মহাকাশেও শোনা যায় সুর-সংগীত। তবে সেটা শুনতে বিশেষ কিছু ফ্রিকোয়েন্সির পুনরাবৃত্তিকে নিয়ে আসতে হয় আমাদের শ্রবণসীমার ভেতর। বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন চীনা বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল পৃথিবী থেকে এক লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরে এমনই এক মহাজাগতিক সুরলহরীর সন্ধান পেয়েছেন। সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মহাকাশীয় ঘটনা আগে শুধু পৃথিবীর ডাইপোল চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছাকাছি অঞ্চলেই শোনা যেত।

বিজ্ঞানীরা ১০০ হার্টজের নিচের ফ্রিকোয়েন্সির ওই কোরাস তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তরঙ্গগুলো ‘খালি কানে’ শোনা যায় না। সেটাকে পরিণত করতে হয় অডিও আউটপুটে। এরপরই ‘স্পেস কোরাস’ পেয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা, যেটাকে অনেকটা ‘মহাজাগতিক পাখির ডাকের’ মতো বলে বর্ণনা করেছেন তারা।
বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব স্পেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের ডিন ছাও চিনবিন বলেন, ‘স্পেস কোরাস হলো মহাকাশে পাওয়া এক ধরনের নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সির তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ, যার ফ্রিকোয়েন্সি ১০০ হার্টজ থেকে কয়েক হাজার হার্টজ পর্যন্ত বিস্তৃত। শব্দের এই বর্ণালী পৃথিবীতে শোনা পাখির কোরাসের মতো, এ কারণেই এটাকে স্পেস কোরাস বলা হচ্ছে।’
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র মহাকাশে প্রসারিত থাকে। যখন মহাজাগতিক চার্জযুক্ত কণাগুলো এই চৌম্বক ক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে যায়, তখন এ ধরনের তরঙ্গের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
মহাকাশের সবচেয়ে তীব্র তড়িৎচৌম্বকীয় পরিবর্তনের মধ্যে কোরাস তরঙ্গ অন্যতম, যা মহাকাশ পদার্থবিদ্যার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব স্পেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক লিউ চেংমিং বলেন, ‘গত সাত দশক ধরে বিশ্বাস করা হতো, এই তরঙ্গ শুধু পৃথিবীর নিকটবর্তী কক্ষপথের কাছাকাছি ডাইপোল চৌম্বক ক্ষেত্রে থাকে। কেউ কখনও ভাবেনি যে এই তরঙ্গ আরও দূরে থাকতে পারে।’
চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইডেনের গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি সোলার-টেরেস্ট্রিয়াল প্রোব মিশন থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করেছে।
কোরাস তরঙ্গ মহাকাশের মৌলিক কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই তরঙ্গ পৃথিবীর বিকিরণ বেল্টে উচ্চশক্তির ইলেকট্রন দ্রুততর করা এবং মেরু অঞ্চলে পালসেটিং অরোরার মূল উপাদান। এ ছাড়া, এটি মহাকাশের আবহাওয়ার পরিবর্তনে প্রভাব রাখে। এটি আবার মহাকাশযানের নভোচারীদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণও হতে পারে।