প্রতিবছরই তো প্রযুক্তি কিছু না কিছু আসছে। তবে সামনের বছর দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে অনেকখানি। গেল বছর প্রযুক্তিবিশ্বের মোঘলদের যেসব প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে, সেসবের বাহাদুরি দেখা যাবে ২০২৩-এ।
সবখানে এআই
২০২৩ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিচ্ছুরণ ঘটবে। এর জন্য খুব একটা কোডিংও শিখতে হবে না। নানা ধরনের ড্রাগ-অ্যান্ড-ড্রপ টুল চলে আসায় ব্যবসায় দেখা দেবে নতুন সব অ্যানালিটিকস, পণ্য ও সেবা। বিশেষ করে বিজ্ঞাপনগুলো হবে আরও বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও একান্ত চাহিদানির্ভর। গ্রাহকের কথাবার্তা, গতিবিধি ও রুচি বুঝে আরও নিখুঁত বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবে কোম্পানিগুলো। প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার কাজও বাড়িয়ে তুলবে এআই। জটিল ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে বাই-অনলাইন-পিকআপ-অ্যাট-কার্বসাইড, বাই-অনলাইন-পিকআপ-ইন-স্টোর (ইঙচওঝ)-এর মতো বিষয়গুলো আরও ছড়াবে। স্বয়ংক্রিয় সেবা ও পণ্য ডেলিভারিতেও দেখা যাবে নতুন চমক। আবার গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট তৈরি ও কিছু সৃজনশীল কাজেও বাজার দখলে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
ওয়েব-৩
ব্লকচেইন বিষয়টি এখনো অনেকের কাছে অধরা হলেও ২০২৩ সালে এতে আরও অগ্রগতি ঘটবে। মূলত বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য ও সেবার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে এতে। এখন যেমন আমরা ক্লাউডে সব কিছু রাখতে অভ্যস্ত, তখন বিকেন্দ্রীকরণের ফলে তথ্য আরও নিরাপদ হবে এবং তথ্যকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও বাড়বে মানুষের।
ডিজিটাল-অ্যানালগ সেতু
থ্রিডি প্রিন্টার আরও সহজলভ্য হবে এবং বাস্তবের কোনো পণ্য বাজারে আনার আগে বা তৈরির আগে ভার্চুয়াল জগতে সেটার যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও আরও সহজ হবে। বিশেষ করে নতুন ওষুধের ক্ষেত্রে বেশ কাজে আসবে এ প্রযুক্তি। যেমন ফর্মুলা ওয়ান এখন রেস চলাকালীন সেন্সরের তথ্য সংগ্রহ করছে। সেই রেসের ট্র্যাকের তাপমাত্রা থেকে শুরু করে আবহাওয়ার তথ্যও বিশ্লেষণ করছে। এসব পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে ওরা রেস কারের বিভিন্ন পার্টস থ্রিডি প্রিন্টও শুরু করতে যাচ্ছে।
মেটাভার্স
ফেসবুকের মেটাভার্স যেমনই হোক, একই বিষয় নিয়ে কাজ কিন্তু আরও অনেকেই শুরু করেছে। তাই এবার হয়তো সময় হয়েছে একটা চশমা চোখে পরে ইন্টারনেটের ভেতর ঢুকে পড়ার। অনলাইন মিটিং, ডেটিং হবে আরও বাস্তবের মতো। নতুন করে আরেকটি ডিজিটাল সামাজিক বন্ধনের জোয়ারও এলো বলে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ মেটাভার্সের মতো ভার্চুয়াল জগৎগুলো অর্থনীতিতে যোগ করবে কমপক্ষে ৫ লাখ কোটি ডলার। পাশাপাশি অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটিও অফিসের কাজকর্মে বিপ্লব ঘটিয়ে ছাড়বে। মাইক্রোসফট ও এনভিডিয়া এরই মধ্যে এ ধরনের একটি মেটাভার্স প্ল্যাটফর্মের জন্য জোট বেঁধেছে।
জিন সম্পাদনা
ক্রিসপার ক্যাস-৯ এখন জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। টার্গেট করা জিনের সম্পাদনা করে বদলে দেওয়া যাচ্ছে ডিএনএ। এ বছরেই দেখা যাবে এ পদ্ধতিতে সারিয়ে তোলা অ্যালার্জিসহ জটিল সব রোগ, বদলে দেওয়া যাচ্ছে চুলের রং এবং বাড়ানো যাচ্ছে গমের ফলন।
কোয়ান্টাম অগ্রগতি
কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে বাস্তব রূপ দেওয়ার তোড়জোর এ বছর আরও বাড়বে। এক ধাক্কায় যা প্রচলিত প্রসেসরের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে লাখো-কোটি গুণ। তবে ভয়ও আছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার অসাধু ব্যক্তির হাতে পড়লে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে গোটা বিশ্বের এনক্রিপশন ব্যবস্থা। এমন শক্তিশালী কম্পিউটার দিয়ে চাইলে সেকেন্ডেই ভেঙে দেওয়া যাবে যে কোনো ব্যবসা, রাষ্ট্রের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কাঠামো। এ কারণে এ বছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ চীন ও রাশিয়াও মোটা অঙ্ক নিয়ে নামছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মাঠে।
সবুজ জ্বালানি
অনেক বছর ধরে শোনা গেলেও এবারই প্রথম পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যাবে কিছু প্রতিষ্ঠানকে। শেল ও আরডব্লিউই নামের দুটো বড় ইউরোপীয় জ্বালানি কোম্পানি বায়ুকলের মাধ্যমে উত্তর সাগরে বড় আকারের গ্রিন পাইপলাইন তৈরি করছে।
রোবটিক্স
স্বয়ংক্রিয় ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যে বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে সেটা এখন পুরে দেওয়া হচ্ছে রোবটের নকশাতেও। এতে করে কমে আসবে মানুষ কর্মীর সংখ্যা। এ বছর আরও বেশি চালকবিহীন ট্রাক, জাহাজ, উড়োজাহাজ ও ডেলিভারি রোবট দেখা যাবে। ব্রিটিশ অনলাইন সুপারমার্কেট ওকাডো তাদের ওয়্যারহাউসে আরও বেশি স্বয়ংক্রিয় রোবটের ব্যবহার বাড়াচ্ছে এ বছর।