সৌরমণ্ডলের বাইরে আরও একটি গ্রহের খোঁজ মিলল। এবং সেই আবিষ্কার ঘটল এক বাঙালির নেতৃত্বে একদল ভারতীয় বিজ্ঞানীর হাত ধরে। আমাদের থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরের এক তারা বা নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে ওই গ্রহটি।।
আমাদের সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহগুলিকে বলা হয় ‘এক্সোপ্ল্যানেট’। ইসরো বা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-র অধীনস্থ আমদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ, এই প্রথম কোনও ভারতীয় সংস্থার হাত ধরে কোনও এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হল। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের হাতে গোনা কয়েকটি দেশ এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করতে পেরেছে। প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছিলেন মিশেল মেয়ার। নয়ের দশকে।এ বার ভারতও ঢুকে পড়ল সেই ‘এলিট ক্লাব’-এ। এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী অভিজিৎ চক্রবর্তী। অভিজিৎবাবু আনন্দবাজারকে জানান, “শনির চেয়ে ছোট, অথচ নেপচুনের চেয়ে বড় এমনই একটি এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পেয়েছি আমরা। ২৭টি পৃথিবী জুড়লে যতটা হয়, ঠিক সেই চেহারারই এই এক্সোপ্ল্যানেট। আর ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ছ’গুণ।’’
গত কয়েক বছর ধরেই এক্সোপ্ল্যানেট বা ভিনগ্রহের আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে নানা কারণে। ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিরহস্যের উদ্ঘাটনে, গ্রহ-তারাদের জন্ম-মৃত্যু-বেঁচে থাকার সম্পর্কে জানতে এই আবিষ্কারগুলো যেমন জরুরি, তেমনই বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের জিজ্ঞাসাও এর পিছনে রয়েছে।
আমাদের ছায়াপথের এই সদ্য আবিষ্কৃত তারামণ্ডলটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে গবেষণা করছে ইসরো। তবে কিছু কিছু তথ্য এর মধ্যেই বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট। যেমন আমাদের সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর যে দূরত্ব (৮ আলোকমিনিট), তার সাত ভাগের এক ভাগ হল নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির সঙ্গে তার সূর্যের (নাম এপিক-২১১৯৪৫২০১) দূরত্ব। তার মানে, ওই ভিনগ্রহটি তার নক্ষত্রের অনেক বেশি কাছাকাছি আছে। ফলে, গ্রহটির বছর হয় ১৯.৫ দিনে।
আগেই বলা হয়েছে নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটি আমাদের থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে। শূন্য স্থানে আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকেই বলা হয় এক আলোকবর্ষ। এই ভাবে এক মিনিটে আলো যতটা যায়, তাকে বলা হয় এক আলোকমিনিট। যাই হোক, এই ৬০০ আলোকবর্ষ দূরত্বকে কিলোমিটারে হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ১০ লক্ষ কোটি কিলোমিটার।
অভিজিৎবাবু জানালেন, এক্সোপ্ল্যানেটটির পৃষ্ঠের উষ্ণতা প্রায় ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কী ভাবে এই ‘এক্সোপ্ল্যানেট’-এর অস্তিত্ব জানতে পারেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঔজ্জ্বল্যের উপর নির্ভর করেই বোঝা যায় অস্তিত্ব। কোনও নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহ আবর্তন করলে সেই নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্য কখনও কখনও কমবেই। নক্ষত্রের সামনে দিয়ে কেউ গেলে তা ধরা পড়বেই। এ ভাবেই খোঁজা হয় অনেক-অনেক দূরের গ্রহকে।
রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে পিআরএল অ্যাডভান্স, রেডিয়াল ভেলোসিটি আবু স্কাই রিসার্চ (পিএআরএএস)-এর বিজ্ঞানীরা গুরুশিখর অবজারভেটরির ১.২ মিটারের টেলিস্কোপের সাহায্যেই এর সন্ধান পেয়েছেন।
নতুন যে গ্রহটি আবিষ্কৃত হয়েছে, তাকে সাব-স্যাটার্ন বা সুপার নেপচুন বলা যেতেই পারে। দেড় বছর ধরে পিরআরএলের বিজ্ঞানীরা এই এক্সোপ্ল্যানেটটির দিকে নজর রাখছিলেন। গ্রহটির মোট ভরের ৬০-৭০ শতাংশই লোহা। এ ছাড়াও রয়েছে বরফ ও সিলিকেটও। নক্ষত্রের খুব কাছে থাকায়, এই ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা ততটা নেই বলেই অনুমান বিজ্ঞানীদের।