানুষ হলে তো মহাবিপদ। দুদিন পর আমার কাজেকর্মে বিরক্ত হয়ে যাবে। তিন দিন না যেতে বিয়ে করতে বলবে, এরপর…।’
‘এরপর আমি চলে যাব।’
‘যাবে কোথায় তুমি। তুমি তো এখন কৃ না। তোমার ক্ষমতাও নেই। একা মানুষ মানেই মহা মুশকিল। থাকবে কোথায়!’
‘তুমি আছো কী করতে!’
‘আমি কেন আছি আমি নিজেও জানি না। তুমি আছো বলেই আমি আছি। ব্যাপারটা দিনে দিনে জটিল হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাবে পরে আমি থাকলে তুমি নাই, তুমি থাকলে আমি নাই।’
‘হয়ত এর চেয়েও জটিলতা অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।’
কৃর হেঁয়ালী ধরতে পারলাম না। তবে মনে হলো এই হেঁয়ালীটা পদার্থবিজ্ঞানের জটিলতর কোনো তত্ত্বের মতোই মজার।
‘তা হলে আর দেরি কেন। আরো জটিল করা যাক।’
‘কী করে!’
আবার সেই চকচকে চোখ দেখতে পেলাম। মনে হলো অন্য কোনো প্রেমের উপন্যাস হলে এখন কৃ মহাবিরক্ত হয়ে বলতো, যাচ্ছেতাই বকো না, দুপুর হয়েছে, খাবে এখন।
নৌকা ভেড়ানো হলো একটা নির্জন ঘাটে। মাঝি বৃদ্ধ হলেও বেশ সুঠাম। তিনি আমাদের মতো আহ্লাদি দম্পতি দেখে অভ্যন্ত। চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় ছোট মাছের চচ্চড়ি আর ভাত রান্না শুরু করেছেন। বেশ আয়েশ করে খেলো কৃ। তার খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার মনে হলো এখানে একটা বাসাটাসা ভাড়া করে থাকা যায়। কিন্তু কী যেন মিলছিল না। আমার চেনা কৃ তো এমন না। আমার কৃ! আহা, আমার কৃ বলে ফেললাম কী চমৎকার করে।
নৌকাযাত্রা শেষে আবার আমরা ঢাকার পথ ধরলাম। আমার বাসায় ফেরাটা খুব জরুরি? কথাটা কৃকে জানাতেই সে তার খুব চেনা সেই দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, চলো সেন্ট মার্টিন যাই। আজ ঝড় আসতে পারে। ঝড় দেখবো। ভয় পেও না। তোমাকে ভাসিয়ে রাখব।
‘আমি তো ডুবতে চেয়েছিলাম।’

 

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস ‘কৃ’ পর্ব-৮

‘ডুবও দেব প্রিয়।’
আহা! মনে মনে ওমর খৈয়ম সাহেবকে বললাম, ধন্যবাদ জনাব। এই মুহূর্তটাই তো আমাদের জীবন। আর এই মুহূর্তে আমাদের চেয়ে সুখি কেউ নাই।
কথাটা শব্দ করে বলেছিলাম নাকি মনে মনে, সেটা জানি না। তবে আমাদের তৃতীয় দিনটা ছিল আরো অন্যরকম।

