আমরা অনেকেই লেখালেখি করতে চাই। হয়তো জীবনের ঘটে যাওয়া মজার কোনো অভিজ্ঞতা, নিজের প্রেমের গল্প কিংবা ভয়ানক কোনো অভিজ্ঞতা, মূলত গল্প লিখতে চাই কমবেশি সবাই। বিশেষ করে ফেসবুকের ফলোয়ার বাড়াতেও কিন্তু থাকা চাই গল্প লেখার দক্ষতা। গল্প কিভাবে লিখতে হয় বা গল্প লেখার নিয়ম কী এটা জানা থাকলে আমাদের মধ্যে যাদের লেখালেখির কোনো অভিজ্ঞতা নেই তারাও সহজে এটাওটা সাজিয়ে লিখে ফেলতে পারবেন।
তবে যারা বড় গল্পকার বা সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের ব্যাপারটা একটু আলাদা। তাদের মূলত আইডিয়া বা প্লটের ওপরই আগে জোর দিতে হয় বেশি। তাদের ঠিক করতে হয় গল্পটার ক্লাইম্যাক্স কোথায় হবে? জটিলতা কতটুকু থাকবে, থ্রিল কোথায় থাকবে এবং পরিশেষে গল্পের এন্ডিং কেমন হবে।
তো গল্প কিভাবে লিখতে হয় এ আলোচনায় আমরা খুব গভীরে আপাতত যাব না। টুকটাক কিছু টিপস শেয়ার করা যাক।
গল্পের শুরু
গল্পের শুরু হুট করে হয় না। বড় বড় লেখকরাও কিন্তু প্রথম লাইন লিখতে গিয়ে বেশ ভাবেন। এটা ভাবার কারণ নেই যে একজন ভালো লিখেন মানেই যে তিনি বসলেই হুড়মুড় করে লেখা বের হতে থাকবে। তাই শুরু নিয়ে ভাবুন। তাড়াহুড়ো করবেন না।
ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে শুরুতে একটা চমক দিয়ে শুরু করে অনেকে। এটা ভালো চর্চা। পাঠককে আটকে ফেলা যায় তাতে। খুব ফ্ল্যাট বর্ণনা দিয়ে শুরু না করাই ভালো। তাতে ভালো পাঠকরা আর বাকিটা পড়তে আগ্রহ দেখাবে না।
গল্পের শুরুতে পাঠককে আটকে রাখার ব্যাপারটাকে বলে হুক। মানে বড়শিতে পাঠককে গেঁথে ফেলা। এ কাজটা করুন সচেতনভাবে। রহস্য গল্প হলে এমনভাবে শুরু করুন, যেন পাঠক শিহরিত হয়। এরপর না হয় ঘটনার ব্যাকগ্রাউন্ড বর্ণনা করা যাবে।
বর্ণনাত্মক লেখা হলেও শুরুতে মজার কিছু চেষ্টা করুন। গরুর রচনা ঝেড়ে ফেলুন মাথা থেকে। শুরু ভালো যার, সব ভালো যার- গল্প লেখার নিয়ম এর মধ্যে এটা বড় একটা মন্ত্র।
এরপরও বড় কথা হলো লেখকের স্বাধীনতা। আপনার গল্প আপনি যেভাবে খুশি লিখতে পারেন। পাঠকও চাইলে পড়বে, না চাইলে না। তবে গল্প বলার ধরনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে— আপনি কি সত্যিই চান, পাঠক আপনার গল্পটা পড়ুক, নাকি এড়িয়ে যাক।
বর্ণনা
এবার কিছু টিপস বলি। প্রথমত, গল্প বা যেকোনও বর্ণনা লেখার ক্ষেত্রে একটা প্যারাগ্রাফে প্রথম লাইনের ধারাবাহিকতা রাখুন। পরের প্যারাগ্রাফে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সেই ধারাবাহিকতা যেন থাকে। এটাকে বলে কনটিনিউয়িটি। যেমন ধরুন একটা প্যারাগ্রাফ এমন— “রফিকের হঠাৎ মনে হলো নীলাকে বহুদিন চিঠি লেখা হয়নি। নীলার পছন্দ সবুজ শাড়ি। রফিক নীলাকে শাড়ি কিনে দেবে ঠিক করলো।”
এ প্যারা পড়তে গেলে সবারই কেমন খটকা লাগবে। প্রথম লাইনের পর যা পড়ার আকাঙ্ক্ষা জন্মায় তা দ্বিতীয় লাইনে নেই। পাঠকের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে এমন কথা নেই। তবে এলোমেলো বাক্যবিন্যাসই বা লিখবেন কেন। প্যারাগ্রাফটা যদি এমন হতো— “রফিকের হঠাৎ মনে হলো নীলাকে বহুদিন চিঠি লেখা হয়নি। কিন্তু রফিক জানে না পোস্ট অফিসটা কোথায়। খামের দাম কত সেটাও জানে না। দুই টাকার হলুদ খামগুলো কি এখন পাওয়া যায়? দাম দুই টাকা আছে? নাকি দশ বিশ টাকা?”
