class="post-template-default single single-post postid-11228 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

তুষার আবদুল্লাহর কলাম ‘চরিত্রহীন’ টকশো

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

টকশো চরিত্র হারিয়েছে। এই মন্তব্যে কেউ জানতে চাইতে পারেন, টকশোর কি কখনও কোনও চরিত্র ছিল, কিংবা টকশোর চরিত্র কী উপায়ে গঠিত হয়? সাধারণভাবে যারা গণমাধ্যম বা টকশোর বিশ্লেষক, তারা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, অনেক টকশোর পেছনেই থাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা বা প্রপাগান্ডা। অর্থাৎ ‘মতলব’। কার প্রপাগান্ডা? কখনও সেটি স্বয়ং ওই গণমাধ্যমের থাকে, কখনও রাজনৈতিক দল, সরকার বা কোনও বিশেষ সংস্থা বা শিল্পগোষ্ঠীও ওই গণমাধ্যমকে দিয়ে নিজেদের ‘মতলব’ হাসিল করতে পারে। ব্যক্তি বিশেষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কাজেও টকশোকে ব্যবহার করা হয়। আমরা যত আন্তর্জাতিক তারকাখচিত গণমাধ্যমের কথাই উদাহরণ হিসেবে আনি না কেন, সেই টকশোগুলোর যতই গুণমুগ্ধ হই, আড়ালে প্রণোদিত উদ্দেশ্য এবং প্রচারণাই কাজ করে। বাংলাদেশে প্রচারিত টকশোকে এর বাইরে রাখা যাবে না।
এখানে টকশোর ফলন ভালো। একেবারে বাম্পার।  সংগীতনির্ভর ও শিশুতোষ চ্যানেল ছাড়া বাকি সব চ্যানেলে একাধিক টকশো আছে। সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয় হুড়োহুড়ি, কাড়াকাড়ি। কে কোন চ্যানেলে যাবেন, কাকে কোথায় নেওয়া যাচ্ছে কিংবা কে কয়টায় যেতে পারছেন। চলতি ঘটনা ছাড়াও রকমারি বিষয়ে টকশো হচ্ছে। রকমারি নিয়ে ঝামেলা একটু কম। যতটুকু আছে, সেটা হলো যে বিষয়ে যিনি কথা বলার সক্ষমতা রাখেন, তিনি হয়তো আসছেন না একেবারেই। এলেও কম। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাকে বা তাদের খুঁজে আনার দায়িত্ব পালন করছে না চ্যানেল। এত ধৈর্য নেই। ‘বড়শী’তে যারা এসে ধরা দেন বা নিজেদের বন্ধু ও পরিবারের মধ্য থেকেই চলে ডাকাডাকি। ফলে দেখা যায়, যিনি রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন, তিনিই চলচ্চিত্রবোদ্ধা একইসঙ্গে মৎস্য বিশেষজ্ঞও। এই জাতীয় টকশো থেকে দর্শকরা সঠিক তথ্য ও নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হন। অপচয় হয় সময়ের।

