Monday, December 23
Shadow

অতিপ্রাকৃতিক থ্রিলার গল্প : দ্বিতীয়

 

মনিরুল ইসলামের সঙ্গে ডা. তৈয়ব আখন্দের প্রথম সাক্ষাৎ

‘আমি একজনকে খুন করেছি। কিন্তু…(বিরতি) আবার.. না মানে.. আমি আসলে খুন করি নাই। খুন করেছে আরেকজন।’

অস্পষ্ট এই কথাটা বলার আগে ৬৪ দীনবন্ধু রোডের একতলা বাড়ির একটি কক্ষে মনোবিজ্ঞানী ডা. তৈয়ব আখন্দ ও আটত্রিশ/চল্লিশ বছর বয়সী মনিরুলের মধ্যে যা আলাপ হয়েছিল-

‘ডাক্তার সাহেব, আমি আগে আমার নিজের সম্পর্কে বলি। আসলে নিজের সম্পর্কে বলার জন্যই আপনার কাছে আসা। আমি এমএ পাস করেছি গতবছর। এখনও চাকরি বাকরি হয়নি। তবে হবে। আমার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ আরেকজন কথা বলে।’

এটুকু বলার পর যুবকের মনে হলো এভাবে নিজের সম্পর্কে বলা হচ্ছে না। আবার নতুন করে শুরু করা যায়। খেই ধরিয়ে দিলেন ডা. তৈয়ব আখন্দ।

‘আপনার নাম? পরিবারে কে কে আছেন? সমস্যার কথা না হয় একটু পরে শুনি।’

‘আমার নাম মনিরুল ইসলাম মনির। বয়স ধরেন চল্লিশ। পরিবারে তেমন কেউ নাই। এক বড় ভাই আর বোন। বিয়ে হয়ে গেছে। তারপর আমি আসলে.. আমার মাথার মধ্যে। মানে ভাই আমি একটা মহা বিপদে পড়ে এসেছি। আপনি একটা বিহীত করেন।’

‘মনির তুমি..তোমাকে তুমি করে বলি। তুমি কী কর? মানে তোমার চলে কী করে? এখানেই আশপাশে থাকো নিশ্চয়ই..।’

‘একটা ছোট কোম্পানির ডেলিভারি আর মার্কেটিং করি। জামা কাপড় মশলাপাতি আর ঘরের বাজার সদাই। মাঝে মাঝে ভালো কমিশন আসে। কিন্তু কিছুদিন হলো একটু ঝামেলা হচ্ছে।’

‘আজ তোমার ছুটির দিন না। তুমি অফিস ফাঁকি দিয়ে এসেছো?’

‘জ্বি ইয়ে। আপনি…।’

‘আজ সোমবার। অবশ্য তোমার কথার তাড়া দেখেও বোঝা যাচ্ছে বিষয়টা। তবে ওটা আমার চিন্তার বিষয় না। তুমি সময় নিতে পারো। আমার তাড়া নেই।’

‘জ্বি আপনার ভিজিট প্রথমবার তো ছয়শ টাকা। আমি নিয়ে এসেছি। এই নেন।’

মনিরের বাড়ানো নোটগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন ডা. তৈয়ব। ছয়শ টাকা ভাঁজ করা। বুক পকেটেই ছিল।

‘ঠিকাছে। ধন্যবাদ। এবার বলো সমস্যা।’

যুবক তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কেডসের ডগায় কাদামাটি। বৃষ্টি মাড়িয়ে এসেছে বলে জিন্সের তলার দিকটা ভেজা। এরপর মাথা নিচু করেই খুনের কথাটা বলল মনিরুল।

‘আমি একজনকে খুন করেছি। কিন্তু…আবার.. না মানে.. আমি আসলে খুন করি নাই। খুন করেছে আরেকজন।’

ডা. তৈয়ব সতর্ক হলেন। টানটান হলো মাংসপেশী। যেন ভয়ানক কিছু ঘটবে। মনিরুল পরের কথাটা বলল মাথা আরো নিচু করে।

‘ভাই, আমি স্যরি। কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয়নি। কিন্তু কথা সত্য। খুন আসলে আমিই করেছি।’

‘মানে আপনার হাতে কেউ মারা গেছে?’

‘না ভাই। যা বলেছি তাই। খুনই। ইচ্ছা করে নিরপরাধ মানুষকে খুন করলে যেমন হয়, ওই রকম।’

‘হুমম। ইন্টারেস্টিং।’

‘মনির, আমাদের সবার মাথাতেই কেউ না কেউ কথা বলে। এই যেমন এখন আমার মাথার ভেতর পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি কেউ একজন বলছে পুলিশে খবর দাও পুলিশে খবর দাও! কিন্তু আমি তার কথা শুনবো না ঠিক করেছি। আমি তোমার কথা শুনবো। তুমি বলো।’

‘এই কথা সেই কথা না ভাই। আপনি কী বুঝাইতে চাইতেছেন আমি জানি। কিন্তু আমার মাথার ভেতর আরেকজন আছে। সে আমি না।’

‘সে এখন কোথায়?’

‘সে ঘাপটি মেরে বসে আছে। চুপচাপ। আমার আর আপনার কথা শুনছে।’

‘শোনারই কথা। কারণ সে তো তোমার মাথাতেই আছে। অন্য কোথাও থাকলে তার কথা শুনতে যন্ত্রপাতি দরকার হতো।’

‘ভাই, আমি বোধহয়  আপনার সময় নষ্ট করছি।’

‘মোটেও না। গত পাঁচদিনে তুমি আমার একমাত্র পেশেন্ট। নগদ ছয়শ টাকাও দিলে।

‘কিন্তু আমি খুন করেছি শুনেও আপনার ভয় লাগছে না?’

‘একটু লেগেছিল। এখন ভয় কেটে গেছে। কিন্তু তোমার খুন করা সমস্যার সমাধান আমার কাছে নেই।’

‘কিন্তু.. ভাই খুন তো আমি করি নাই। এটাই সমস্যা।’

ডা. তৈয়ব একটা কিছু বলতে গিয়েও বললেন না।

‘ভাই আমি উঠি তাহলে। আমি আপনাকে বুঝাইতে পারলে আসবো আবার।’

‘তোমার সমস্যার জন্য আপাতত এই ওষুধটা খেতে পারো। আর তুমি কি চা টা কিছু খাবে? চাইলে সিগারেটও খেতে পারো। আমি তো মনের ডাক্তার, শরীরের না।’

‘না ভাই, টুকটাক চা খাই। আর কোনো বদভ্যাস নাই।’

‘কিন্তু তোমার গা থেকে সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছি আমি।’

‘ওইটা আমি খাই না।’

‘কে খায়? মাথার ভেতরের লোকটা?’

মনিরুল জবাব দিল না। আহত দৃষ্টি। নিজের কেডসের দিকে। ডাক্তার তৈয়ব আখন্দের উপস্থিতি এখন আর তার কাছে মুখ্য নয়।

খসখস করে কাগজে কলম চালালেন ডা. তৈয়ব।

‘এটা খাও কয়েকদিন। দেখো তারপর।’

‘ঘুমের বড়িতে কাজ হবে না। কম খাই নাই। খেয়ে পড়ে ছিলাম বিছানায় অনেক দিন। আচ্ছা তবু দেন।’

‘কাজ হবে কি হবে না তারচেয়েও বড় কথা তুমি এসেছো, তোমাকে তো একটা ওষুধ দিতে হবে। অবশ্য আমার ভেতর আবার কেউ একজন বলছে তোমার সমস্যাটা গুরুতর। তুমি কি আবার কাউকে খুন টুন করতে যাচ্ছো নাকি?’

‘ভাই আমি আসি।’

‘হুম। এককাজ করলে হয় না। তুমি কাল আবার আসো।’

যুবকের চোখের পাতা ঘনঘন নড়লো। ডান হাত চলে যাচ্ছিল থুতনির দিকে। তার আগেই আশ্বস্ত করলেন ডা. তৈয়ব আখন্দ।

‘ফি নিয়ে ভাবতে হবে না। একবার দিয়েছো তাতেই হবে। পরে না হয় সমস্যার সমাধান হলে পরে দেখা যাবে।’

‘সমাধান হলে ছয় হাজার টাকা দিবো। দরকার হয় দশ হাজার দিবো। আমার একটা ডিপিএস আছে।’

‘ঠিকাছে। এখন তাহলে বাসায় যাও। ওষুধ খেলে খাও না খেলে নাই। কাল আসো সকাল সকাল।’

‘জ্বি, আমি কাল আসবো। আপনাকে একটা গল্প বলবো।’

‘এখনই বলো।’

‘না ভাই। এখন যাই। কাল আসবো। ও হ্যাঁ, ভাই কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলি। আপনি একটু.. আপনি একটু সাবধানে থাকবেন।’

 

ডা. তৈয়বের মনে মনে ভাবলেন, মনিরুল ঘর থেকে ঝড়ের বেড়ে চলে গেল। আমাকে সে শাস্তি দিয়ে গেল। কিন্তু তার উপর রাগ করা যাচ্ছে না। আমার মনের মধ্যে গল্পের হুক গেঁথে দিয়ে গেছে।

 

একই দিন রাতে মনিরুল অথবা লতিফের সঙ্গে ডা. তৈয়ব আখন্দের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ

দুপুরে চেম্বারে লম্বা ঘুম দিয়েছেন ডা. তৈয়ব। একটু আগে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির শব্দে ঘুম ঘুম ভাবটা সহজে কাটছিল না। কলিং বেল শুনে বিছানা ছাড়তে বাধ্য হলেন। ঘড়িতে রাত আটটা। গলিঘুপচির ভেতর চেম্বার। আয় রোজগার কম। কর্মচারী নেই। দরজার ওপাশে মনিরুল দাঁড়িয়ে।

‘স্লামালেকুম স্যার! কেমুন আছেন!’

