জরায়ুর বিভিন্ন লেয়ার আছে। একটি হচ্ছে মায়োমেট্রিয়াম। মায়োমেট্রিয়াম থেকে উৎপন্ন এক প্রকার বেনাইন টিউমারকে ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার বলে। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্য বা জরায়ুর আঘাতজনিত কারণেও এটি হতে পারে।
নারীদের প্রজননক্ষম বয়সে জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায় ফাইব্রয়েড। জরায়ুর মাংসপিণ্ড ছাড়া ভেতরে ও বাইরের অংশেও টিউমার হতে পারে। অনেকে মনে করে, জরায়ুতে টিউমার বেশি বয়সে এবং বিবাহিতদেরই হয়। এ রোগ অল্প বয়সীদেরও হতে পারে। অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে এ রোগের পেছনে বংশগত, কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর ও জিনগত কারণকে দায়ী করা হয়।
জরায়ুর টিউমার শনাক্ত করতে পরীক্ষা
জরায়ুর টিউমারের জন্য প্রথমত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাফি করলেই বোঝা যায়। জরায়ুর পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে টিউমার হয়। ৩০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশই এ সমস্যায় আক্রান্ত। তবে ফাইব্রয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার, এটি সচরাচর অন্য ক্যান্সারের মতো বিপজ্জনক নয়।
তবে দুটো সমস্যার কারণে সুচিকিৎসা দরকার। প্রথমত এর ফলে অতিরিক্ত মাসিক হওয়া এবং তার জন্য রক্তশূন্যতা হতে পারে। দ্বিতীয়ত এটিকে বন্ধ্যত্বের একটি অন্যতম কারণ বিবেচনা করা হয়।
তবে ২৫ শতাংশ ফাইব্রয়েড টিউমার আজীবন কোনো সমস্যাই করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা অনিয়মিত মাসিক বা তলপেট ভারী বোধ হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হয়।
ফাইব্রয়েডের কারণে জরায়ু অতিরিক্ত বড় হলে, জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে রক্তনালির সংখ্যা বেড়ে গেলে ভ্রূণ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না। জরায়ু ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের সংযোগস্থলে বা এমন কোনো জায়গায় টিউমারটির অবস্থান হয়, যা ভ্রূণকে সুস্থিত হতে বাধা দেয়।
যাদের বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা যায় বা বারবার গর্ভপাত হয়, তাদের ফাইব্রয়েড থাকলেও বন্ধ্যত্বের অন্য কারণগুলোকে শনাক্ত করা উচিত।
জরায়ুর টিউমারের কারণ ও লক্ষণ
অনেক সময় জরায়ুর গহ্বরে টিউমার হতে পারে। এর আকার মটরদানা থেকে আধা কেজি পর্যন্ত হতে পারে। একসঙ্গে -১০টি পর্যন্তও হতে পারে। এটি ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারীদের বেশি হয়। জরায়ু পেশির ওপর অনবরত চাপ পড়া, বংশগত, হাইপার আসট্রিনিজম এসব কারণে হতে পারে।
লক্ষণগুলো হলো—বহুদিন স্থায়ী ঋতু, পেট কেটে ফেলার মতো ব্যথা, কাটা বর্ণের ও দুর্গন্ধযুক্ত প্রদরস্রাব, শীর্ণতা, ক্ষুধা ও পিপাসা বেড়ে যাওয়া, জরায়ুতে ব্যথা, পেট ফাঁপা, মূত্ররোধ, প্রচুর পরিমাণে বহুদিন স্থায়ী ঋতুস্রাব, অত্যধিক শিরা স্ফীত, ঋতুস্রাবের পর প্রচুর ঘাম, জরায়ুর মধ্যস্থ সৌত্রিক টিউমার হতে রক্তস্রাব ইত্যাদি। লক্ষণ দেখে দ্রুত চিকিৎসা নিলে এ রোগ ভালো হয়।