গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ তালিকায় কোমর ব্যথা আছে প্রথম সারিতে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় ভুগেই থাকেন।
একসময় কোমর ব্যথাকে উন্নত দেশের রোগ বলা হতো। ভাবা হতো যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন শুধু তাদেরই এ ব্যথা হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সারা পৃথিবী তথা উন্নত, মধ্যম আয় ও অনুন্নত দেশেও কোমর ব্যথা রোগীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোমর ব্যথায় ভোগেন। এ ব্যথা আবার তিন ধরনের—স্বল্পমেয়াদি, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি।
সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ব্যথা দ্রুত সেরে যায়, মাঝারি ব্যথা ভালো হতে সময় লাগে—এক থেকে দুই মাস। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় দীর্ঘমেয়াদিতে।
এটি বছরের পর বছরও চলতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার কারণ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা। আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণাগুলো অনুসারে সবাই বলে থাকেন ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা PLID অথবা হাড় ক্ষয় বা spondolysis-এর কারণে কোমর ব্যথা হয়।
কিন্তু বাস্তবে এমআরআই বা এক্সরে ফিল্ম ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বেশিরভাগ দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার রোগীর এমআরআই বা এক্সরে রিপোর্ট ভালো।
অর্থাৎ এ ধরনের রোগীর হাড় বা হাড়ের ডিস্কে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা নেই। শারীরিক পরীক্ষা করেও বড় ধরনের কোনো মাংসপেশির টান বা অন্য কিছু পাওয়া যায় না। তবে এ ব্যথার উৎপত্তি কোথায়? বলা হয়ে থাকে এ ব্যথার উৎপত্তি অজ্ঞাত।
বিজ্ঞানীরা এ ব্যথার নাম দিয়েছেন নন স্পেসিফিক ক্রনিক লো ব্যাক পেইন, সংক্ষেপে NSCLBP. রোগ নির্ণয় NSCLBP একটি জটিল সমস্যা।
কোনো কারণ নেই বলা হলেও আদতে এ ব্যথার উৎস নানামুখী। মানসিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে সামান্য হাড় ক্ষয় বা নিম্নমাত্রার পিএলআইডি ইত্যাদির সমন্বিত ফলাফল হতে পারে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা।
এ ধরনের সমস্যা নির্ণয়ে রোগের ও রোগীর জীবনাচরণের ইতিহাস জানা প্রয়োজন, প্রয়োজন কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট। এ সমস্যা উদঘাটনে চিকিৎসককে যেমন কোমর ব্যথা বিষয়ে উন্নততর জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে, ঠিক তেমনি রোগীকে ধৈর্য ধরে রোগের বিবরণ দিতে হবে, করতে হবে চিকিৎসককে সহযোগিতা।
চিকিৎসা এমন অনেক রোগী পাওয়া যায় যারা দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা সারাতে বছরের পর বছর নানা ধরনের ওষুধ সেবন করছেন; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। বেশিরভাগ গবেষণা থেকেও একই ধরনের ধারণা পাওয়া যায়, অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথায় ওষুধ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।
একইভাবে সাধারণ ফিজিওথেরাপি যেমন শর্টওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ট্র্যাকশন বা আলট্রাসাউন্ড দিয়েও ভালো ফল পাওয়া যায় না। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার শুরুতেই দেখে নিতে হবে রোগীর কোনো রেড বা ইয়েলো ফ্লাগ সাইন আছে কি না।
রোগীর কোনো জটিল রোগ যেমন, ক্যান্সার আছে কি না। যদি এ ধরনের সমস্যা না থাকে তবে তাকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা দিতে হবে।
কিন্তু চিকিৎসা হতে হবে টার্গেটেড বা সুনির্দিষ্ট। তবেই ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। উপদেশ প্রথমত ক্রনিক লো ব্যাক পেইনের রোগীরা অর্থোটিকস বা কোমরের বেল্ট ব্যবহার করবেন না।
পূর্ণ বিশ্রামে থাকারও প্রয়োজন নেই, উপরন্তু যতটা সম্ভব কর্মচঞ্চল থাকবেন, নিয়মিত হাঁটবেন, সাঁতার কাটার সুযোগ থাকলে সাঁতার কাটবেন। যতটা সম্ভব সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে মনোযোগ দিন। রেড বা ইয়েলো ফ্লাগ নেই এমন প্রত্যেক মুসলিম রোগী অবশ্যই স্বাভাবিক নিয়মে নামাজ আদায় করবেন।