একই নিয়ম প্রযোজ্য এক প্যারাগ্রাফ থেকে আরেক প্যারাগ্রাফে যাওয়ার ক্ষেত্রেও। প্রথম প্যারাগ্রাফের সঙ্গে দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফের একটা মিল থাকতে হবে। একটা প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে যেতেও এক ‘সেতু’ লাগে।
যেমন রফিকের চিঠি সংক্রান্ত প্যারাগ্রাফটির ঠিক পরেই যদি এটা লেখা হয়—
“নীলার খালা দশ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন। তার এক ছেলে ছিল। সেই খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে নীলার হঠাৎ দেখা।”
তাহলেও ধাক্কা খাবে পাঠক। পরবর্তী প্যারায় যদি আগের প্যারার ধারাবাহিকতার দরকার একেবারেই না হয় তবে নতুন পরিচ্ছদ শুরু করতে হবে।
নিজের লেখা নিজে পড়ুন
লেখার পর নিজে পড়ুন। গল্প কিভাবে লিখতে হয় সেই চিন্তা বাদ দিয়ে পাঠক হিসেবে পড়ুন। শব্দ করে পড়লে আরও ভালো। খটকা থাকলে সেটা তো দূর হবেই, সঙ্গে বানান বা বাক্যগত ভুলত্রুটিও চলে যাবে।
আরেকজনও পড়তে পারে
যদি পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের জন্য গল্প লিখে থাকেন তবে তা পাঠানোর আগে চাইলে কোনো বন্ধুকে দিয়েও পড়িয়ে নিতে পারেন। আরেকজনের চোখে সবসময়ই কিছু না কিছু ধরা পড়ে। সুতরাং সমালোচনা মেনে নিতেও শিখতে হবে।
শুদ্ধ বানান
বানান জানতেই হবে আপনাকে। অনেক সময় একটা দুটো বানানের কারণে (টাইপের সমস্যা নয়, এমন বানানা যা আপনি জানেন না) পুরো লেখার প্রতিই পাঠকের বিতৃষ্ণার জন্ম দিতে পারে। যেমন ভুল করে আপনি হাসপাতালকে হাপসাতাল লিখে ফেলতে পারেন, কিন্তু যদি ‘হাসফাতাল’ লেখেন, তবে তা দৃষ্টিকটূ লাগবেই। পাঠক তখন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ করবে।
পড়ুন প্রেমের গল্প : তোমার অসীমে
গল্পটা কিভাবে গল্প হবে
গল্প লিখতে গেলে সবার আগে ভাবুন প্লট। সাধাসিধে বর্ণনার প্রতি পাঠকের আগ্রহ খুব একটা থাকে না। গল্পে যা বলতে চান, তা যেন রস আকারে থাকে। মানে সেটা পাঠকের মনকে খুশি করতে পারে, দুঃখে ভরিয়ে দিতে পারে আবার হাসাতেও পারে। সেই রসের সঙ্গে যোগ করুন কিছুটা রহস্য, কিছুটা অবাক করা বিষয় বা কিছু ধাঁধা…। যেমন ধরুন, গল্পটা যদি এমন হয়— নিশ্চিন্তপুরের বিধবা মালতীর হঠাৎ মনে হলো, তার মৃত্যু হবে পানিতে ডুবে। এমনটা পড়া মাত্রই পাঠকের মনে এক ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। তারা অবচেতনে অপেক্ষা করবে কখন মালতী পানিতে ডুবে মরে। এখন আপনি যদি মালতীকে গল্পের শেষের দিকে সাধারণ একটি দুর্ঘটনায় পানিতে ফেলে মৃত্যুর মুখে দাঁড় করিয়ে দেন, সেখানেও পাঠকের আপত্তি। তারা বলবে, দূর এ আবার কেমন গাঁজাখুরি গল্প।
এখন আপনি যদি আরও কিছু ঘটনা এনে মালতীর মনে এমন এক রসায়নের সৃষ্টি করলেন যে সে নিজেই একপর্যায়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে বসলো তবে তা এক ধরনের সাহিত্য রস সৃষ্টি করতে পারবে। দেখা গেলো, মালতীর অবচেতন মন আগেই ঠিক করে রেখেছে যে সে আত্মহত্যা করবে এবং এ কাজে পানিতে ঝাঁপ দেওয়াই তার কাছে সহজ।
অর্থাৎ ঘটনা ঘটে যাওয়াই গল্প নয়। ঘটনায় থাকবে কিছু চমক, সেটা ঘটনার পরম্পরাও হতে পারে কিংবা মনোজগতের টানাপড়েনও হতে পারে।
গল্প লেখার টিপস নিয়ে আজ আপাতত এটুকুই। তবে এখানেই শেষ নয়। লেখাটা এমনিতেই বড় হয়ে গেছে। আপনাদের ভালো লেগে থাকলে ওয়েবসাইটটি Allow বাটনে ক্লিক করে সাবসক্রাইব করে রাখুন।
প্রতিদিন আপনার এয়ারটেল বা রবি নম্বরে একটি স্বাস্থ্য পরামর্শ পেতে ডায়াল করুন : *213*5922#
পড়ুন অতিপ্রাকৃতিক গল্প : খোলস