জেটিতে পা রাখতেই কৃর প্রথম কথা হলো আমরা কোনো হোটেলে উঠবো না। কোনো একটা বাসাবাড়িতে উঠবো।
আমার কাছে দুটোর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। সারারাত সৈকতে পড়ে থাকব টাইপ কথা না বললেই বাঁচি। কৃর ক্ষমতা এখন বলা যায় নেই। ওঝা ব্যাটার দুই পায়ের মাঝ বরাবর কষে লাথি মারার ইচ্ছে হলো। কিন্তু কৃ আমার হাত ধরে যেভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাতে ভয়ানক ইচ্ছেগুলোও কেমন যেন প্রজাপতির মতো ঝলমলিয়ে উড়ে পালিয়ে যেতে লাগল। ওঝার বিষয়টা পরে দেখব ভেবে চলে গেলাম রাস্তা ধরে।
আধাঘণ্টা ঘুরেও কোনো বাড়িঘর মিলল না। ঝড়ের মৌসুম। হোটেল এমনিতেই সস্তা। রিসোর্টের অভাব নেই। শেষে একটা রিসোর্টেই উঠলাম। জানালা দিয়েই সমুদ্র দেখা যায়।
আমার সঙ্গে ল্যাপটপ, ফ্যাবিয়ানো পেপার আর জলরং সবই আছে। লেখালেখি আর আঁকাআঁকি চলবে সমানতালে। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যেতেই মোমবাতি জ্বালানো হলো। ঘরের জানালা খোলা। হু হু করে বাতাস আসছে। মোমের আলো তরতরিয়ে কাঁপছে।
গোটা রিসোর্টে আমরা দুজন আর একটা পরিবার। তারা দুয়েকবার আমাদের সঙ্গে ভাব জমাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কৃর ব্যাপার স্যাপার এখন ভিন্ন। সহজে অন্য মানুষের সঙ্গে মিশছে না। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখলেই কেমন সিঁটিয়ে আসছে। অস্বীকার করবো, এটাও আমি উপভোগ করছি বেশ।
সারাদিন বের হইনি। সন্ধ্যার দিকে কৃ গোসল সেরে বের হলো। কথা ছিল রাতে আমরা সমুদ্রের তীরে যাব মাছ ভাজা খেতে আর ঘুরতে। কৃকে দেখে মনে হলো তার ইচ্ছে নেই। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। আমি ঝপাং করে লাফ দিয়ে তার কোলে শুয়ে পড়লাম।
‘তোমার মানুষ হবার প্রক্রিয়া কতদূর। পুরোপুরি হয়ে গেলে বোলো। আমি ভাগবো। কারণ মানুষ আমার ভালো লাগে না।’
কৃ কিছু বলল না। গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে তাকে রাগানোর অনেক কৌশল খাটাচ্ছি। সব বিফলে যাচ্ছে। তবে চেষ্টা চালাতে মজাই পাচ্ছি।
‘শোনো কৃ। রেশমার সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়নি এখনো। বিয়ে টিয়ে করতে পারব না। আগেই বলে দিচ্ছি। আমরা এনজয় করবো, কী বল। তারপর দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে যাবে বেঁকে। একদম নব্বই ডিগ্রি।’
‘তুমি এনজয় করতে জানো? কিছু শিখেছো?’
‘অ্যাঁ..! ইয়ে। কী যে বল তুমি। হুহ।’
‘তোমাকে কেউ কিছু শেখায়নি। আমি ছাড়া।’

 

