ডা. রওশন আরার বললেন, পিরিয়ড সমস্যা থেকে হতে পারে যে জটিল রোগ
গত দু’মাস ধরে জ্বরটা ঘুরে ঘুরেই আসছে। খুব একটা পাত্তা দেয়নি এতদিন। শুধু নাপা আর প্যারাসিটামল খেয়েই চলছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আবার তলপেটেও প্রচণ্ড যন্ত্রণা। এই মাসের নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই পিরিয়ড হয়ে গেল। সব মিলিয়ে শরীরের অবস্থা ভালো নেই রাশেদার। ভাবছে আর কিছু দিন গেলে না হয় স্বামীকে বলা যাবে। এভাবে কেটে গেল আরো তিন মাস। কিন্তু কোনভাবেই যেন তলপেটের ব্যথাটা কমছে না। পিরিয়ডের সময়ও এখন বদলে গেছে। এক দিন জোর করেই বলে ফেলল স্বামীকে।
সেদিন সন্ধ্যায় স্বামী দ্রুত অফিস থেকে এসে রাশেদাকে নিয়ে বের হয় ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে। নিয়ে গেল পারিবারিক গাইনি ডাক্তারের কাছে। তিনি সব শুনে কিছু টেস্ট দিলেন। বললেন, পরদিন রিপোর্টগুলো নিয়ে যেন সন্ধ্যায় দেখিয়ে যান। স্বামী অফিস থেকে ফেরার পথে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে দেখা করেন ডাক্তারের সাথে। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানালেন, সালমার জরায়ুতে সংক্রমণ। তবে তা অতিরিক্ত মাত্রায় নয়। কিছু এন্টিবায়োটিক সেবন করলে সেরে যাবে।
ঊনচল্লিশ বছর বয়সী ফাতেমারও প্রায় একই সমস্যা। তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা। এছাড়া তার পিরিয়ডও অনিয়মিত। পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণও হয়। আবার স্বামীর সাথে সহবাসেও ব্যথা হয় ফাতেমার। প্রায় দেড় বছর ধরে এসব শারীরিক সমস্যা নিয়েই সংসার সামলে চলছিল ফাতেমা। একদিন পাশের বাসার ভাবির চাপাচাপিতে যান এক গাইনি ডাক্তারের কাছে। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি জানালেন ফাতেমার জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ। তার যে অবস্থা তাতে অপারেশন ছাড়া অন্য কোন গতি নেই। ওষুধ সেবনে এই রোগ সারবে না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালের গাইনি বিভাগের প্রফেসর ডা রওশন আরা বলেন, মূলত পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) হচ্ছে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ। এছাড়া অন্যান্য জীবাণুর কারণেও এই রোগ হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌনবাহিত রোগের মাধ্যমে এ জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ নারীই বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। তারা শরীরে রোগ পুষে রাখে। আর এভাবে অনেক সামান্য রোগ জটিল আকার ধারণ করে। এমনকি কিছু কিছু রোগের ফলে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ডা. রওশন আরা বলেন, এই রোগের লক্ষণগুলো হলো অতিরিক্ত স্রাব, পিরিয়ডের সময় বদলে যাওয়া ও অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া, জ্বর, তলপেটে অসহ্য ব্যথাসহ আরো কিছু। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে।
মূলত অনিরাপদ যৌন মিলন, জরায়ুর অপারেশন অথবা গর্ভপাত হচ্ছে মূল কারণ এই জীবাণুর সংক্রমণে। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ওষুধ সেবনে এই রোগ সেরে যেতে পারে। তবে জটিল আকার ধারণ করলে অপারেশন ছাড়া অন্য কোন গতি নেই।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পুরুষদেরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। তার কাছ থেকেও এ জীবাণু নারীদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। তাই পুরুষকেই স্ত্রীর সাথে সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।
এছাড়াও সহবাসের সময় কনডম ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই প্রবীণ চিকিৎসক। তিনি বলেন, একটু সচেতন হলেই এসব রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এবং কনডম ব্যবহার করলে এই রোগের জীবাণুকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও যেখানে-সেখানে গর্ভপাত করা থেকেও বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বলেন, বাংলাদেশে অনেক ফার্মেসির দোকানেও গর্ভপাত করানো হয়। যা কখনোই উচিত নয়। কারণ সেখানে জীবাণু সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে। আর তাই গর্ভপাত করাতে হলে কোন ভালো গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে গর্ভপাত করানো উচিত।