সাবরিনা তাহ্সিন
রাতের অন্ধকারে, ঘুমের ভেতর একটি অদ্ভুত ঘটনা যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। স্বপ্নের শুরুটা ছিলো হঠাৎ একটি বড়সড় এক্সিডেন্ট দিয়ে। রাগে ভরা মনে বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম, দিগ্বিদিকশূন্যভাবে হাঁটছিলাম। কখন যেন রাস্তার মাঝখানে চলে এলাম, আর সেই মুহূর্তে মোটরবাইক ও প্রাইভেট কারের ত্রিমুখী সংঘর্ষ—সবকিছু একসাথে থমকে গেল। মোটরবাইক চালক আহত হলো, আর আমার অবস্থা গুরুতর। সবাই দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছালো।
প্রাইভেট কারের লোকেরা ভেবেছিল অনিক এবং আমি সম্পর্কিত, তাই তারা অনিকের পরিবারকে খবর দিল। অনিকের মা, ভাই, ভাবী এবং বড় বোন হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে এলেন।
“হ্যাঁ রে, তুই ঠিক আছিস? কোথায় লেগেছে?”—মায়ের কণ্ঠে উদ্বেগ।
“মা, আমি ঠিক আছি। মাথায় একটু আঘাত পেয়েছি। চিন্তা করো না।” অনিক শান্ত স্বরে বলল।
হঠাৎ তার স্মৃতিতে ভেসে উঠল, “সে ঠিক আছে তো? তার কিছু হয় নি তো?”
অনিকের মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কে? কার কথা বলছিস?”
“রিমা… সে ঠিক আছে তো?” অনিকের কণ্ঠে ভয় আর যত্নের এক মিশ্রণ।
তখনই নার্স ডাক দিয়ে বলল, “স্যার, পাশের রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। বি পজেটিভ রক্ত লাগবে।” ডাক্তার দ্রুত এলেন। অনিক তৎক্ষণাৎ তার সব বন্ধুদের ফোন করে রক্তের ব্যবস্থা করলেন। অনিকের এই ব্যস্ততা এবং উদ্বেগ দেখে তার পরিবারও বুঝতে পারলেন—অনিক আমার প্রতি দুর্বল।
আমার ফোন ভেঙ্গে যাওয়ায়, অনিক আমার সিম লাগিয়ে আমার বাড়িতে কল করলেন।
“কতবার ফোন করে যাচ্ছি, তুমি ধরছো না কেন? কতো টেনশন হচ্ছে।”
“শান্ত হন, আন্টি । রিমার এক্সিডেন্ট হয়েছে। সে এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।”
আম্মু কান্না করতে করতে বাবাকে বললেন, “এই শোনো, রিমা এক্সিডেন্ট করেছে। চলো, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাই।”
অনিকের মা পাশে বসে বললেন, “আপা, শান্ত হন। সন্তানের অসুস্থ হলে মায়ের মন কেমন করে তা আমি জানি। ইনশাআল্লাহ, রিমা সুস্থ হয়ে যাবে।”
অনেক অনুনয় এবং প্রার্থনার পর, অনিকের বড় বোন মূল্যবান রক্ত দান করলেন। প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো। চোখ খুলতেই দেখি আমার পাশে বসে আছেন মা, বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, চারপাশে ভিড়। সম্ভবত অনিকের পরিবার।
আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তোমাকে সুস্থ দেখে ভালো লাগছে।”
ছোট বোন ভিডিও কলে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “এতো কিছু ঘটল। এখন কেমন আছো?”
“শান্ত হও, আপুমণি। আমি ঠিক আছি। চিন্তা করো না।”
অনিকের মা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি অনিককে পছন্দ করো? আমরা ব্যবস্থা করে দিব।”
আমি বললাম, “অনেকদিনের বন্ধুত্ব। ঠিক জানি না সে আমাকে পছন্দ করে কি না। তার মতামত নিলে আমি জানাতে পারব।”
অনিক লাজুক হেসে বলল, “দেখো, তোমরা যা ভালো মনে করো।”
হাসপাতালেই ঘরোয়া আয়োজনে এনগেজমেন্ট হয়ে গেল। অনিকের মা জানালেন, “বিয়ের তারিখ পরে ঠিক করে জানাবো।”
স্বপ্নটা শেষ হলো, কিন্তু অনুভূতিগুলো—ভয়, উদ্বেগ, যত্ন, ভালোবাসা—সবই যেন মনকে নাড়া দিয়ে গেছে। কাছাকাছি আসা, এমনও হতে পারে…
৩৭ ,আকুয়া জুবিলী কোয়ার্টার, ময়মনসিংহ।
