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস ‘কৃ’ পর্ব-৮

‘এসব আবার শেখাতে হয় নাকি?’
‘ইজেল আনোনি কেন? আমার ছবি আঁকবে না?’
‘ইজেলে আঁকি না। আমি ভাব ধরা শিল্পী। ফ্লোরে রংটং ছিটিয়ে হাত দিয়ে আঁকি। মন চাইলে তুলি দিয়ে। হাতের কাছে যা পাই তা-ই।’
‘আমি এখন নগ্ন হবো। আর তুমি আমাকে দেখে দেখে ছবি আঁকবে। কিন্তু আমাকে আঁকবে না। আঁকবে অন্য কিছু। আমাকে দেখে তোমার যা মনে আসবে সেটাই আঁকবে। যদি ছবি ভাল না লাগে…।’
‘প্লিজ, তা হলে শাস্তি হিসেবে গভীর সমুদ্রে নিয়ে ফেলে দেবে আমাকে। কথা দাও।’
কৃ কথা দিল না। কাপড় ছাড়তে শুরু করলো। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে ছড়িয়ে দিল পিঠে। ওর শরীরের বর্ণনা দেওয়ার ইচ্ছে হলো না আমার। কেবল মনে হলো একটা প্রাগৈতিহাসিক অথচ চকচকে ব্রোঞ্জ মূর্তি দেখছি। আলো আঁধারিতে কোনো এক দামি জাদুঘরে রাখা হয়েছে যেটাকে।
কিন্তু ও কৃ। শুধু কৃ। ভিন্ন মাত্রার জ্যামিতি। কঠিন এক উপপাদ্য। যার সমাধানের সাধ্য নেই কোনো গণিতবিদের।
শুয়ে পড়ল কৃ। এক হাত ঘাড়ের কাছে দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। মোমের আলোটা তার শরীরের ভাঁজে ঢেউ খেলে পিঠ বেয়ে নিচের দিকে চলে যেতে চাইছে তিরতির করে। আলোটাও যেন কৃকে সমীহ করে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে ফেলল নিজেকে। কোমরের বাঁকের ওপরে বাইরে থেকে আসা আলোর হাইলাইট। সেটা আবার ব্লেন্ড হয়ে নেমে গেছে নিতম্বের খানিকটা উপরে, মেরুদণ্ডের কাছে। নাহ, কৃ কে আঁকার মতো শিল্পী আমি নই। আঁকতে হবে অন্য কিছু। আমি কৃর বাহুতে হাত রাখলাম। কিছু কিছু বাংলা শব্দই তৈরি হয়েছে এ ধরনের অনভূতির জন্য। এর মধ্যে বেশ আদুরে একটা শব্দ হলো পেলব। যার মানে অত্যন্ত কোমল। আবার ভঙ্গুর। কৃ কি ক্রমে ভেঙে পড়ছে? নাকি আমি?
ওই রাতে আর কাগজের ওপর জলরঙে ছবি আঁকা হলো না। ছবি আঁকা হয়েছে শরীরে শরীরে।
আমার শার্টের বোতামগুলোকে কিভাবে যেন জাদুকরের মতো হাত বুলিয়েই খুলে দিল নিমেষে। তারপর গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজে বলে, ‘কই! কিছু আঁকছো না যে!’
আনাড়ির মতো কৃর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। সে চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করলো আমার জন্য। আমি তার গলার উত্থিত হাড়ে চুমু খেলাম, বেশ সময় নিয়ে। আমাকে কেউ কিছু শিখিয়ে দেয়নি। কৃর গলা, চিবুক সব আমাকে যেন নতুন করে পাঠদানে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দেয়ালের ঘড়িটা ফের আটকে গেল সময়ের চক্করে। রঙের ছটায় আমরা দুজন ক্রমে হয়ে উঠলাম বিমূর্ত শিল্পকর্ম। ইচ্ছেমতো রং মাখিয়ে দিলাম কৃর গলায়, বুকে, স্তনে। চুমু খেতে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো ঠোঁটের ছাপ বসে গেল কোমরে। এরপর শুরু হলো ঝড়। জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট বিন্দু বিন্দু হয়ে জমেছিল তার ঠোঁটে। আর ঠিক তখুনি যেন খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল আমার। কানের মাঝে এক অশরীরি অথচ ভীষণ শরীরি এক অনুভূতি।
কৃ ফিসফিস করে আওড়ে গেল তার নিজের ভাষায় কিছু কথা। সেই ভাষায় মেশানো প্রেমের মদিরা। তার নিঃশ্বাসের স্রোতে ভেসে আসছে বিচিত্র শব্দগুলো। মিলনের মন্ত্রপাঠ করছে ও।
আমার নিউরনে নিউরনে স্ফূলিঙ্গের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে দিয়ে গেল সেই মন্ত্র। কৃর এমন সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য মানুষ হিসেবে নিজেকে বেশ তুচ্ছ মনে হলো। আবার মনে হলো আমার চেয়ে সুখি বুঝি কেউ নেই আর। কৃও কি আমার মতোই সুখি? শরীরি জ্যামিতির সমাধানে ব্যস্ত ছিল আমার হাত, আঙুল আর চুম্বনগুলো। কৃর চোখে জমছিল পানি। আর আমার নিজেকে মনে হচ্ছিল দারুণ অসহায়।

রোমান্টিক উপন্যাস ‘কৃ’ ফ্যান্টাসি থ্রিলার পর্ব-৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!