‘হুম। আসো।’

‘হে হে। স্যারের লগে মনে হয় আইজকা সকালে আমার একটু বাতচিত হইসে।’

ঘুমের ভাব এখনও পুরোপুরি কাটেনি ডা. তৈয়বের।

‘তা তো বটে। ভুলবো কেন। আমার তো ভুলে যাওয়া রোগ নেই। আমি হলাম তোমার মনের ডাক্তার।’

ড. তৈয়ব আখন্দ ভয় পাচ্ছেন। বৃষ্টির মাঝে আরেক ঝড়ের সংকেত। মাংসপেশী সিঁটিয়ে যেতে চাচ্ছে। অবচেতন মনটা গর্ত খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইঁদুরের মতো! বুকের ভেতর চাপ। চাপ থেকে টনটনে ব্যথা। ডা. তৈয়ব গ্লাসে পানি ঢাললেন। খেলেন না। কোনো ভয়ানক খুনির সামনাসামনি থাকলে কি ঠিক এমন টেনশনই লাগে?

‘স্যার কি ভয় পাইতেসেন?’

ডা. তৈয়বের ভয়ের প্রথম কারণ মনিরুল তাকে স্যার বলে ডাকছে। সকালে বেশ সংযত ছিল ভাষায়। মোলায়েম সুরে ভাই বলে ডেকেছে। এখন স্যার ডাকছে। সহজেই ডাকছে। স্যার ডাকার সঙ্গে তার খুন করার একটা যোগসাজশ থাকতে পারে। সিরিয়াল কিলার নয় তো?

‘স্যার ভয়ের কিসু নাই। আপনি ডাক্তার মানুষ। মনের ডাক্তার। আপনার লগে পাঙ্গা লওনের সাহস আমার কেমনে হইবো কন।’

‘তুমি কী চাও বলতো। অ্যাকটিং করছো কেন আমার সঙ্গে?’

‘হেহে কী কন স্যার। অ্যাকটিং করমু ক্যান। আমি তো আমিই। আমি লতিফুল ইসলাম লতিফ। আপনারে আমি সকালে উল্টাপাল্টা কইসি। এই দেখেন স্যার আমার আইডি কার্ড।’

মনিরুল অথবা লতিফ নামের যুবকের হাত থেকে আইডি নিলেন। ন্যাশনাল আইডি কার্ড নয়। একটা সিকিউরিটি কোম্পানির। তাতে পরিষ্কার লতিফুল ইসলাম লেখা।

‘রাইতে এদের এখানে কাম করি। গার্ডের কাম। আমার আবার ভয়ডর কম তো।’

‘দিনে কী করো?’

‘দিনে কী যে করি। খেয়াল থাকে না। মনে হয় ঘুমাই আর স্বপ্নে দেখি।’

‘কী স্বপ্ন দেখো? ডেলিভারি দিচ্ছো?’

‘কী তাইজ্জব স্যার! জানলেন কেমনে! মনে হয় আমি আপনারে সক্কালে কইসি। আইজকা আপনার কাছে আসছিলাম এইটা আমার মনে আছে।’

‘এখন কেন এসেছো?’

ডা. তৈয়ব ভয় পাচ্ছেন। তিনি মনের ডাক্তার। গোয়েন্দা-পুলিশ না। সামনে থেকে খুনি বিদেয় হলে বাঁচেন।

‘স্যার, কিছু মনে না করলে হে হে, আমি গরিব মানুষ। দুই চাইর টাকা বেতন পাই। সকালে কী কী সব বলে আপনারে আমি কিছু টাকা..।’

‘এই নাও।’

টাকাটা ভাঁজ করাই ছিল। লতিফ সেটা গুনে দেখলো না। ভাঁজ করা অবস্থাতেই পকেটে ঢোকাল ভিজিটের ছয়শ টাকা।

‘হে হে স্যার, থ্যাংক ইউ স্যার। বিরাট উপকার করলেন। এবার আরেকটা বুদ্ধি দেন স্যার। এই যে দিনের বেলায় আমার মাথা কাম করে না। এইটার কারণ কী হইবার পারে। আর স্যার, এই যে আপনার লগে বাতচিত করতাসি, আমার মাথার ভিতরে সারাক্ষণ আরেকজন গুটুর গাটুর করবার লাগসে। মনে হয় জানি মাথার ভিতর ফোক ঢুকছে। মন চায় ওরে ধইরা গলা টিপ্পা মারি। কিন্তু পারি না। আপনে একটা ওষুধ দেন স্যার।’

‘মাথার ভেতর কে কথা বলে? মনিরুল?’

