শীতকালীন একটি অতি পরিচিত ও পুষ্টিকর সবজি টমেটো। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। সালাদ হিসেবেও টমেটোর বিকল্প নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। এছাড়াও এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। টমেটো ভেষজ গুণসম্পন্ন। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। আমরা চাইলে চবে টমেটো চাষ করতে পারি সহজেই। যত্নের সঙ্গে চাষ করলে ফলন পাবেন প্রচুর। চলুন আজ জেনে নিই কিভাবে টবে টমেটো চাষ করা যায়।
টবে টমেটো চাষ করতে মাটি তৈরি
টবে টমেটো চাষ করতে উপযুক্ত মাটি হচ্ছে বেলে দো আঁশ মাটি। টবে টমেটো চাষের ক্ষেত্রে প্রথমেই টবের মাটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটি তৈরির জন্য প্রথমে ২ ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর ও কিছু টিএসপি মিশাতে হবে। এরপর এই মাটি ১০-১২ দিন খোলা জায়গায় রেখে দিতে হবে। টবে টমেটো চাষ করতে সাধারণত তেমন ঝামেলা নেই। টব ছাড়াও পলিথিন বা আটা ময়দার প্যাকেট বা পানির বোতল, তেলের বোতলে ও গাছ লাগানো যাবে। তবে যে পাত্রেই লাগানো হোক না কেন তা ৮ ইঞ্চি পরিমান গভীর হতে হবে। মাঝারি বা ছোট একটি পাত্রে একটি চারাই রোপন করতে হবে তবে পাত্র বড় হলে দুইটি চারা রোপন করা যেতে পারে।
বীজ বপনের সময়
শীতকালীন সবজি হওয়ার কারণে সাধারনত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যেই টমেটো বীজ বপন করতে হবে। তবে সারা বছর চাষ করার জন্য বারি টমেটো জাত উপযোগী।
টবের মাটি তৈরি হয়ে গেলে তাতে বীজ বপন করতে হবে। একটি একটি করে চারা একটি টবে দিতে হবে। গাছ যেন পর্যাপ্ত আলো পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারনত টমেটোর বীজ যখন এক ইঞ্চি পরিমান লম্বা হয় তখন চারা রোপন করতে হয় টবে।
টবে টমেটো চাষ : সার প্রয়োগ
টমেটো গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমানে খাদ্য শোষণ করে থাকে তাই মাটিতে পর্যাপ্ত সার ও পানি থাকতে হবে। টবে টমেটো চাষে সাধারনত জৈব সার বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। গোবর সার, কম্পোস্ট জাতীয় সার, সবজির খোসা, ডিমের খোসা, এসব জিনিস সার হিসেবে ব্যবহার করা ভালো । তবে রাসায়নিক সার ও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইউরিয়া ও টিএসপি সার ব্যবহার করা যেতে পারে।
টবে টমেটো গাছের পরিচর্যা
গাছ একটু বড় হতে শুরু করলে একে একটি শক্ত কাঠির সাথে বেধেঁ দিতে হবে।
পুরো টব মাটিতে পূর্ণ করে দিতে হবে। মাটি বেশি হলে ফলন বেশি হবে।
টবে টমেটো চাষ করতে প্রচুর পানি দরকার হয়। তাই নিয়মিত ও সঠিক উপায়ে পানি দিতে হবে।
গাছের বয়স যখন ৪২ দিন হবে তখন মাঝে মাঝে অল্প করে সার ব্যবহার করা যেতে পারে। গাছের গোড়ায় আগাছা জমলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের গোড়া ঝোপালো হয়ে গেলে তা পাতলা করে দিতে হবে।
মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। গাছে ফুল আসতে শুরু করলে সরিষার খৈল পচাঁ পানি ১০-১২ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: হাঁস পালন | জেনে রাখুন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
টমেটোর সাধারনত গোড়া পচাঁ ও পাতা কোকড়ানো রোগ দেখা দেয়। এ ধরনের রোগ মারাত্নক হয়ে থাকে। একবার কোন গাছ আক্রান্ত হলে পুরো বাগানে তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই দ্রুত এর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
গোড়া পচা রোগ আক্রমন করলে এক লিটার পানিতে দুই গ্রাম ব্যভিস্টিন বা ৪ গ্রাম কিউপ্রাভিট মিশিয়ে চারার গোড়ায় দিতে হবে। পাতা কোকড়ানো রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
এছাড়া গাছে যদি পোকা আক্রমন করে থাকে তাহলে সাবান পানি বা ছাই দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
টমেটো ফলের নিচে যেখানে ফুল থাকে সেখান থেকে ফুল ঝরে গিয়ে লালচে ভাব শুরু হলেই ফল সংগ্রহ শুরু করতে হবে।