রকমারি টকশোর প্রতি সাধারণভাবে চ্যানেলগুলো আগ্রহ কম। কারণ, এসব টকশো দিয়ে নাকি বাণিজ্য হয় না। বাড়ে না টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট। খায় না দর্শক। কারণ ওই ধরনের টকশোগুলোর রেসিপিতে কাজিয়া নেই। যে টকশোয়  কাজিয়া থাকে না, সেই টকশো মানুষ খায় না। এটা চ্যানেলগুলোর গড়পড়তা ধারণা। বাজারে এই ধারণাকে মূলধন করে বাণিজ্য করতে গিয়েই তাদের হাতে টকশোর চরিত্রহনন হচ্ছে। একমাত্র রাজনীতি বিষয়ক টকশোতেই ঝগড়া অনায়াসে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মুশকিল হলো, প্রকৃত অর্থে যারা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, তারা নিজেদের ঝগড়া মসলায় মাখাতে চান না। তাই টকশোতে তারা সুলভ নন। যে কারও সঙ্গে, যেকোনও চ্যানেলে, যেকোনও বিষয়ে তাদের সুলভে পাওয়া যায় না। এই ব্যক্তিত্বরা যখন কোনও বিষয়ে কথা বলেন, তখন সেখান থেকে শুধু সাধারণ দর্শকেরাই তথ্য, দর্শন ও নির্দেশনা পান, এমন নয়; রাজনৈতিককর্মী ও নেতারও  নিজেদের ঋদ্ধ করার সুযোগ পান। কিন্তু একদিকে যেমন এই ব্যক্তিত্বরা বাজারে হত চান না, অন্যদিকে তাদের এনে ‘সস্তা’ শো করানো যায় না বলে, এদের প্রতি বেশিরভাগ চ্যানেলের আগ্রহ কম। এ থেকেই জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দর্শনের ঘাটতি বাংলাদেশের টকশোতে। শুরুতেই বলেছি, একটা প্রপাগান্ডা থাকে, টকশো নির্মাণের পেছনে। যোগ্য মানুষকে দিয়ে কথা বলাতে পারলে সেই প্রপাগান্ডা থেকেও দর্শক উপকৃত হয়।

চ্যানেলে বাজারে টকশো কেন সংক্রমিত হলো? প্রথমত বিজ্ঞদের দিয়ে টকশো করাতে চাইলে একরাতে তিনজন  আলোচক পাওয়াই মুশকিল। একরাতে পাওয়া গেলেও প্রতিরাতের জন্য তারা দুর্লভ। কিন্তু প্রতিরাতে ২৩/২৪টি চ্যানেলে তো টকশো চালাতে হবে। কোথাও সারাদিন ৩/৪টি। এই আলোচকের জোগান দেবে কে? তখন আলোচক থেকে চ্যানেল চোখ সরিয়ে নেয় ‘টকার’-এর দিকে। বাজারে কিলবিল করছে টকার। কেউ কথা বলে নিজেকে নেতা বলে জাহির করতে চান। নজরে আসতে চান দলের শীর্ষ নেতাদের। যত টকশো, এলাকায় তত দাম বাড়ে। যত নেতা তোষণ, তত পদের দাবি জোরালো হয়। শুধুই কি পদ? ব্যবসা-বাণিজ্যের পালেও হাওয়া লাগে। টকশো করে ব্যাংকঋণ ও ব্যবসার প্রসার সহজ হয়েছে, এমন উদাহরণ নাকি আছে একাধিক টকারের বেলায়। কোনও কোনও টকার চ্যানেল এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ফরমায়েস অনুসারেও কথা বলেন। ফলে চ্যানেল অনুসারে কথার সুর পাল্টে যায়। এই প্রজাতির ‘টকার’দের আলোচনায় থাকার জন্যই টকশোতে তেলেসমতি কাণ্ড ঘটাতে হয়। সেটি ঝগড়া করে। যেহেতু তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তলানিতে, দলের আদর্শও ঠিকমতো জানেন না, সেহেতু টকশোর সময়টুকু ঝগড়া-ঝাটি করে কাটিয়ে চলে যান। তিনজন থাকলে কেউ কারও কথা শুনতে চান না। কে কত উচ্চস্বরে কথা বলবেন, বলতে পারছেন, সেই লড়াই চলে। হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গালির নজির অনেক। সরাসরি অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আর ব্যক্তিগত আক্রমণতো জমজমাট। প্রতিরাতেই কেউ না কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পারস্পরিক আক্রমণের প্রদর্শনও চলছে। কারণ ওই ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চিৎকার ছাড়া আর কোনও পুঁজি নেই। এই প্রজাতির ‘টকার’ সমাবেশ ঘটিয়েই চরিত্রহনন করা হচ্ছে টকশোর। এখনও কোনও কোনও চ্যানেল মানসম্মত টকশো আয়োজনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু ‘চরিত্রহীন’ টকশোর ভিড়ে, সেই  প্রয়াস মেঘে ঢাকা তারা।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!