আমলকির কথা শুনলেই মুখটা যেন তেঁতো হয়ে যায়। এরপরেও আমলকি খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। অন্যান্য ফলের মত মিষ্টি না হলেও আমলকির জনপ্রিয়তা ব্যাপক! শুধু যে খেতেই ভাল তা নয়, আমলকির রস চুলের জন্যও অনেক উপকারী। তবে আজ আমরা আমলকির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানবো।
আমলকির পুষ্টিগুণ
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকি ইথানল, প্যারাসিটামল ,কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, হেভী মেটাল, অচরাটক্সিন্স, হেক্সাক্লোরোসাইক্লোহেক্সেন, অ্যান্টিটিউবারকুলার ড্রাগস এর মত হেপাটোটক্সিক এজেন্ট এবং অতিরিক্ত আয়রন থেকে উদ্ভুত হেপাটোটক্সিসিটি কমাতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে । এছাড়াও আমলকি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে এবং হাইপারলিপিডিমিয়া ও মেটাবলিক সিনড্রোম কমায়। প্রানীদেহের ওপর করা পরীক্ষায় দেখা যায় হেপাটোকারসিনোজেনেসিস এর বিরুদ্ধে আমলকি একটি প্রতিরোধী ভুমিকা পালন করে।
আমলকির পুষ্টিগুণ কোন কোন রোগের জন্য উপকারী?
১। আমলাকি জুসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তা দৃষ্টিশক্তির জন্য খুবই উপকারী।
২। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকির পুষ্টিগুণ ছানি , ক্ষীণ দৃষ্টি এবং অকুলার টেনশন (চোখের প্রেসার) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আমলাকিতে ক্যারোটিন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। এই উপাদানটি ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এই ক্যারোটিন এবং ভিটামিন-এ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, রাতকানা এবং বার্ধক্য জনিত চোখের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখে।
৩। আমলকিতে এমন কিছু ভিটামিন এবং মিনারেলস (খনিজ উপাদান) আছে যা একত্রে মাসিকের ব্যথা চিকিৎসায় কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। মাসিকের সময় শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো জমা হতে সময় লাগে; তাই মাসিকের ব্যথায় মহিলাদের নিয়মিত আমলকি খাওয়া উচিৎ। আমলকির পুষ্টিগুণ এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে থাকে।
৪। গবেষনায় দেখা গেছে যে, পলিফেনল সমৃদ্ধ ফল আমাদের শরীর কে উচ্চমাত্রার ব্লাড সুগারের অক্সিডেটিভ প্রপ্রাটিস থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার খেলে আমাদের শরীরে ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স বা ইন্সুলিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আমলকি এই সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
৫। আমলকিতে উপস্থিত আয়রন শুক্রাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন আমলকির জুস খেলে যৌন স্বাস্থ্য এবং শক্তি নিশ্চিত করে। এটি শুক্রাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়। ফলে যেসব পুরুষেরা অলিগোস্পার্মিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য আমলকির পুষ্টিগুণ খুব-ই কার্যকরী।
৬। অন্যান্য ফলের মতোই আমলকি খাদ্যআঁশে পরিপূর্ণ। এই খাদ্যআঁশ মল উৎপন্ন এবং নিয়মিত মল ত্যাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকির পুষ্টিগুণ কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে।
৭। আমলকির পুষ্টিগুণ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই চমৎকার ফলটির আরেকটি গুন হল এটা আর্টিওস্কেলেরোসিস(ধমনী শিরার মাঝে প্লাগের সৃষ্টি) প্রতিরোধ করে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৮। আমলকীর রস সামান্য আদা গুড়োর সাথে মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা ও কাশি থেকে তাৎক্ষণিক উপশম মেলে।