সজীব আহমদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস থেকে
আমার ধারনা, সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগকে শেষ করতে চান, নয়ত প্রযুক্তি বিষয়ে উনার জানাশোনা নেই। নইলে, এত কাঁচা গুজব একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ছড়ানোর কথা নয়।

জনাব জয় ‘আজকের নিউজ’ নামের একটি ফেসবুক পেইজের ফটোকার্ড শেয়ার করেছেন। যাতে বলা হয়েছে, “বিপুল পরিমাণ বোমা,ককটেল,ও বিস্ফোরক নিয়ে ধরা পড়ল তিন শিবির কর্মী! ঢাকায় নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল।”
জাস্ট গুগল ইমেজে সার্চ করে ৩০ সেকেন্ডে আসল ঘটনা পাওয়া গেলো। দেশের মূলধারার সব সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় পেট্রোল বোমা, ককটেল ও গান পাউডারসহ বিপুল বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে; যেগুলো নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল।
জড়িত অভিযোগে আটক ব্যক্তিরা হলেন— টাঙ্গাইলের আলতাফের ছেলে রাজ ইসলাম (২৫), চাঁদপুরের নুর মোহাম্মদের ছেলে রাকিব (২৪), সুনামগঞ্জের জালাল উদ্দিনের ছেলে জিয়াউর রহমান। খবর অনুযায়ী, তারা ভাঙা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী টিটু সরদারের বাড়ি ঘর ভাড়া নিয়ে মাসখানেক ধরে ছিলেন। তারা স্থানীয় সঙ্গে মিশতেন না।
ভাঙ্গা থানার ওসি আশরাফ হোসেন জানান, ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউন উপলক্ষে একটি মহল বোমা তৈরি করছিল। গোপন সংবাদ পেয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি।
জয়ের ক্রেডিবেলিটি লেভেলের আরেকটি পরিমাপ হল, ‘আজকের নিউজ’। ভুয়া ফটোকার্ড শেয়ারের আগে পেইজটি থেকে একটি এআই নির্মিত ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। যাতে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলছেন, ‘বাসে আগুন দেওয়ার পর একটি বিএনপি কর্মীকে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে বদমান করতে বিএনপি আগুন দিচ্ছে। তাই ১৩ নভেম্বর বাস বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে মালিকদের’। ফ্যাক্টচেক ছাড়াই ধরা যায়, এতটা নিম্নমাণের এআই। কিন্তু এসব গার্বেজ উৎপাদন করা পেইজ শেয়ার করে জয়! এবার বোঝেন লেভেল কী।
আওয়ামী লীগের আজকের পরিণতির জন্য অনেকাংশে দায়ী জয়। তিনি দলটিকে সংগঠন ভিত্তিক হওয়ার পরিবর্তে, অনলাইনভিত্তিক করেছেন। সিআরআই তৈরি করে ভেবেছিলেন, এটা দিয়ে দেশের সব মানুষের মগজ ধোলাই করে ক্ষমতায় থাকবেন। বয়ান প্রতিষ্ঠার নামে যা তা গুজব ছড়িয়েছেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত, জয়ের এই গুজব থেরাপি আওয়ামী লীগের গোমাসা করেছে। আপনাদের মনে আছে, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট রাতে সাত মিনিটে রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে, ওমুক পালিয়ে গেছে, তুমুক হাওয়া হয়েছে- এ জাতীয় হাজার হাজার গুজব ছড়ানো হয়েছিল। এটা দলটির নেতাকর্মীদের ফলস কনফিডেন্স দিয়েছিল। ফলে ৪ আগস্ট ইস্ত্রি করা জামা পরে রাস্তায় নেমেছিল, সব নিয়ন্ত্রণে আছে এই চিন্তা থেকে। আমি সেদিন শাহবাগে দেখেছিলাম, তিন চারশ’ নেতাকর্মী খুব রিলাক্স মুডে এসেছিল। তারপর মার খেয়ে দুই মিনিটে পগাড় পাড় হয়।
শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালালেও, ৪ আগস্ট সারাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মার খাওয়াই দলটার পতন নিশ্চিত করে। আওয়ামী লীগ শেষ- এ বার্তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। রাজনীতিতে একটা পরাজিত শক্তিকে কেউ সমর্থন করে না।
আগেও বলেছি, আবারও বলছি, ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ নিজেদের ছড়ানো গুজবের ফাঁদে পড়ে সংঘর্ষে না জড়ালে, দলটির পতন হতে হয়ত আরও কয়েকদিন লাগত। কে জানে এর মধ্যে হয়ত সবকিছু নিজেদের অনুকূলে ঠিকই করতে পারত।
জয়, অমি পিয়ালসহ বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা গত কয়েকদিনে যে গুজব ছড়াচ্ছে, এর কুফল আগামীকাল পাবে কর্মী সমর্থকদের হতাশা করার মাধ্যমে। কাল যখন কর্মী সমর্থকরা দেখবে এত হেন কারেঙ্গা তেন কারেঙ্গা ঘোষণার পরও কিছু ঘটল না, তখন তাদের মনোবল আরও ভেঙে পড়বে।

















