class="post-template-default single single-post postid-20726 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ছোটবেলা থেকে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা ছিল কৃত্তিকার! সুইসাইড নোট নিয়ে রহস্য

সুইসাইডসম্প্রতি ভারতের কলকাতায় সুইসাইড করে এক স্কুলছাত্রী। যাদবপুরের জি ডি বিড়লা স্কুলের এই ছাত্রীর নাম কৃত্তিকা পাল। জানা গেছে, কৃত্তিকার অনেক আগেই মৃত্যুর ইচ্ছা জেগেছিল। যখন প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল কৃত্তিকা ঠিক তখন থেকেই এই ইচ্ছা জাগে তার মনে। পুলিশে বরাতে জানা গেছে, সুইসাইড নোটে কৃত্তিকা লিখেছে, ছোটবেলা থেকেই তার ‘ডেথ উইশ’ বা মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা ছিল।

বড় হয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রীটি মেট্রো রেলস্টেশনে নামলেই সতর্কীকরণের হলুদ লাইন পার হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকতো। মনে মনে বলতো, একবার যেন পড়েই যাই।

বাথরুমের মধ্যে কৃত্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের হাতে বড় সূত্র (ক্লু) কৃত্তিকা পালের লেখা তিন পাতার সুইসাইড নোট। এর মধ্যে দুটি পাতাই আগে লেখা। সেই নোটের সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা জেনেছেন বহু বছর আগে তার ‘ডেথ উইশ’-এর কথা।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নোটে একাধিকবার সে লিখেছে ‘স্টাফ’-এর কথা। সেই ‘স্টাফ’ কথাটি কোনও বস্তু বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের। তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। কৃত্তিকার নোটে উঠে এসেছে ‘তাদের’ কথা৷

সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘তারা খারাপ, তারা আমায় আঘাত করে।’ এই ‘তারা’ বলতে ওই ছাত্রী কাদের কথা বলেছে, তা নিয়েও রয়েছে রহস্য।

বন্ধুদের উদ্দেশে কৃত্তিকা লিখেছে, ‘আমায় ভুলো না।’ আবার কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গেই লিখেছে, ‘লোকজনের নাকের সামনে দিয়েই যখন চলাফেরা করতাম, তারা আমায় ভুলে গিয়েছিল। এখন তারা আমায় মনে রাখবে।’ কেন কৃত্তিকার এই ক্ষোভ, এই ‘তারা’ই বা কে, তা জানতে ইতিমধ্যেই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকা ও কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ।

কৃত্তিকা যেসব সহপাঠীর সঙ্গে বেশি মিশতো, তাদের কয়েকজনের সঙ্গেও পুলিশের কথা হয়েছে। মা ও বাবার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথা হলেও ফের পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।

পুলিশের প্রশ্ন, বাড়িতেও সে আত্মহত্যা করতে পারতো। কিন্তু স্কুলেই সে আত্মহত্যা করল কেন, সেই প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজা হচ্ছে। প্রয়োজনে মনোবিদদের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারে পুলিশ।

এদিকে, রবিবার কৃত্তিকার মৃত্যুতে মৌন মিছিলের আয়োজন করেন তার স্কুলের অভিভাবকরা।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সুইসাইড নোটে কৃত্তিকা লিখেছে, ছোটবেলা থেকেই তার ‘ডেথ উইশ’ বা মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা ছিল। সে প্রথম শ্রেণিতে পড়াকালে যখন মেট্রো স্টেশনে যেতো, তখন হলুদ লাইন পার করে সামনের দিকে ঝুঁকতো। মনে মনে বলতো, ‘একবার যেন পড়ে যাই।’  কিন্তু সে ঝাঁপ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেনি।

অজ্ঞাতপরিচয় কারও বিষয়ে কৃত্তিকা নোটে লিখেছে, ‘যেখানেই তাকাই আমি তাদের দেখতে পাই। তারা আমার জন্য আসছে। আমায় যেতেই হবে। আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তারা খুব খারাপ। তারা আমায় আঘাত করে। আমার বাঁচার জন্য যা প্রয়োজন, তারা সবকিছু নিয়ে গেছে। সবকিছুই ধোঁয়াটে। কিছুই যেন সত্যি নয়। সবকিছুই যেন স্বপ্ন। সবকিছুই ফিকে হয়ে যাবে, শুধু ভয়ংকর স্মৃতিটা থাকবে। তারা আমায় ধ্বংস করেছে। আমার যা কিছু, তারা ধ্বংস করবে।’ এই ‘তাদের’ সম্পর্কে কেন কৃত্তিকার এতটা আতঙ্ক, তা নিয়ে ভাবছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সে কি কল্পনায় এমন কাউকে দেখতো, যাকে বা যাদের দেখে সে ভয় পেত? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।

কৃত্তিকার সুইসাইড নোট থেকে জানা যাচ্ছে, গত কয়েকমাস ধরে তার জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে। ভালো করে ঘুম হয়না, মধ্যরাতে যখন ঘুম ভাঙে, তখন সে কুলকুল করে ঘামছে। জীবনের স্বপ্ন সে বহুকাল আগেই ছেড়ে এসেছে।

গত কয়েক মাস ধরে সে বাড়িতে কী ধরনের আচরণ করত, মা-বাবার কাছ থেকে পুলিশ তা জানতে চায়। আবার বন্ধু ও শিক্ষিকাদের কাছ থেকে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে, স্কুলে তার আচরণ কোনোভাবে অস্বাভাবিক ছিল কি-না। নোটে একটি জায়গায় মা-বাবাকে মিথ্যা কিছু বলেছে বলে জানিয়েছিল কৃত্তিকা। সেই মিথ্যাই বা কী, মা-বাবার কাছ থেকে তা জানার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!