বার্তা২৪ থেকে: ঢাকার পশ্চিম মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ। আগোরা সুপারশপের নিয়মিত ক্রেতা। শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর মগবাজারে আগোরার আউটলেট থেকে ডাল, তেল, মশলা, সাবানসহ বেশ কিছু পণ্য কিনে ক্যাশ কাউন্টারে বিল পরিশোধের জন্য আসেন। বিল দিতে গিয়ে দেখেন, বিলের পরিমাণ বেশি।
তারপর বিল পরিশোধ করলেও সন্দেহ হওয়ায় কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা কর্মীকের বিলটা একটু পরীক্ষা করে দেখতে বলেন তিনি। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হয়, ‘বিল তৈরিতে আগোরার কোনো ভুল হয় না।’ হাতে সময় কম থাকায় তাড়াহুড়া করে দ্রুত বাসায় চলে আসেন তিনি। বাসায় গিয়ে পণ্যের লিস্টের সঙ্গে পরিশোধ করা ক্যাশ মেমো মেলাতে গিয়ে হতবাক হন। তিনি ইলিশ না কিনলেও বিলে ইলিশ মাছ বাবদ চার হাজার ১৪৫ টাকা অতিরিক্ত ধরা হয়েছে।
এ প্রতারণার অভিযোগে গত ১১ জুন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে মগবাজার আউটলেটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ। আগোরা সুপারশপ রহিম আফরোজ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগে বলা হয়, ‘মগবাজার আউটলেট থেকে ৮ জুন নানা পণ্য কিনে বাসায় এসে দেখি, আমি ইলিশ মাছ না কিনলেও আমার কাছ থেকে চার কেজি ৩৬৪ গ্রাম ইলিশের দাম চার হাজার ১৪৫ টাকা রাখা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে আউটলেটে অভিযোগ দিলে তারা জানান, তাদের কাছে ইলিশ মাছ নেই। পণ্য না দিয়েও মূল্য রাখায় আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
ভুক্তভোগী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, ‘বিষয়টির সুরাহা করতে আউটলেটের ব্যবস্থাপককে জানালে, তিনি জানান, তাদের আউটলেটে ইলিশ মাছই নেই। এরপর মগবাজার আউটলেটের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রমাণ হয় যে ইলিশ মাছ না দিয়েই আমার কাছ থেকে মূল্য রাখা হয়েছে। এরপর এমন ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ওই আউটলেটের ব্যবস্থাপক ফারুকুল আলম।’
তিনি জানান, আউটলেটে ইলিশ না থাকা সত্ত্বেও বিলের সফটওয়্যারে ইলিশের কোড এসেছে কীভাবে? এমন প্রশ্ন করলে ব্যবস্থাপক সঠিক জবাব দিতে পারেননি। এরপর তার বিগত দুই বছরের বিলের স্ট্যাটাস প্রিন্ট দেখতে চান ব্যবস্থাপকের কাছে। কিন্তু ব্যবস্থাপক তাতেও অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, ‘আমাদের কাছে নিয়মিত ক্রেতাদের মাত্র দুই মাসের বিলের ডাটা সংরক্ষিত থাকে।’
এ ধরনের উত্তরে ক্রেতাদের অভিযোগ বাড়ছে সুপারশপ আগোরার বিরুদ্ধে। এ সুপারশপের নিয়মিত অনেক ভোক্তার এখন অভিযোগ, দুই মাসের বেশি সময়ের বিলের ডাটা সংরক্ষণ না করে আগোরা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কারণ আগোরার মেম্বারশিপ নিয়ে যারা নিয়মিত কেনাকাটা করেন, তাদের জন্য ডিসকাউন্ট পয়েন্ট সংরক্ষণ করার অফার দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তাহলে কেউ দুই মাসের মধ্যে ডিসকাউন্ট পয়েন্ট সমন্বয় না করলে সেটা বাতিল হয়ে যায়! যা কোনো ক্রেতাকেই জানায় না আগোরা। আগোরায় যারা নিয়মিত বাজার করেন, হয়তো তারা পরে আর বিল মিলিয়ে দেখেন না। এতে প্রতারণার সুযোগ পাচ্ছে আগোরা। এভাবেই কী এসব সুপারশপে এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা?
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ক্রেতাদের আকর্ষণীয় অফার দেয় আগোরা। আর সেই অফারে ছাড় দেওয়া অর্থের অংশ নানা কৌশলে ক্রেতাদের থেকেই আদায় করা হয়। এছাড়া কারওয়ান বাজার থেকে বিভিন্ন ফল ও সবজি সংগ্রহ করে তা চড়া দামে আগোরার নিজস্ব ফার্মের অর্গানিক পণ্য বলে চালিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
একাধিক ক্রেতার অভিযোগ, এমন করে নিয়মিত ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে আগোরা।
শাহরিয়ার বলেন, ‘প্রতারণা ধরা পড়ার পর আমি তাদের কাছে গত দুই বছরের বিলের প্রিন্ট কপি চাইলে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় চান। এরপর সন্ধ্যায় শিলা নামে একজন আগোরা থেকে ফোন করে জানান, তাদের কাছে মাত্র দুই মাসের বিল রয়েছে। আমি এ কথা শোনার পর তাদের বিকল্প তিনটি প্রস্তাব দেই- হয় তারা আমার গত দুই বছরের বিল দেবে, যাতে আমি মিলিয়ে দেখতে পারি এ রকম ভুতুরে কোনো বিল আমার নামে আগে করা হয়েছে কিনা, না হয় এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কর্মীকে যথাযথ শাস্তি দিয়ে তা মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে অথবা আমার সঙ্গে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকার প্রতারণা করা হয়েছে, এটা ধরে নিয়ে দুই বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে তা সমাজের অসহায় সুবিধা বঞ্চিতদের মধ্যে বিতরণ করে মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে। কিন্তু তারা এর কোনোটিই পালন করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থাপক আমাকে জানান, দুই বছরের বিল পেতে হলে তাদের এক মাস সময় দিতে হবে। তখন আমি বুঝতে পেরেছি, এটা কালক্ষেপণ করার কৌশল এবং প্রতারণার নতুন কোনো ফাঁদ। এর ফলে আমি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এনামুল হক নামে এক ক্রেতা জানান, তিনি আগোরার মগবাজারের ওই আউটলেট থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করতেন। কিন্তু আগের তুলনায় সেবার মান কমে যাওয়ায় তিনি এখন আগোরা থেকে আর কেনাকাটা করেন না।
এ বিষয়ে আউটলেটের ব্যবস্থাপক ফারুকুল আলম বলেন, ‘প্রতিদিন মগবাজার আউটলেটে আটশ’ থেকে ১২শ’ ক্রেতা কেনাকাটা করেন। এটা ভুলবসত হয়েছে। আমরা ক্রেতাকে টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছি।’
আর চার হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত ক্রেতা রয়েছেন এই আউটলেটে। অনেক ক্রেতা মনে করেন, যদি ১০ শতাংশ ক্রেতার সঙ্গে এমন ভুল করা হয়ে থাকে, তাহলেও চারশ’ ভোক্তা এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ভুলটা ধরা না পড়লে বিষয়টি সবার অজানাই থেকে যেত।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও উপ-সচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের কাছে আগোরার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছে। তারপরও আমরা অভিযোগটি প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেব।’