Monday, December 23
Shadow

ঘরে প্রতিবন্ধী সন্তান, কী করব?

তামিমা তানজিন
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিনিয়র কনসালট্যান্ট
প্রত্যয় মেডিক্যাল ক্লিনিক

প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবকরা প্রায়ই হতাশায় পড়েন, বিশেষ করে যখন তাঁরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন। ‘যখন আমরা থাকব না, তখন এই সন্তানটির কী হবে?’
হতাশা নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনি হতাশ হয়ে পড়লে শিশুটিকে কে দেখবে? ভবিষ্যতের ব্যবস্থা কে করবে? শিশুটি হতাশা বোঝার ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসেনি, বুঝলে নিজের থেকে চেষ্টা করত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে উঠতে। আপনার হতাশা আপনাকেই দুর্বল করে তুলবে, আপনার চিন্তার গতি কমিয়ে দেবে এবং কর্মক্ষমতাও কমে যাবে। একটা সময় হয়তো নিজেকে বিষন্নতায় ভোগা মানুষ হিসেবে খুঁজে পাবেন। আপনার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তানটির জন্য অন্য আর দশটা মায়ের তুলনায় আপনাকে হতে হবে অনেক বেশি সচেতন, কর্মক্ষম এবং বুদ্ধিমতী।
আপনার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুটি যদি কন্যাসন্তান হয়, তবে ছোট অবস্থা থেকে তার প্রতি বিশেষ নজর দিন। কেননা এ ধরনের কন্যাসন্তানদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া খুব সহজ। তাই নির্দিষ্ট বয়স এবং ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সন্তানটির প্রতি সাবধান থাকা এবং নজর রাখা অবশ্যই জরুরি।
দেশে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অনেক স্কুল, ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছে। দেখেশুনে ভালো ও নিরাপদ একটা স্কুল এবং ট্রেনিং সেন্টারে সন্তানকে ভর্তি করুন ও নিয়মিত তার যাওয়া-আশা নিশ্চিত করুন। কেননা এতে খুব ধীরে হলেও সে অনেক কিছু শিখবে। যত বেশি পারেন সন্তানের বিভিন্ন শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহী করুন। কেননা ভবিষ্যতে এই শিক্ষাগুলোই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং তার পথচলায় সহায়তা করবে। তাকে ঘরে বসিয়ে রাখবেন না। কেননা ঘরে বসিয়ে রাখলেই শিশুটি যতটুকু যা শিখেছিল সব ভুলে যাবে। সে যেন অবশ্যই কিছু না কিছু সৃজনশীল কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকে সেদিকটায়ও নজর রাখুন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধকতার কারণে সে হয়তো অনেক পড়াশোনা করতে পারবে না; কিন্তু হস্তশিল্পের শিক্ষা তাকে স্বাবলম্বী করতে পারে।
সন্তানটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলে আশাহত হচ্ছেন, কিন্তু ভেবে দেখুন, হাত-পা ও বুদ্ধিমত্তা সবদিক থেকে সুস্থ হওয়ার পরও কী সবার সন্তান ঠিক থাকে? যদি সে অবাধ্য সন্তান হতো? মাদকাসক্ত হতো? তাতেই কী আপনি খুশি হতে পারতেন? আপনার কেন এই প্রতিবন্ধী সন্তানটি হলো, এ নিয়ে আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আনাগোনা করে। ‘আমারই কোনো ভুলের ফল’, ‘আমার স্বামীর’ ‘তাঁর পরিবারের কোনো পাপের ফল যার প্রায়শ্চিত্ত আমাকে করতে হচ্ছে’, ‘আমাদের প্রতি ওপরওয়ালার শাস্তি এই শিশু’-এ ধরনের নেতিবাচক, অবৈজ্ঞানিক এবং হতাশাজনক চিন্তা করে নিজেদের অসুস্থ করবেন না। বরং কী করলে আরো আগানো যাবে এবং ভবিষ্যতে শিশুটি কিছু একটা করে চলতে পারবে তা নিয়ে ভাবুন।
ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন? ভাবছেন কোনো স্থায়ী বন্দোবস্ত করার কথা? এ ক্ষেত্রে বিয়ে দেওয়াটাকে অনেকে মনে করেন সবচেয়ে সঠিক। এতে সন্তানের সমস্যার সমাধান না হয়ে আরো বেশি সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। আপনারা যতটুক পারেন শিশুটিকে কোনো না কোনো স্কুলে রাখুন। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। এখনই ভেবে ভেবে অস্থির ও হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বর্তমান ব্যবস্থা সঠিকভাবে করার চেষ্টা করুন।
শিশুটির কোনো রকম ওষুধ-পথ্য চিকিৎসক দিয়ে থাকলে অবশ্যই তা চালিয়ে যাবেন। সম্ভব হলে তাকে সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিংয়েও নিয়ে আসতে পারেন। তবে তার সঙ্গে আপনি নিজেও কাউন্সেলিং নেবেন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিজের সুস্থতা বজায় রাখুন, তবেই পারবেন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।
সন্তানটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী- এটি না তার অপরাধ, না আপনার পাপের ফল। বিষয়টিকে মন থেকে মেনে নিন, তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থার চেষ্টা করুন। সে আপনাদের জন্য ভবিষ্যতে কিছুই করতে পারবে না- এ কথা ভেবে তার প্রতি অবহেলা করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!