class="post-template-default single single-post postid-52134 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

দাঁত ক্ষয় : ডেন্টাল অ্যাবসেস হলে অবহেলা নয়

দাঁতের গোড়ায় ফোড়া হলে সেখানে পুঁজ জমে ফুলে যায়, ব্যথা হয়। একে ডেন্টাল অ্যাবসেস বলে। এ রোগ হঠাৎ হয় না। দীর্ঘদিন নিয়মিত দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে দাঁতে ক্ষয়রোগ বা ক্যারিজ হয়। লিখেছেন ডা. তাসনিমা সায়মা

যথাসময়ে ক্যারিজের চিকিৎসা না করালে ইনফেকশন বা অ্যাবসেস হয়। অ্যাবসেস হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, ব্যথা হয়।

কখনো কখনো ফোলা স্থান থেকে পুঁজও বের হয়। সাধারণত দাঁতে দুই ধরনের অ্যাবসেস বা ফোড়া দেখা যায়। পেরিএপিকাল অ্যাবসেস ও পেরিওডন্টাল অ্যাবসেস।

পেরিএপিকাল অ্যাবসেসে দাঁতের নিচের অংশ অংশ অর্থাৎ মাড়ির চারপাশে ফুলে যায়, তীব্র ব্যথা হয়। এর চিকিৎসায় দাঁতের রুট ক্যানাল বা দাঁত তুলে না ফেলা পর্যন্ত ইনফেকশন ভালো হয় না।

অন্যদিকে পেরিওডন্টাল অ্যাবসেস দাঁতের চারপাশে থাকা গাম বা মাংসপেশির ইনফেকশন। এটি সহজেই নিরাময়যোগ্য।

প্রথমে দাঁত ও মাড়ির মাঝে খাদ্যকণা  জমে। এগুলো পরিষ্কার না করা হলে তা একটা সময়ে পচে যায়। এ সময় এখানে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।

এই ক্যারিজ বা ক্ষয়রোগ যখন দাঁতের অ্যানামেল ও ডেন্টিন ক্ষয় করে দন্তমজ্জা বা পাল্পে প্রবেশ করে তখন প্রথমে দাঁতে ব্যথা হয়।

দাঁত ক্ষয়
দাঁত ক্ষয়

এ সময় ক্যারিজ বা ক্ষয়রোগের কারণ যে ব্যাকটেরিয়াগুলো তারাও দ্রুত পাল্পে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে পাল্প পচিয়ে ফেলে।

এই পচে যাওয়া পাল্প বা পাল্পপুঁজ তখন দাঁতের শেকড়ের ভেতরে থাকা নালি দিয়ে গোড়ায় চলে যায়। সেখানে থাকা অস্থিকেও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে এবং সেখানেও পচন শুরু হয়।

দাঁত যেহেতু হাড়ের ভেতর প্রতিস্থাপিত থাকে, তাই দাঁতের গোড়ায় পচন বা পুঁজ হওয়া মানে হাড়েও ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়া।

ধীরে ধীরে দাঁতের গোড়ার চারপাশে থাকা হাড় পচে গিয়ে যখন তা নরম মাংসে আসে, তখনই আমরা ওই স্থানটি ফুলে যেতে দেখি। যেহেতু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অ্যাবসেস হয় তাই দাঁতের চিকিৎসা ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হয়।

তবে পেরিওডন্টাল অ্যাবসেস পেরিএপিকাল অ্যাবসেসের তুলনায় কম বিপজ্জনক। পেরিএপিকাল অ্যাবসেস যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে, যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না  করলে আশপাশের স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং লাডউইগ অ্যানজাইনার মতো কিছু রোগের কারণ হয়।

লাডউইগ অ্যানজাইনা এমন একটি রোগ যেখানে গলার চারপাশে আকস্মিক পুঁজ জমে ফুলে যায় এবং রোগী নিঃশ্বাস নিতে পারে না। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

অনেক সময় চিকিৎসক অ্যাবসেস বা ফুলে যাওয়া স্থান থেকে জমে থাকা পুঁজ বের করে তারপর মূল চিকিৎসায় যান। জমে থাকা পুঁজ বের করলে ব্যথা কমে আসে।

কখনো কখনো কিছু অ্যাবসেস বারবার হয় এবং অ্যান্টিবায়োটিকেও ভালো হতে চায় না। এসব ক্ষেত্রে ওই অ্যাবসেস থেকে পুঁজ সংগ্রহ করে তা কালচার পরীক্ষায় পাঠানো হয়।

কালচার পরীক্ষার ফল দেখে পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হয়।অ্যাবসেসের চিকিৎসায় অনেক সময় ব্যথা কমে গেলেই রোগী ভাবে সমস্যাটি বোধহয় পুরোপুরি চলে গেল। বাস্তবে ব্যাপারটি তেমন নয়।

ব্যথা হওয়া রোগের লক্ষণমাত্র, ব্যথা চলে যাওয়া মানেই রোগটি ভালো হওয়া নয়, ব্যথা চলে যাওয়া মানে রোগের লক্ষণগুলোর একটামাত্র কমে যাওয়া।

বহুক্ষেত্রে রোগীর অজ্ঞানতার কারণে অ্যাবসেস আক্রান্ত দাঁতটি রক্ষা করা সম্ভব হয় না। যে চিকিৎসা যথাসময়ে করলে রোগী ভালো হতো, দাঁতটিও রক্ষা পেত, সেই চিকিৎসা পরে করলে রোগী লক্ষণমুক্ত হয় কিন্তু দাঁতটি রক্ষা করা সম্ভব হয় না।

দাঁত যে হাড়ের মধ্যে স্থাপিত থাকে সেই হাড় অ্যাবসেসে পচে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে চোয়ালের হাড়ের কিছু অসুখও হতে পারে। এর মধ্যে আছে অস্টিওমায়োলাইটিস।

এ ধরনের সমস্যায় বহুক্ষেত্রে রোগীর চোয়ালের হাড় ফেলে দিতে হতে পারে। তাই দাঁতের গোড়ায় বা মাড়িতে যেখানেই অ্যাবসেস হোক, চিকিৎসা যথাসময়ে করুন।

লেখক : ডেন্টাল সার্জন, টুথ কেয়ার সেন্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!