Monday, December 23
Shadow

সাকিব- তাসকিন, প্লিজ পালিয়ে যান

তাসকিনরাজধানীর রাস্তায় চলার পথে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ত কিছু আর্তনাদ। সুবোধকে পালিয়ে যেতে অনুরোধ জানানো সে দেয়ালচিত্রগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আশা জেগেছিল, যতই পালিয়ে যেতে বলা হোক, সুবোধ থাকবে। কিন্তু কাজের কাজ কি কিছু হয়েছে? বাংলাদেশের যুবসমাজের সঙ্গে সুবোধের দূরত্ব যে দিন দিন বাড়ছে!

আজ দুপুরে জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার তাসকিন আহমেদ জাতিকে গণিত শিখিয়েছেন। ১১ এর সঙ্গে ১ যোগ করলে কত হয়? ১২। এবার অন্য সংখ্যাটি যদি ৯ হয়, তবে কোন সংখ্যাটি বড়? বড্ড হাস্যকর গণিত মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রদের উপযুক্ত এই প্রশ্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কেন করা হচ্ছে? হাজার হলেও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের যে গড় বয়স, তাতে এমন সহজ যোগ–বিয়োগ পারার কথা। তবু কেন তাসকিনের হঠাৎ এমন শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা হলো?

প্রথমেই তাসকিনকে অভিনন্দন। গতকাল তিনি প্রথমবারের মতো পিতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন। প্রথম পুত্রসন্তানকে দেখার আনন্দ ও তৃপ্তি সমর্থকদেরও জানাতে চেয়ে রাতেই ফেসবুকে একটি ছবি দেখিয়েছেন। অভিনন্দন বার্তায় ভরে উঠেছে তাঁর অফিশিয়াল পেজ। এরই মাঝে আজ দুপুরে হঠাৎ সেই পোস্টেই তাসকিনকে মন্তব্য করতে হলো (তাসকিনের ভাষাই রেখে দেওয়া হয়েছে), ‘সবার উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি, কেউ মনে কিছু নিয়েন না, আমার বিয়ে হইছে ১১ মাস। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে এসেই বিয়ে করলাম ৩১ অক্টোবর এবং বিয়ের বয়স হলো ১১ মাস, সাউথ আফ্রিকা ছিলাম ৪৮ দিন, সব মিলিয়ে হলো ১২ মাস ১৮ দিন। আমার পুত্র সন্তান হইলো ৯ মাস ২৭ দিনে.. যদি বিয়ের আগে আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট হইতো তা হলে আমার বাচ্চা বিয়ের ৬ মাস এর মধ্যেই দুনিয়াতে থাকত..যাই হোক যাদের ভুল ধারণা ছিল আমাদের প্রতি; তাদের জন্য এই মেসেজটি। ধন্যবাদ!’

আমাদেরই উচিত তাসকিনকে উল্টো ধন্যবাদ দেওয়া। এভাবে সরাসরি চপেটাঘাত আমাদের যুব সমাজের যে বড় দরকার ছিল। একজন মানুষ তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে সন্দেহ দূর করানোর জন্য কথা শুনতে হচ্ছে তাঁকে! একজন গর্বিত পিতা তাঁর আনন্দের সংবাদ জানাচ্ছেন, সেখানে কিছু মানুষ নর্দমার কীটের মতো অশালীন ভাষায় মন্তব্য করে যাচ্ছেন। একজন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন কোনো দ্বিধা ছাড়াই! অভিনন্দন বার্তার চেয়ে এসব মন্তব্যেই মানুষ তাঁদের ভালোবাসা ও পছন্দের কথা জানিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি কতটা খারাপ হলে, একজন তারকা এমন একটা ব্যস্ত সময়েও নিজের পোস্টে আবার মন্তব্য করতে বাধ্য হন!

এমন নয় যে বাংলাদেশের সমর্থকদের এমন আচরণ নতুন কিছু। বাংলাদেশের খেলা হলে গলা ফাটিয়ে দেশপ্রেম দেখানো চলে, কিন্তু ব্যর্থ হলেই তামিম-সাকিব-মুশফিকদের ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতেও দ্বিধা হয় না। এসব উগ্র, কুৎসিত মানসিকতার মানুষের কুৎসিত আচরণের শিকার হয়েছেন তামিম, মুশফিক, সাকিব—সবাই। নাসির হোসেনের একটি পোস্টে এমন অশালীন আচরণে মাশরাফিকেও এগিয়ে আসতে হয়েছিল। এই তো এশিয়া কাপ চলাকালীনও সাকিবকে আবারও শিকার হতে হয়েছে এমন নোংরামির।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিন দিন নোংরামি ছড়ানোর অস্ত্র হয়ে উঠেছে।নিজের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে, এমন অবস্থাতেও হাতের চোট নিয়ে খেলে চলেছেন সাকিব। এমন অবস্থাতেও তাঁকে শুনতে হয়েছে বিপিএলে খেলার জন্যই প্রথমে এশিয়া কাপে খেলতে চাচ্ছেন না। তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম কর্মে দীক্ষিত করার দায়িত্বও এই সমর্থকেরা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে দেশের জন্য নিজের কী অবদান, সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, কিন্তু দেশের সেরা ক্রিকেটারদের হেয়প্রতিপন্ন করতে ফেসবুকে বাগাড়ম্বর চলছেই। সাকিব আল হাসানের পারিবারিক ছবিতে কুরুচিকর মন্তব্য করেই আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন এরা। ক্রিকেটের সাফল্য–ব্যর্থতার অজুহাতে নিজেদের নোংরা মানসিকতার রেণু উড়িয়ে বেড়ান এরা।

তাসকিন, বৃথা চেষ্টা করছেন। এদের গণিত শিখিয়ে লাভ নেই। ঘুণে ধরা মূল্যবোধের যুগে সুবোধ পালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভব হলে আপনারাও পালিয়ে যান। কারণ আপনাদের কীর্তিতে গর্বিত হওয়ার অধিকারটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এ সমাজ গণিত নয়, শিষ্টাচারের প্রাথমিক পাঠটাই যে ভুলে যাচ্ছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!