class="post-template-default single single-post postid-51982 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ট্যাকিকার্ডিয়া : কারণ, উপসর্গ ও পরীক্ষা

আমরা যখন বিশ্রামে থাকি তখন আমাদের হৃৎস্পন্দনের গতি থাকে মিনিটে ৭০ থেকে ৯০ বার। হৃৎপিণ্ড মিনিটে ১০০ বারের বেশি স্পন্দিত হলে সেটাকে বলে ট্যাকিকার্ডিয়া । অনেক ধরনের অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন তথা অ্যারিদমিয়া থাকলে তা ট্যাকিকার্ডিয়ায় রূপ নিতে পারে।

উপরের সাধারণ হৃৎস্পন্দন ও নিচে ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়ায় আক্রান্ত রোগীর হৃৎস্পন্দন

হৃৎস্পন্দনের গতি মাঝে মাঝে দ্রুত হতেই পারে। সবসময়ই যে তা জটিল কোনো রোগের লক্ষণ হবে এমন নয়। যেমন ব্যায়াম করার সময় বা খুব মানসিক চাপে থাকলে হার্ট রেট বেশি থাকতে পারে।

আবার এও ঠিক যে ট্যাকিকার্ডিয়ার অন্য কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। তবে চিকিৎসা করা না হলে পরবর্তীতে হার্ট ফেইলুর, স্ট্রোক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ হতে পারে।

ট্যাকিকার্ডিয়া ও এর উপসর্গ

ট্যাকিকার্ডিয়া মানে হৃৎপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করার পেছনে খাটতে হচ্ছে বেশি, এবং এটি ঠিকঠাক রক্ত সঞ্চালন করতে পারছে না। এতে করে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশে দরকারি অক্সিজেনও পৌঁছাতে পারে না। যে কারণে দেখা দিতে পারে—

শ্বাসকষ্ট (ডিস্পোনিয়া), বুক ধড়ফড় করা (এক্ষেত্রে রোগী নিজের হৃৎস্পন্দন টের পায়), বুকে ব্যথা, মাথা হালকা লাগা, রক্তচাপ কমে জ্ঞান হারানো।

ট্যাকিকার্ডিয়ার ধরন

প্রথম ধরনটি হলো সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়া। এটি বিপদের লক্ষণ নয়। অতিরিক্ত পরিশ্রম বা হুট করে ভয় বা মানসিক চাপে পড়লে সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়া দেখা দেয়। তবে যেসব ট্যাকিকার্ডিয়ার সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের অবস্থা জড়িত সেগুলো আলাদা এবং এর জন্য চিকিৎসা নিতে হয়।

আর্টিফিশিয়াল ফিলব্রেশন : এটি সবচেয়ে সাধারণ ট্যাকিকার্ডিয়া । হার্টের উপরের দিকে চেম্বারে (অ্যাট্রিয়া) অনিয়মিত বৈদ্যুতিক সংকেতের কারণে এটি দেখা দেয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাময়িক হয়। তবে দীর্ঘসময় থাকলে চিকিৎসা করাতে হয়।

অ্যাট্রিয়াল ফ্লাটার : এটি আর্টিফিশিয়াল ফিলব্রেশনের মতোই। তবে এতে দ্রুত হৃৎস্পন্দনটি আগের মতো এলোমেলো হয় না, একটি বিন্যাস মেনে চলে। এটাও নিজে নিজে সেরে যেতে পারে।

ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া : এটি হৃৎপিণ্ডের নিচের দিকের অংশে (ভেন্ট্রিকল) হয়। দ্রুতগতির হৃৎস্পন্দনের কারণে ওই ভেন্ট্রিকলগুলো ঠিকমতো রক্তে ভরাট হতে পারে না বা সংকুচিতও হতে পারে না। এটি খুব কম সময় বা বড়জোর ১-২ সেকেন্ডের জন্য হতে পারে। তবে এটি কয়েক সেকেন্ড পার হলেই জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়।

সুপ্রাভেন্টিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া : ভেন্ট্রিকলের সামনে দিয়ে শুরু হওয়া অ্যারিদমিয়াকে সুপ্রাভেন্টিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া বলে। বুক ভীষণভাবে ধড়ফড় করে উঠলে এমনটা হয়।

ভেন্ট্রিকুলার ফিলব্রেশন : এটি বেশ মারাত্মক। এক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকলগুলো সংকুচিত না হয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে। আগে থেকে হার্টে কোনো অসুখ থাকলে বা রোগী যদি মারাত্মক কোনো ট্রমার শিকার হয় তবে ভেন্ট্রিকুলার ফিলব্রেশন দেখা দিতে পারে। দ্রুত হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনতে না পারলে রোগী মারাও যায়।

ট্যাকিকার্ডিয়া কেন হয়

হৃৎপিণ্ডের জটিল কোনো রোগ ছাড়া ট্যাকিকার্ডিয়ার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে আছে জ্বর, অ্যালকোহল গ্রহণ, উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন, উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ধূমপান, মাদকের ব্যাবহার ইত্যাদি। সিরিয়াস ট্যাকিকার্ডিয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বংশগত কারণও দায়ী থাকে।

ট্যাকিকার্ডিয়া বুঝতে হলে যে টেস্ট করাতে হবে

ট্যাকিকার্ডিয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসক সাধারণ এ পরীক্ষাগুলো করাতে বলেন—ইসিজি—হৃদযন্ত্রের পেশির সমস্যা বের করতে।

ইলেকট্রোফিজিওলজি—হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল সংক্রান্ত তথ্য জানতে।

ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম—হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার অবস্থা জানতে।

সিটি ও এমআরআই—হৃৎপিণ্ডের গঠন ও ক্ষতি সম্পর্কে জানতে।

ট্যাকিকার্ডিয়া প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

ট্যাকিকার্ডিয়ার হালকা লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর যদি সঙ্গে সঙ্গে একটি সুস্থ লাইফস্টাইল বেছে নিলে অ্যারিদমিয়া থেকে ট্যাকিকার্ডিয়া হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে। পূর্ণ শস্য খাওয়া, ক্যাফেইনের পরিমাণ কমানো, অ্যালকোহল ও ধূমপান পুরোপুরি বাদ দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ওজন বজায় রাখা ইত্যাদি মেনে চললে হৃৎপিণ্ড নিয়ে খুব একটা ভুগতে হবে না।

তথ্যসূত্র : মায়োক্লিনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!