‘কী তাইজ্জব। আপনি হের নামও জানেন দেখি। আইচ্ছা স্যার, সক্কালে আমি আপনারে আর কী কী কইসি কন তো? এককাম করেন স্যার, একটু চা খাওয়ান। আর আপনার টেবিলের উপরে ওইটা কি বেনসন সিগারেট? একটা দেন। খাই।’

ডা. তৈয়ব সিগারেট এগিয়ে দিলেন। লাইটার বা দিয়াশলাই খুঁজছেন হন্যে হয়ে। টেবিলের ফাইলপত্র কাগজ সব এলোমেলো করে ফেলেছেন। লতিফ সিগারেট হাতে বসা। সিগারেট ধরাতে না পারায় তার মেজাজ কী ক্রমে খারাপ হচ্ছে? এসির বাতাসেও কপালে ঘাম জমছে ডা. তৈয়বের।

‘স্যারের রান্নাঘরটা কুন দিকে? দেখি খুঁইজা দেখি।’

‘চেম্বারে রান্না ঘরতো নেই। তুমি বসো আমি ম্যাচ নিয়ে আসছি।’

‘ছি স্যার কী বলেন। যে বৃষ্টি বাইরে। আইচ্ছা থাকুক। পরে খামু। পকেটে রাইখা দেই।’

বড় বড় করে শ্বাস নিলেন ডা. তৈয়ব। এই ঘোর বরষায় চেম্বারে তিনি যদি মরে পড়ে থাকেন সেই খবর বাসায় যেতে যেতে গভীর রাত হয়ে যাবে। তারপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। কেটেকুটে একাকার করে ফেলবে।

‘স্যারের কি শইল খারাপ?’

‘না না তো।’

‘স্যার আমি আসল কথাটা বলি এইবার। আপনে আমারে ডরাইতেসেন। কারণ হইলো সকালে আমি আপনার উল্টাসিধা কইসি। কইসি যে আমি খুনি। রাস্তার এক পাগলিরে গলা টিপে মারসি। তাই না স্যার?’

‘না, মনিরুল এসব বলেনি আমাকে।’

‘আরে রাখেন মনিরুল! আমার নাম লতিফ! লতিফুল ইসলাম।’

‘হুম।’

‘তো স্যার, সক্কালের কথা মাথায় রাইখা লাভ নাই। আমি কোনো খুন টুন করি নাই। করসে আমার মাথার ভিতরের ফোক। আমি না। আমারে ডরাইয়া আপনের কাম নাই। আমি মানুষ একটু খারাপ। কিসু মিসু বদভ্যাস আছে। কিন্তু রাস্তার পাগলিরে আমি মারমু কোন দুঃখে কন। এখন আপনি আমারে উপায় বাতলাইয়া দেন, এই ফোকটারে আমি বাইর করি কেমনে।’

ডা. তৈয়ব লতিফের চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মন লতিফের কথা বিশ্বাস করতে চাইছে। কিন্তু এটা লতিফের চালাকি হতে পারে। ডা. তৈয়ব আখন্দ কোনো ফাঁদে পা দেবেন না বলে ঠিক করলেও লতিফের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারছেন না।

‘শোনো লতিফ, আমি বাসায় যাব। তুমি সকালে আসো। আমি তোমার বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখি। তারপর দেখি কী করে মাথার পোকা তাড়ানো যায়।’

লতিফ স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ডা. তৈয়বের দিকে। এরপর ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

‘ঠিকাছে স্যার। রাইতে তো ডিউটি। সকালে না, আমি রাইতেই আসুম। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। ডরাইয়েন না। সিগারেটটা শেষ করে উঠতাসি।’

লতিফ এবার তার বুক পকেটে থেকে লাইটার বের করে সিগারেট ধরালো। তারপর হুসস করে ধোঁয়া ছাড়লো। পকেটে লাইটার থাকার পরও কেন সে গোপন রেখেছে? ডা. তৈয়ব ভাবছেন। খেই পাচ্ছেন না। তারও লতিফের মতো সিগারেট খেতে মন চাইল। কিন্তু তিনি খাবেন না।

 

পর দিন। মনিরুলের সঙ্গে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সাক্ষাৎ

মুখোমুখি ঝাড়া কয়েক মিনিট বসে দুজন। এখনও কথা শুরু হয়নি। মনিরুল এবার তার স্পঞ্জের স্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে। রাতে ঘুম হয়নি। চোখে কালসিটে। একটু পর পর হাই তুলছে।

