Monday, February 17
Shadow

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার ভাবনা ও একুশের চেতনা

Inbox

বাংলাভাষা আর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’—এই দুটি শব্দই সংগ্রামী চেতনা, মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি তরুণরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাতৃভাষার অধিকার। একারণেই বাঙালি জাতির কাছে একুশ মানেই সংগ্রামের অনুপ্রেরণা! জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার ভাবনা ও একুশের চেতনা তুলে ধরেছেন ইকবাল মাহমুদ।

ভাষা শুধু ফেব্রুয়ারির জন্য নয়, চর্চার বিষয় সারাবছর

ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও ভালোবাসার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ নজরুল শুধু বিদ্রোহী কবি নন, তিনি ভাষার শক্তির প্রতীকও।

ভাষার প্রতি ভালোবাসা কেবল ফেব্রুয়ারি মাসের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। ভাষা আন্দোলনের চেতনা প্রতিদিনের চর্চার বিষয়। বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার, মাতৃভাষায় গবেষণা, সাহিত্যচর্চা এবং একে প্রযুক্তির সাথে মানানসই করে তোলার দায়িত্বও শিক্ষার্থীদের নিতে হবে।

নজরুলের মতো সাহসী হতে হবে আমাদের ভাষা সংরক্ষণে। ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখা প্রয়োজন, তবে মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় বাংলা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য বাংলা কনটেন্ট তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। ভাষা কেবল কথার মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির মূল শিক্ষা হওয়া উচিত বাংলা ভাষার মর্যাদা শুধু বইয়ের পাতায় নয়, প্রতিদিনের জীবনযাপনে ও গবেষণায় বাস্তবায়ন করা।

আসাদুল্লাহ আল গালিব

ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ২য় বর্ষ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলা ভাষার বিকৃত চর্চা বন্ধ হোক

বাংলা ভাষা শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি আমাদের পরিচয়, গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। অথচ দুঃখজনকভাবে, আমরা নিজেরাই আজ বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটিয়ে চলেছি। এই বিকৃতি শুধুমাত্র ভুল বানানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভাষার কাঠামোগত সৌন্দর্যও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলা ভাষার অপব্যবহার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেকেই বাংলা টাইপ করাকে তুচ্ছ মনে করেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে আমরা দেখি, ‘তুমি’ লেখা হয় ‘tumi’, ‘ভালোবাসা’ হয়ে যায় ‘valoBasha’। কিছু তরুণের কাছে এটি আধুনিকতা মনে হলেও বাস্তবে এটি বাংলা ভাষার বিকৃতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।

শুধু লেখায় নয়, কথায়ও বাংলার বিকৃতি স্পষ্ট। অনেকেই বাংলার মাঝে অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে কথা বলেন—যেমন: “আমি আজকে খুব busy, কাল meet করা যাবে?” কিংবা “আমি Exam এর preparation নিচ্ছি”। এ ধরনের অভ্যাস ধীরে ধীরে বাংলার স্বকীয়তা নষ্ট করছে।

ভাষাবিদরা মনে করেন, এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষাব্যবস্থায় শুদ্ধ বাংলা চর্চাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল-কলেজে বাংলা বানানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমেও শুদ্ধ বাংলা প্রচলনের জন্য গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

 ফায়জুন্নাহার শান্তা

আইন ও বিচার বিভাগ, ১ম বর্ষ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার

ভাষার মাস প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এক অনন্য আবেগ জাগায়। ফেব্রুয়ারি এলেই মনের গভীরে ভেসে ওঠে ১৯৫২ সালের সেই সংগ্রামী অধ্যায়, যখন ভাষার জন্য অকুতোভয় তরুণেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন।

ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মত্যাগের গৌরবময় ইতিহাস আমাদের গর্বিত করে, তবে সেটি কেবল ফেব্রুয়ারি মাসের জন্যই নয়, সারা বছর ধরে ভাষার যথাযথ চর্চা করা উচিত।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। এটি আমাদের ভাষার মর্যাদা বিশ্বদরবারে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু ভাষা দিবসে আমরা যে আবেগ ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করি, সেটি যদি প্রতিদিনের অভ্যাসে রূপ না নেয়, তবে ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যাবে।

আমাদের উচিত প্রতিদিন বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা করা, একে সমৃদ্ধ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা। তাহলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

মো. ইমাম গাজ্জালী খান

পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ, ১ম বর্ষ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

হৃদয়ে ভাষাপ্রীতি থাকুক, বাংলা হোক আরও সমৃদ্ধ

ভাষার মাস এলেই হৃদয়ে এক অন্যরকম আবেগ জাগে। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই ভাষা শুধু কথার মাধ্যম নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়। ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়েছে যে ভাষার প্রতি ভালোবাসা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি চর্চা, যত্ন ও গর্বের বিষয়।

তবে বর্তমান সমাজে প্রশ্ন ওঠে— ভাষার প্রতি আমাদের দরদ কি শুধু ফেব্রুয়ারিতেই?

অনেকাংশে বিষয়টা এমনই মনে হয়। কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ বছরের প্রতিটি দিনই থাকা উচিত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানানের বিকৃতি আমাকে পীড়া দেয়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাংলিশ’ লেখার প্রবণতা এবং ‘ই’ ও ‘য়’-এর ব্যবহারে ভুল লক্ষ্য করা যায়, যা ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমির লেখালেখিতেও শুদ্ধ বানানের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। তরুণদের মধ্যে ভাষাপ্রীতি সৃষ্টি করতে হবে এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগের মানোন্নয়ন করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা ভাষার গভীরতা, শুদ্ধ ব্যবহার ও সাহিত্যচর্চায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠে।

একুশের চেতনা শুধু শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শুদ্ধ বানানে, সঠিক উচ্চারণে ও যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করা এবং আরও সমৃদ্ধ করাই প্রকৃত ভাষাপ্রীতির প্রতিফলন।

সাদিয়া বিনতে সুলতানা

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ১ম বর্ষ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!