১৪ নভেম্বর পালিত হল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খান, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত মাপুন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ পরিবর্তন বা সেবন বন্ধ করবেন না, একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের নিকট থেকে আপনার ডায়াবেটিস জানুন। একটি শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক প্রক্রিয়াজাত জটিলতাজনিত রোগ। ইনসুলিন একটি অগ্নাশয় নিঃসৃত হরমোনের অভাবজনিত কারণে ডায়াবেটিস রোগ হয় এবং অনেক সময় ইনসুলিনের প্রতিদ্বন্দ্বী Growth Hormone বেশি থাকলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস হলে শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে গ্লকোজ ব্যবহার কমে যাওয়ার জন্য রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং যার ফলে প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ বের হয়। ঘনঘন পানির পিপাসা হয়, বেশি বেশি প্রস্রাব হয় ও শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।
চোখের উপর ডায়াবেটিসের প্রভাব ও চোখের বিভিন্ন পরিবর্তন কতদিন যাবত ডায়াবেটিস আছে তার ওপর নির্ভর করে। অপর্যাপ্ত ডায়াবেটিস কন্ট্রোলের কারণেও কখনো কখনো চোখের পরিবর্তন হয়। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি চোখের অন্যতম প্রধান সমস্যা। চোখের দৃষ্টিশক্তির ওপরও ডায়াবেটিসের প্রভাব আছে। চোখের লেন্সে পুষ্টিহীনতা ও রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে লেন্সের আকার বৃদ্ধি পায়। প্রতিসরাংক বা রিফ্রাকটিভ ইনডেক্স পরিবর্তনের ফলে হৃস্ব দৃষ্টি বা মাইয়োপিয়া হয় এবং কাছে দেখতে অসুবিধা হয়।
ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যেসব সমস্যা হয় তা নিম্নরূপ-
ডায়াবেটিসজনিত ছানি- এটা ২ ধরনের হয়। (১) বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ছানি তাড়াতাড়ি হয়। (২) জুভেনাইল ডায়াবেটিস রোগীদের ছানি অল্প বয়সেই হয়।
কনজাংটিভার পরিবর্তন- শিরাগুলি প্রসারিত হয় এবং শিরার শেষ ভাগের ক্যাপিলারিগুলো লম্বা হয়। ধমনী শিরার আনুপাতিক হার ১:৭ হয়।
আইরিসের পরিবর্তন-এখানে পানি জমে ও আইরিশ ফুলে যায় এবং পিগমেন্ট এপিথেলিয়াম নষ্ট হয়। আইরিসের প্রদাহ হয়, নতুন রক্তনালী তৈরি হয় এবং চোখের ভিতর রক্ত জমে ও নিওভাসকুলার গ্লুকোমা হয়।
ভিট্রিয়াস ও রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয় ও নতুন রক্তনালী তৈরি হয়।
স্নায়ু বৈকল্য, ট্যারা চোখ ও দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হয়।
ডায়াবেটিক রোগীদের গ্লুকোমা থাকতে পারে।
এক বস্তুকে দুটি দেখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকেরই ধারণা যে তাদের চোখের চিকিৎসা শুধুমাত্র ডায়াবেটিস হাসপাতালেই সম্ভব। এই ভেবে তারা সবাই ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভিড় জমায় এবং নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়াবেটিস রোগীদের ছানিসহ সকল রোগের চিকিৎসা সফলভাবে নির্বিঘ্নে করা হয়। উল্লেখিত হাসপাতালগুলোতে ডায়াবেটিসসহ চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন এবং অন্যান্য সকল বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। যারা ডায়াবেটিস রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকেন।
এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ রোগী টাইপ-২ প্রকারের। কিডনিতে নেফ্রপ্যাথি ও চোখে রেটিনোপ্যাথি হয়। ডায়াবেটিস হলে চোখে আর যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো চোখের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ, চোখের পাতায় গোটা ওঠা, আইরিসে নতুন রক্তনালী হওয়া, চোখের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন, চোখে ছানি পড়া, ঘোলা বা কম দেখা, চোখের ম্যাকুলায় পানি জমা, ব্লাডসুগার কমলে হাইপারমেট্রোপিয়া ও ব্লাডসুগার বাড়লে মায়োপিয়া বা দূরে দেখতে অসুবিধা হয়। চোখের মাংসপেশীসমূহ অবশ হতে পারে যদি ডায়াবেটিস কন্ট্রোল না করা হয়।
এগুলো ছাড়াও রাতকানা, চোখ ওঠা, কর্ণিয়ায় বেবোধ ভাব হওয়া ও ঘা হওয়া স্কেলার প্রদাহ ও রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়াও ডায়াবেটিসের সঙ্গে চোখের সম্পৃক্ততা ও মারাত্মক ক্ষতিকর দিক যাতে যে কেউ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করলে অন্ধত্ব থেকে বাঁচা সম্ভব।
শরীরের ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবজনিত কারণে বহুমূত্র রোগ হয়। বহুমূত্র রোগে কখনও কখনও প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ যাওয়া, বারবার প্রস্রাব হওয়া ও শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।
বহুমূত্র রোগে চোখের যে সমস্ত জটিলতা দেখা দেয় তা নিম্নরূপ-
১। ডায়াবেটিসজনিত রেটিনার রোগ (ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি)।
২। রেটিনাতে রক্ত জমাট বাঁধে ও সাদা সাদা প্রদাহজনিত নিসঃরণ দেখা যায়।
৩। ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন করা।
৪। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দৃষ্টি কমে যায় (ইনডেক্স মাওপিয়া)।
৫। কাছে পড়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুর্বলতা।
৬। অল্প বয়সের রোগীদের ডায়াবেটিসজসিত চোখের ছানি হয়।
৭। চোখ লাল হয় এবং রক্ত নালীগুলো প্রসারিত হয়।
৮। রেটিনার ম্যাকুলাতে পানি জমে।
৯। আইরিসে প্রহাদ হয়, নতুন রক্তনালী তৈরি হয়। মনিতে সাদা সাদা ডিমের মতো জমে, রক্তক্ষরণের জন্য চোখে রক্ত জমে ও দৃষ্টি কমে যায়।
১০। রেটিনা ও ভিট্রিয়াস এ রক্ত জমে।
১১। সারা শরীরের সব স্নায়ুতে দুর্বলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে চোখের স্নায়ুগুলোতে।
১২। চোখের পাতা, কর্নিয়া ও আইরিসে প্রদাহ হয়।
১৩। রেটিনার প্রধান ধমনী বন্ধ হয়ে যায় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের উচ্চচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৪। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে বহু রোগী অন্ধত্ববরণ করে।