‘তখন আমার বয়স কম। ছোটবেলার কথা। অত গরিব ছিলাম না। তবে মা-বাবায় শুধু ঝগড়া করতো। একদিন মা চলে গেল। বাবা নেশা করতো। তবে মা যাওয়ার পর নেশাও ছেড়ে দিল আচমকা। আমার সঙ্গে কথাটথা বলতো না। খাবারের সময় খাওয়া, আর স্কুলের টাইমে স্কুল। আমি নিজে নিজে খেলতাম। খেলা আবিষ্কার করছিলাম একটা। সেটা হইলো, আমি আর আমার বন্ধু লতিফ।’

‘কাল্পনিক বন্ধু?’

‘জ্বি। মনে মনে বন্ধু।’

‘আমি নায়ক আবার আমি ভিলেন। আমি একবার লতিফ, আমিই আবার মনিরুল। খেলাটা নেশার মতো হয়ে গেল। আমি দিনে দিনে মজা পেতে লাগলাম। লতিফের কাজ হলো একটা ঘটনা ঘটাবে। আমি গিয়ে আবার সেই ঘটনার রেশ কাটাবো কিংবা একটা কিছু করবো। একদিন লতিফ আমার স্কুলের এক ক্লাসমেটকে মারে। বেদম মার। কোনো কারণ ছাড়াই। পরে আমি মনিরুল গেলাম তার কাছে। প্রথমে আমারে সে দেখে পালাতে চাইছিল। কিন্তু আমি তার কাছে মাফ টাফ চাই। চকলেট আর আইসক্রিমও খাওয়াই। ওই ছেলে আমার খেলাটা ধরতে পারে নাই। সে সবাইকে বলে দিল যে আমি পাগল।’

‘তারপর?’

‘আমি খেলাটা চালু রাখি। লতিফ অকামগুলা করে। আমি মনিরুল গিয়ে ভাল কাজ করি। কিন্তু মজার কথা মনিরুলকে কেন জানি কেউ ভাল চোখে দেখতো না। আমি যখন লতিফ তখন আমার অনেক পাওয়ার। আমি দুইটা ভালো কথা বললেই আমারে তাড়ায় সবাই। লতিফকে সবাই ভয় পাইতো।’

‘তুমি কখন বুঝলে যে লতিফ তোমাকে ক্যাপচার করেছে। মানে লতিফ তোমাকে বা তোমার এটা অংশ দখল করে ফেলেছে।’

‘আমি জানি না। লতিফুল ইসলাম আমারই দেওয়া নাম ছিল। মাঝে অনেক অনেক দিন লতিফ লতিফ খেলা বন্ধ রাখছিলাম। যত যাই হোক, আমি মনিরুলের ক্ষমতা বেশি ছিল। লতিফ দুষ্ট প্রকৃতির ছিল, কিন্তু মনিরুলের সঙ্গে কোনোদিন সুবিধা করতে পারে নাই। কিন্তু আচমকা একদিন সে আবার মাথার ভেতর কথাবার্তা শুরু করে। ততদিনে আমার পরিবারে আর কেউ নাই। আমি একা। অবশ্য আমার একটা প্রেমিকা ছিল।’

চায়ে চুমুক দিলেন ডা. তৈয়ব। মনিরুলের সামনে চা ঠা-া হচ্ছে। তার ভ্রƒক্ষেপ নেই।

‘পরে তাকে বিয়ে করি। প্রেমের বিয়ে। বৌয়ের নাম মালতি। হিন্দু মেয়ে। ওসব জাতপাত বাছবিচার আমার নাই। কিন্তু সে ভয় পাইত। তার আবার সমাজ সংসার ছিল। আমি না হয় উচ্ছন্নে গেছি।’

‘মালতি কি বেঁচে আছে?’

মনিরুল চুপ।

‘তারপর?’

‘মালতির সঙ্গে আমার অনেক দিন ভালোই কাটে। কিন্তু এরপর লতিফুল ইসলাম আবার ফিরে আসে আচমকা। আমি যতই কই যে খেলা শেষ। কিন্তু লতিফ যেতে চায় না। ভূতের মতো ঘাপটি মেরে থাকে।’

‘লতিফকে তুমি ভয় পেতে?’

‘আপনি ভাই এমনভাবে জিজ্ঞাস করছেন যেন লতিফ আসলেই আছে। লতিফ নামে তো কেউ নাই। তখনও ছিল না। এখনও নাই। আছে আমার মাথায়। কিন্তু তখন সে আমার পিছু ছাড়ে না। সে শুধু মালতিকে নিয়া তামাশা করে। আমাকে বলে মালতিকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে। আমি বলি- না তা সম্ভব না। আমি ওকে ভালবাসি।’

‘কিন্তু লতিফ চায় তুমি অন্য কারো সঙ্গ পাও?’

