গত দশকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে ডায়াবেটিক রোগী। বাড়ছে স্থূলতা, অন্ধত্ব, হার্ট ডিজিজ ও কিডনি রোগ। বিশ্বের প্রায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশেরই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস। বছরে এই রোগে প্রায় এক লাখ লোক মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ৮৪ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যাচ্ছেন।
এবারের প্রতিপাদ্যে নারীদের ডায়াবেটিসের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনধারণের কারণে গর্ভকালীন ডায়াবেটিক রোগীও বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের অর্ধেকেরও বেশি পরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় এবং তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
শরীরে শক্তির জোগানদাতা কার্বোহাইড্রেট। জটিল বিক্রিয়া শেষে এটা শরীরের কোষে গ্রহণ উপযোগী সরল অণুতে পরিণত হয়। এই অণুই হচ্ছে গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ অণুকে শরীরের কোষ গ্রহণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে।
কিন্তু কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করতে একটি হরমোন লাগে। ওটাই হলো ইনসুলিন। দেহের কোষে এক ধরনের চ্যানেল থাকে, যেটা দিয়ে গ্লুকোজ শরীরে প্রবেশ করে।
রক্তে অফুরন্ত গ্লুকোজের জোগান রয়েছে। কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে ইনসুলিনের অভাবে কোষগুলো থেকে যায় অভুক্ত। এ সময় রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে প্রস্রাবের সময় ও ঘনত্ব বাড়ে। সামগ্রিক অবস্থাটিকে বলে ডায়াবেটিস মেলাইটাস। সুস্থ মানুষের রক্তে অভুক্ত অবস্থায় প্রতি লিটারে ৫.৬ থেকে ৬.১ মিলি মোল গ্লুকোজ থাকে। খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টা পরে এটা বেড়ে যায়।
জেনেটিক কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে। অটিজম বা ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমে আক্রান্তদেরও এতে ভোগার আশঙ্কা বেশি। পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। আবার কারও হরমোন সমস্যা, কুশিং সিন্ড্রোম বা এক্রোমেগাল, যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের কারণে হয়ে থাকে, এদেরও ডায়াবেটিকের ওপর প্রভাব আছে। গ্লুকোকর্টিকয়েড, থায়াজাইড কিংবা ফেনাইটইন জাতীয় ওষুধগুলোর কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে।
লক্ষণ
যে সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন তা হলো বারবার প্রস্রাব। এতে শরীরে তরল কমে যায় এবং ঘন ঘন তৃষ্ণা পায়। আবার দেহে ‘কোষীয় অনাহার’ সৃষ্টি হয়। ফলে দেহ মস্তিষ্ককে ক্ষুধা লেগেছে বলে মেসেজ দেয়। এজন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষুধা লেগেই থাকে। প্রচুর খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যায়। ক্লান্তি ঘিরে রাখে।
পরামর্শ
- চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- অল্প অল্প করে বেশিবার খেতে হবে।
- ধূমপান বাদ দিতে হবে। কারণ, এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে।
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে।
- কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মমতো।
- আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
- ইনসুলিন বা অন্য ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করলে খাবারও নিয়মিত খেতে হবে।
গত ২০ বছরে আমেরিকাতেই টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। সেখানে ৩ কোটি ৭০ লাখ লোক এতে আক্রান্ত। তবে ৫ জনে ১ জন তা জানে না।
হ অন্ধত্ব, অঙ্গহানি, কিডনি ফেইলর; এ তিনটি মারাত্মক পরিস্থিতির জন্য ডায়াবেটিসই বেশি দায়ী।
হ ডায়াবেটিসের কারণে বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই খরচ হয় ৩২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার।