প্রেমের গল্প : মালতী : লিখেছেন : ধ্রুব নীল
চেনটা দশ ভরি হবে। বিক্রি করলে ভরিতে সত্তর হাজারের মতো পাবে। সেই হিসেবে সাত লাখ। কম না। কষ্ট করে চললে নিপু আর রাকিব অনায়াসে দুই বছর কাটিয়ে দিতে পারবে। মা আবার হার্ট অ্যাটাক করবে না তো? অবশ্য নিজের মেয়ে গয়না চুরি করেছে শুনলে না-ও করতে পারে। এ গয়না তো মেহেরুন্নেসা তার মেজো মেয়ে রেনুর জন্যই রেখেছিলেন।
রেনুর বান্ধবী নিপু। এখন বান্ধবী ডাকার চল উঠে গেছে। সবাই বন্ধু। অবশ্য নিপুকে বান্ধবীই ভাবে রেনু। সেই নিপুর পলান্তি বিয়ে হবে কাল। ভোরে বাকশোপ্যাঁটরা নিয়ে চলে আসবে কাজী অফিসে। রাকিবকে ধরে বেঁধে চাকরির টোপ ফেলে রাজি করানো হয়েছে। রাকিবের কাজ হবে ঘরে বসে এটা ওটা ডিজাইন করা। মাসে ত্রিশ হাজার টাকা পাবে। পুরোটাই রেনুর সাজানো চাকরি। মাসে ত্রিশ করে দুই বছরে লাগবে সাত লাখ বিশ হাজার। শর্ত হলো দুই বছরের মাঝেই আরেকটা চাকরি জোটাতে হবে রাকিবকে।
‘আমার বান্ধবীর বিয়ে’। কথাটা রেনু সকাল থেকে মনে মনে বলে যাচ্ছে। এখন রাত বারোটা। বাতি নিভিয়ে শুয়ে আছে। এখন মনে মনে রেনুর সঙ্গে কথা চালানো যায়।
‘ও বান্ধবী, তুই চলে যাবি?’
উত্তর আসে না।
‘তোকে বলেছিলাম না, তোর জন্য সব করতে পারি। দেখলি, মায়ের গয়না চুরি করলাম। তোদের আর চিন্তা নাই। তোকে নিয়ে কত ভাবি আমি।’
মনের কথার উত্তর আসে না। তবে কল এসেছে মোবাইলে।
‘হুঁ।’
‘বিয়ের সাক্ষী ম্যানেজ করেছিস?’
‘আছে কয়েকজন। তবে আমি সাক্ষী টাক্ষি হবো না। আমার কিছু মনে থাকে না। পরে আদালতে গেলে সব অস্বীকার করবো।’
‘কী বলিস। কোর্ট-কাছারি কেন এর মধ্যে?’
‘আসতেই পারে। তোর বাবা অপহরণের মামলা করে বসলে?’
‘আমার বয়স তো আঠারোর বেশি! কী বলিস! ওকে পুলিশে ধরবে?’
‘হি হি। ভয় দেখালাম। অবশ্য আমি চাইলে ধরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তোর দিকে তাকিয়ে দেব না। তোর জন্য…।’
‘কিন্তু আমরা থাকবো কোথায়, খাবো কী! আমার তো এখনই খিদা লেগে গেছে।’
‘আইসক্রিম খা। কাল এক বক্স দিলাম না? আর রাকিব মিয়া তোকে আইসক্রিম না খাওয়ালে আমাকে ফোন দিবি। আমি আইসক্রিম নিয়ে যাব। শুধু তুই খাবি। ও চেয়ে চেয়ে দেখবে। এরপর আমি চলে গেলে সে তোকে আইসক্রিম খাওয়াবে। নিজেও খাবে। বিশেষ কায়দায় খাবে।’
‘আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না রে। কীভাবে কী খাবে।’
‘বুঝতে পেরেছিস ঠিকই। এখন ভীতুর ভান করছিস। তোর ভান আমি বুঝি। তোর সব আমি বুঝি।’
আচমকা চুপ হয়ে গেলো রেনু। রাজ্যের বিষণ্নতা হিমালয়ের মতো চেপে বসেছে বুকে। জানালা দিয়ে আসা এক পশলা ভেজা বাতাস এর জন্য দায়ী। উঠে গিয়ে কপাট বন্ধ করে দিল রেনু। আবার খুলে দিলো। যেন যেচে মন খারাপকে আমন্ত্রণ জানালো এবার। আসুক যত খুশি দুঃখ আমার। একজন তো সুখি হবে।
‘অ্যাই। সকাল সকাল উঠতে হবে। সকালে কাজী অফিসে নাকি ভিড় কম।’
লাইন কেটে দিল রেনু। আপাতত চোখ বুঁজে গায়ে বিষণ্ন বাতাস মাখছে।
‘কাল মালতীর বিয়ে। কাল মালতীর বিয়ে।’ থেমে থেমে বলল রেনু।
নিপুকে অনেক আগেই মালতী নামটা দিয়েছিল। অবশ্য কোনোদিন ডাকা হয়নি।
দেড় বছর পরের কথা। নিপুর মাথাটা কঠিনভাবে বুকে জড়িয়ে ধরেছে রেনু। শ্বাস নেওয়ার জন্য ঢিলও দিচ্ছে না।
‘গাধির মতো কাঁদছিস কেন? তোর কান্না যে মেকি আমি জানি। কান্না বন্ধ করে চা বসা।’
তিন দিন আগের সন্ধ্যা। টিকাটুলির এক গলিতে ছিনতাইকারীর সামনে পড়ে রাকিব। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করার আগেই তার বুকে চকচকে দশ ইঞ্চি ফলার ছুরিটা বিঁধে যায়। স্পট ডেড। নগদ এক লাখ টাকা পাওয়ার আনন্দে মানিব্যাগের কথা ভুলে যায় ওই ছিনতাইকারী।
চা বসাতে বললেও নিপুকে ছাড়ছে না রেনু। তবে কান্না বন্ধ হয়েছে। সত্যি কথা হলো, রাকিব মারা যাওয়ার দিন থেকেই নিপুর মনে হলো সে পাখি হয়ে গেছে। ডানা গজালেই উড়তে পারবে।
বিয়ের বছর পেরোতেই রাকিবের অন্য মেয়ের সঙ্গে প্রেম হয়। ডিভোর্সের কথা বললেই নিপুকে মারধর শুরু করে। নিপু পড়ে কঠিন সংকটে। বাড়িতে জানাতেও পারে না বিষয়টা। গত সপ্তাহেই রেনুকে বলে সব।
নিপু নিজেকে ছাড়াতে চাইল। রেনু সায় দিল না। বান্ধবীকে অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরে বললো, ‘আমি থাকতে তোর ভয় নেই মালতী।’ তবে মনে মনে বলায় কথাটা আজও নিপুর কানে গেলো না।
প্রেমের গল্প
রোমান্টিক গল্প
ছোট গল্প
#প্রেমেরগল্প
#রোমান্টিকগল্প