‘জ্বি। লতিফের বিষয়টা অইরকমই। আমি মনে মনে ভাবতাম লতিফ একটা লম্পট। আমি ভাল। লতিফের সঙ্গে এটা নিয়ে আমার ঝগড়া চলতে থাকে। মালতি টের পায় না। পাওয়ার কথা না। কারণ ঝগড়া চলে মনে মনে।’

‘এরপর একদিন লতিফ মালতিকে গলা টিপে মারে?’

মনিরুল কিছু বলে না। ‘কী করবো ভাই। মাথার ভেতর পোকা।’

‘মনিরুল শোনো- আমাদের সবার মাথার ভেতরই পোকা আছে। ভালো পোকা খারাপ পোকা। যখন কেউ খারাপ কাজ করে, তখন তার ভেতর সেই ভালো পোকাটা একটা অন্ধকার ঘরে আটকা পড়ে, খাবি খায়। আমরা তখন পোকাটার কথা ভুলে যাই। আবার কোনো এক কারণে সেই পোকাটা মুক্ত হয়ে যেতে পারে। সমস্যাটা হলো তোমার মাথার দুটো পোকা আগে থেকেই নিজেদের আলাদা ভাবতে শুরু করেছে। তাদের একটাকে বাক্সবন্দি করতে হবে। তারপর বুঝতে হবে সেটা ভাল পোকা নাকি খারাপ। খারাপ হলে তো হলোই। আর যদি ভালো হয় তাহলে পুরো ঘটনা আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’

‘ভাই মালতির জন্য এখনও আমার মায়া লাগে। অনেক কান্নাকাটি করসি। এখন আর কাঁদি না যদিও, কিন্তু আমার আবার ভয় লাগতাসে।’

‘লতিফ আবার খুন টুন করবে এই ভয়?’

‘জ্বি। আমার ভয় লাগে। আমারে না জানি আবার খুন করে ফেলে!’

 

ডা. তৈয়ব আখন্দের দুঃস্বপ্ন ও বিভ্রান্তি

‘আমি ডা. তৈয়ব আখন্দ। কেসটা নিয়ে ভেবেছি। এর একটা সমাধান আছে। মনের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। মনিরুলকে বাঁচাতে লতিফকে সরাতে হবে। ও একটা মনের ভাইরাস।’

কথাগুলো এ নিয়ে বিভিন্নভাবে নিজেকে বলেছেন ডা. তৈয়ব আখন্দ। কিন্তু ভাইরাস তাড়ানোর পদ্ধতি তার মাথায় আসেনি।

‘স্যার! আপনি দেখি ভালই তামশা বানাইয়া রাখসেন! পাকের ঘরটা কুনদিকে কন দেখি। ছুরি বটি কিছু আছে? একটা আম পাইসি। আম কাটন দরকার। এরপর গরম গরম চা।’

‘ওহ.. মনিরুল.. না না তুমি লতিফ। কখন এলে? টেরই পেলাম না।’

‘বাহ, স্যার দেখি আজকে আমারে আর ডরাইতেসেন না। মাথার ফোকটা তো আপনের লগে মজমা বসাইয়া দিসে একেবারে।’

‘সিগারেট খাবে?’

‘নাহ আইজকা আর টেস্ট পাইতেসি না। মাথার ফোকটা ডিসটাব দিতেসে।’

‘লতিফ, তুমি মালতিকে খুন করেছো?’

ডা. তৈয়বের চোখ বন্ধ। ঘুম ঘুম আসছে। ঘুমের ঘোরে যা মন চায় প্রশ্ন করার মাঝে এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন তিনি।

‘হেহেহে। স্যার, ফোকটা সরাইয়া দেন কুনোমতে, সব ক্লিয়ার। কোনো খুনটুন হয় নাই। হইলেও ধরেন ওইটা তেমন কিসু না।’

‘তুমি কি খারাপ মানুষ?’

‘তা একটু আধটু তো সবাই খারাপ, কী কন।’

‘নাহ। আমি তো ভাল। কী চাও তুমি?’

‘পাকের ঘরটা কুনদিকে স্যার?’

‘তুমি কি আমাকেও খুন করবে?’

‘জ্বি স্যার। আপনারে খুন কইরা আপনারে আমি বাঁচাইয়া দিমু। শুধু পাকের ঘরটা দেখাইয়া দেন। ধার দেওয়া বটি হলে চলবে। তা না হইলে কষ্ট কইরা আবার গলা টিপতে হইবো। হে হে।’

ডা. তৈয়ব হাতের ইশারায় পাকের ঘরটা দেখালেন। হাত নড়তে চাইছে না। বেশ ভারি ঠেকছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। ধড়ফড় করে উঠে বসলেন চেম্বারের এক কোণে পাতা বিছানা ছেড়ে। কলিং বেল। লতিফ নিশ্চয়ই!

‘কেমুন আছেন স্যার?’

‘তুমি আবার কেন এসেছো। আমি তো আজ সকালে তোমার কাছ থেকে ফি নেইনি।’

‘আমি স্যার আসতাম না। কিন্তু মনিরুল বদমাইশটা আমারে শান্তি দিতাসে না। বেজন্মাডা ভালমানুষি দেহাইতেসে। মাথায় সারাক্ষণ খালি এটা ওটা। আমি স্যার একা মানুষ। বদভ্যাস একটু আধটু থাকবার পারে।’

‘হুম। আমার কাছে কী!’

‘স্যার আমারে এত ডরান ক্যান। আপনারে একটু সাবধান করতে আসছি। সকালে আমার মাথার ফোকটা আপনার লগে গুটুর গাটুর করে, ভালোমানুষি দেখায়।’

‘কথা শেষ হয়েছে? হলে বিদেয় হও।’

‘জ্বি স্যার। কথা শেষ। আপনার পাকের ঘরটা কুন দিকে। ছুরি বটি কিছু একটা দরকার।’

ঠা-ায় জমে গেলেন ডা. তৈয়ব আখন্দ। চেম্বারে রান্নাঘর নেই। ছুরি বটিও নেই। তবু তার ভয় কাটছে না। তাকে অনেকটা সরিয়ে দিয়েই ঢুকে পড়লো লতিফ। এদিক ওদিক তাকাল। জোর করে হাসার চেষ্টা করলো। শব্দ বের হলো না। পকেট থেকে সিগারেট বের করে নাকের কাছে শুঁকলো। তারপর আবার রেখে দিল।

‘আপনার জন্য একটা কাঁঠাল আনছি। খুইলা দিয়া যাই। আপনে মনে হয় না কাঁঠাল ছিলতে পারবেন।’

‘কাঁঠাল লাগবে না। তুমি যাও।’

‘আইচ্ছা ঠিকাছে যাই। কাঁঠালটা রাইখা গেলাম। তয় মন চাইতেসে আপনারে মার্ডার করি। কিন্তু এখন করুম না।’

লতিফ চলে যেতেই মোবাইলটা খুঁজতে লাগলেন ডা. তৈয়ব। ‘পুলিশকে জানানো দরকার বিষয়টা। কিন্তু পরে যদি মনিরুল বা লতিফ দুজনই অস্বীকার করে? করতেও পারে।’ ভাবলেন ডা. তৈয়ব।

ডা. তৈয়ব কাউকে ফোন করলেন না। তার কানে বাজতে থাকলো লতিফের কথা। সাবধানে থাকতে হবে।

 

প্রেসক্রিপশন

দুই দিন ধরে মনিরুল বা লতিফ কারোরই দেখা নেই। বসে বসে খাতায় নকশা আঁকছেন ডা. তৈয়ব। উপরে বড় করে শিরোনাম লেখা ‘মনিরুল-লতিফের মন খেলা’।

লক্ষ্য: মনিরুল থেকে লতিফকে বাদ দিতে হবে।

পদ্ধতি: যেভাবে লতিফের জন্ম সেভাবে বা অন্য কোনোভাবে তাকে সরাতে হবে। মনিরুলকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। মনিরুলকে নিজের মতো করে অন্য আরেকটি চরিত্র তৈরি করতে হবে। যার কাজ হবে লতিফকে সরানো।

ডা. তৈয়বের মনের বক্তা উচ্চস্বরে হেসে যাচ্ছে। কারণ তিনি ভাল করেই জানেন, এই মনিরুল আর লতিফের কেস নিয়ে তিনি নিজেও খেলায় মেতেছেন। নতুন এ মনখেলার নিয়মও তিনি নিজের মতো করে বানাচ্ছেন। কলিংবেল বাজলো। ডা. তৈয়ব তার মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। কলিংবেল বাজুক। তার তাড়া নেই।

‘স্যার ভালো আছেন?’

তাকালেন ডা. তৈয়ব।

‘স্যার আমি মনিরুল। আমি জানি আপনি ভয় পাচ্ছেন। কারণ আমি বুঝতে পারছি যে লতিফও আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসে।’

ডা. তৈয়ব ভাবছেন মনিরুল আচমকা তাকে স্যার বলে ডাকছে কেন। তাকে একটু অবশ্য খুশি খুশি মনে হচ্ছে।

‘স্যার আমি আপনাকে খুশির খবর দিতে এসেছি। আমি বুদ্ধি পেয়ে গেছি স্যার! লতিফকে আটকানোর বুদ্ধি!’

‘বাহ! তাই নাকি! কী সেটা!’

‘স্যার টের পেয়েছি সে কোথায় কোথায় যায়, কী করে, কী খায়। সব বন্ধ করে দিব স্যার। সন্ধার পর তালা আটকা ঘরে বসে থাকবো। একটা ছেলে ঠিক করেছি, যে তালা আটকে চলে যাবে। সকালে আবার খুলে দেবে। ঘরের ভেতর শুধু খানা-পিনা থাকবে।’

‘আচ্ছা। কিন্তু যদি একই চালাকি লতিফও করতে চায়। তালা ভেঙে বের হওয়া তো বিষয় না। চিৎকার চেঁচামেচি করলে মানুষ এসে খুলে দিয়ে যাবে।’

‘জ্বি অবশ্যই করবে। এই জন্য আপনার কাছে আসা। একটা বুদ্ধি দেন।’

‘লতিফকে আটকাতে হবে মনের খেলা দিয়ে। লতিফ তোমার কল্পনার মানুষ। কল্পনায় তৈরি। কল্পনা দিয়ে তাকে আটকাতে হবে বুঝলে?’

‘স্যার এই নেন এক হাজার। আপনার ফি!’

‘আগে কাজটা শেষ হোক।’

‘না স্যার। নেন।’

ডা. তৈয়ব টাকাটা টেবিলের ওপর রাখলেন।

‘তুমি যখন প্রথম লতিফকে তৈরি করেছিলে, তখন কী কী খেলা খেলতে?’

‘তেমন কিছু না স্যার। ওই যে লতিফ হয়ে ছোটখাট চুরি করতাম, কাউকে মারতাম, আর পরে আমি মনিরুল হয়ে চুরির মাল ফেরত দিতাম।’

‘ঠিকাছে এখন তোমাকে একজন পুলিশ বানাতে হবে, কল্পনায়। যে লতিফকে ধরে নিয়ে যাবে। বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হবে। কারণ সে শুধু ছোটখাট চুরি নয়, খুনও করেছে।’

‘জ্বি স্যার! খুবই ভাল হয় তাহলে।’

‘ধরো সত্যি সত্যিই পুলিশ আসলো। এসে লতিফকে ধরে নিয়ে গেল।’

‘জ্বি স্যার।’

‘তারপর তুমি মুক্ত!’

‘অবশ্যই স্যার!’

‘তুমি চোখ বন্ধ করলেই তো সব তৈরি হয়ে যায়, তাই না?’

‘জ্বি স্যার!’

‘তাহলে চোখ বন্ধ করে তৈরি করে নাও একজন পুলিশ।’

‘জ্বি স্যার!’

ডা. তৈয়বের চেম্বারের দরজা খোলা। একজন পুলিশ ভেতরে ঢুকল।

‘ঠিকাছে মনিরুল এবার তুমি লতিফ হয়ে যাও।’

‘জ্বি স্যার হইয়া গেছি। স্যার! এইডা আফনে কী করতাসেন স্যার! স্যার আফনে ভুল করতাসেন! আমি লতিফুল ইসলাম। লতিফ আমার নাম। স্যার আফনে মনিরুলের কথা শুইনেন না স্যার!’

পুলিশ এগিয়ে এসে হাতকড়া পরাল লতিফকে। তারপর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল বাইরে।

 

পরদিন রাত ১১টা। দীনবন্ধু রোডের মোড়ের চায়ের দোকানে চা খাচ্ছে মনিরুল। তার মেজাজ বেশ ফুরফুরে। পাখির মতো হালকা লাগছে নিজেকে। চালাকিটা কাজে আসায় আজ তার দিনটাই অন্যরকম আনন্দে কেটেছে। ‘চা আর সিগারেট দিন।’ চায়ের দোকানি এক মধ্যবয়সী নারী। মনিরুল আড়চোখে তাকে দেখছে। তার মতে, খুন করার জন্য এটা আদর্শ ফিগার নয় যদিও, তবু লতিফুল ইসলামের বিদায়টা উপভোগ করতে চায় ও। চা খাওয়া শেষে পকেটে হাত দিয়ে অভিনয় করে ‘মানিব্যাগ আনিনি। বাসা এখানেই। নিয়ে আসছি।’ দোকানি মহিলা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘জলদি যান! আমি বইসি।’ এরপর দীনবন্ধু রোডের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ৬৩ নম্বর বাড়িটার দিকে হাঁটা দেয় মনিরুল। শিকার ঠিক করার পরই খুন করার সরঞ্জাম আনতে বাসায় যায় ও। পুরনো এ বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকে মনিরুল। এই রোডের এটাই শেষ বাড়ি।

dhrubonil@yahoo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!