class="post-template-default single single-post postid-48990 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রোমান্টিক গল্প : স্ত্রীর মন বোঝা

অফিসে যাওয়ার জন্য যখন তৈরি হচ্ছিলাম তখন আমার স্ত্রী শ্রাবণী রান্নাঘর থেক কড়াই এনে আমার সামনে রেখে বললো,
-“বলো তো কড়াইয়ের মধ্যে কি আছে? “
আমি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— পানিই তো মনে হচ্ছে।
শ্রাবণী আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
-” হয় নি, এটা পানি না।এটা বসুন্ধরা সয়াবিন তেল। আমি ৩০মিনিট ধরে আগুনে রেখে গরম করে এনেছি। আমার কথার যদি সোজাসাপ্টা জবাব না দাও, তাহলে এই গরম তেল আমি তোমার শরীরে ঢেলে দিবো।”
শ্রাবণীর কথা শুনে আমি ওর সামনে থেকে দুইহাত সরে গিয়ে বললাম,
— কি সব পাগলে মতো কথা বলছো!
শ্রাবণী বললো,
-“আমি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই কথা বলছি। অর্পিতা কে?”
— কোন অর্পিতা?
-” যাকে নিয়ে ফেসবুকে আজকাল খুব লেখালেখি করছো?”
আমি মুচকি হেঁসে শ্রাবণীকে বললাম,
— আরে এই নামতো আমি এমনি ব্যবহার করেছি। তাছাড়া তুমিই তো সেদিন বলেছিলে আমার ছাইপাঁশ গল্পে তোমার নামটা যেন ব্যবহার না করি। তাই তো আর তোমার নাম দেই না
শ্রাবণী মুখটা মলিন করে বললো,
-“তোমারা স্বামীরা এমন কেন? স্ত্রীদের মন বুঝতে চাও না। আরে আমি মুখে না করেছি ঠিকিই কিন্তু মনে মনে চাই তুমি আমার নামটাই সব সময় ব্যবহার করো। শুনো আমি যদি কখনো মুখে না করি অথচ মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসি তাহলে ধরে নিবে আমি মনে মনে হ্যাঁ বলছি। মনে থাকবে কথাটা?”
আমি হেঁসে বললাম,
— মনে থাকবে শাহজাদী গুলবাহার।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী বললো,
-“তোমায় না বলেছি আমায় এই নামে না ডাকতে..”
খেয়াল করে দেখি শ্রাবণী মুখে না করেছে ঠিকিই কিন্তু মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাঁসছে। আমি বুঝেগেছি আমার বউয়ের মনের কথা। তার মানে সে মনে মনে চাচ্ছে আমি যেন তাকে এই নামে বেশি করে ডাকি। আমি সমানে শাহজাদী গুলবাহার, শাহজাদী গুলবাহার বলে ডাকতে লাগলাম। আর শ্রাবণী হাঁসতে লাগলো। এমন সময় কলিংবেলের শব্দ হলো। শ্রাবণী আমায় বললো,
-” তুমি তৈরি হও, আমি দেখছি কে এসেছে।”
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে লাগলাম। শ্রাবণী দরজা খুলে বললো,
-“কাকে খুঁজছেন?”
বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বললো,
~”আসসালামু আলাইকুম ভাবী। আমি অর্পিতা, স্যারের অফিসে কাজ করি। পাশেই আমার ফুফুর বাসা। কাল একটা দরকারে এইখানে এসেছিলাম। আজ যখন অফিসে যাবো তাই ভাবলাম স্যারের সাথেই যাই। তা স্যার কি আছেন, নাকি অফিসে চলে গিয়েছেন?”
শ্রাবণী তখন উত্তর দিলো,
-” আপনার স্যার বাসায় নেই। কিছুক্ষণ আগে গরম তেল উনার শরীরে পড়ে গেছে। উনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।”
শ্রাবণীর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। শ্রাবণী যখন রুমের দিকে আসতে লাগলো আমি তখন দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লক করে বসে রইলাম। বাহির থেকে শ্রাবণী দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
-“তুমি দরজা খুলো বলছি, তা না হলে আমি কিন্তুু পুরো বাসায় আগুন লাগিয়ে দিবো।”
আমি তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার বন্ধু মামুনকে ফোন করে বললাম,
–তুই তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স নিয়ে আমাদের বাসার সামনে আয়। আর আসার সময় হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে একটা সিট বুকিং দিয়ে আসিস….।
|
|
কয়েকদিন পর আমি আর শ্রাবণী আমার বন্ধু মামুনের বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে মামুন শ্রাবণীকে বললো,
~”ভাবী আরো একপিস রোস্ট দেই?”
শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
–না ভাই, আমি আর খাবো না।
তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী মুখে না করছে ঠিকিই কিন্তু মিটমিট করে হাঁসছে। তারমনে শ্রাবণী আরো রোস্ট খেতে চায়। আমি তখন মামুনকে বললাম,
— আরে বেটা, জিজ্ঞেস করার করার কি আছে? একপিস না আরো দুইপিস রোস্ট দে…
আমার কথা শুনে মামুন শ্রাবণীকে দুইপিস রোস্ট দিলো। শ্রাবণী তখন আমার দিকে কেমন করে জানি তাকালো। একটু পর মামুন আবার শ্রাবণীকে বললো,
~”ভাবী, রোস্ট খেতে মনে হয় আপনার ভালো লাগছে না। আপনি একটু গরুর গোশত নেন
শ্রাবণী আবারও হেঁসে জবাব দিলো,
-” না ভাই, আমার পেট ভরে গেছে।”
খেয়াল করে দেখি শ্রাবণী আবার মুখে না করছে ঠিকিই কিন্তু ঠোঁটে হাঁসি লেগে আছে। আমি বউয়ের মনের কথা বুঝে গেছি। আমি মামুনকে তখন বললাম,
–আরে বেটা, এতো জিজ্ঞেস করার কি আছে? তুই তরকারি দে। আমার বউয়ের খেতে ইচ্ছে করছে ঠিকিই কিন্তু লজ্জায় না করছে কিন্তু আমি হলাম আমার বউয়ের আদর্শ স্বামী। আমি ঠিকিই আমার বউয়ের মনের কথা বুঝতে পেরেছি।
এই কথা বলে আমি মামুনের হাত থেকে তারকারির বাটিটা নিয়ে পুরোটা শ্রাবণীর প্লেটে ঢেলে দিলাম।
শ্রাবণী রাগে টেবিল থেকে উঠে বললো,
-“তুই আজ বাসায় আয়। বউয়ের মনের কথা কিভাবে বুঝতে হয় সেটা তোকে আমি নতুন করে শিখাবো।”
এইকথা বলে শ্রাবণী চলে গেলো। আমি মামুনকে বললাম,
— বন্ধু খাবারটা নষ্ট করে লাভ নেই। তুই প্যাকিং করে আমায় দিয়ে দে। অবস্থা যা দেখছি বাসায় দুইদিন ভাত-পানি পাবো না। এইগুলো খেয়েই বেঁচে থাকতে হবে….
বাসায় আসার পর শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
-“ছিঃ শেষে কি না নিজের বউকে বন্ধুর চোখে রাক্ষস বানালে। আমি খেতে পারছিলাম না দেখেও জোর করে আমার প্লেটে কেনো খাবার দিলে?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
— আমার কি দোষ! তুমিতো সেদিন বললে তুমি যদি মুখে না করো কিন্তু ঠোঁটে মিটমিট হাসি থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে তুমি মনে মনে হ্যাঁ বলছো।
শ্রাবণী তখন শান্ত হয়ে বললো,
-“আরে হাঁদারাম, এটা শুধু স্বামী -স্ত্রীর ক্ষেত্রে। অন্যদের বেলায় যদি আমি মুখে না বলি মানে না, আর যদি হ্যাঁ বলি মনে হ্যাঁ। মনে থাকবে এখন?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
— মনে থাকবে শাহজাদী গুলবাহার….।
|
|
মা অসুস্থ থাকার জন্য আমরা দুই ভাই স্ত্রীদের সাথে নিয়ে মাকে দেখতে যাই। শ্রাবণী মাকে বললো,
-” মা, আপনার শরীরটা এখন ভালো নেই। আপনি নাহয় এখন আমাদের সাথেই থাকবেন।”
মা হেঁসে বললো,
~”না বউমা, আমি শহরে থাকলে দম বন্ধ হয়ে এমনিতেই মরে যাবো।”
তারপর মা আলমারি থেকে একটা সোনার হার বের করে শ্রাবণীর হাতে দিয়ে বললো,
~”বউমা, আমার বয়স হয়েছে। কখন কি হয় কি জানি! তুমি আমার প্রথম ছেলের বউ। এই গলার হারটা তুমি রাখো।”
শ্রাবণী মাথা নিচু করে হেঁসে বললো,
-” না মা, আপনার জিনিস আপনার কাছেই রাখুন। আমি নিয়ে কি করবো?”
মা বারবার জোর করছিলো আর শ্রাবণী বার বার না করছিলো। আমি আমার স্ত্রীর মনের কথা বুঝতে পারি। শ্রাবণী বলেছিলো, স্বামী স্ত্রী বাদে অন্য কারো কাছে স্ত্রীর না মানে না আর হ্যাঁ মানে হ্যাঁ। তারমানে শ্রাবণী সত্যিই মন থেকে নিতে চায় না। আমি তো আর্দশ স্বামী স্ত্রীর মন বুঝি। আমি তখন মাকে বললাম,
— মা, বাদ দাও তো। শ্রাবণী যেহেতু নিতে চাচ্ছে না শুধু শুধু ওকে জোর করো না। তোমার এতই যদি দেওয়ার ইচ্ছে থাকে তোমার ছোট ছেলের বউকে দিয়ে দাও।
আমার কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে শ্রাবণীর মুখটা কেমন জানি হয়ে গেলো। বুঝতে পারছিলাম না ও রাগ করেছে নাকি খুশি হয়েছে….।
পরদিন যখন ঢাকায় ফিরি শ্রাবণী পুরো রাস্তা আমার সাথে একটা কথাও বলে নি। বাসায় যখন ঢুকতে যাবো শ্রাবণী রেগে বললো,
— তুমি বাসায় ঢুকবে না। তোমার এই গাধা টাইপের মুখটা আমি দুইদিন দেখতে চাই না….।
—–
রাত ১১টা বাজে। মামুন আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
~” তুই ভাবীর সাথে কেন সংসার করছিস বল তো? প্রতিদিন তোদের ঝগড়া হয়। দুইদিন পর পর তোকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এইসবের কোন মানে হয়?
আমি হেসে মামুনকে উত্তর দিলাম,
— কেন সংসার করি বলবো? তাহলে শোন, আমি যদি কখনো অসুস্থ থাকি রাত ৩টার সময়ও যদি আমার ঘুম ভেঙে যায় চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী জেগে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে শ্রাবণী। বিয়ের আগে রান্না করবে তো দূরের কথা নিজের ভাত কখনো বেড়ে খায় নি।অথচ সেই মেয়েটা বিয়ের এত বছর পরেও আমাকে একবেলা না খাইয়ে রাখে নি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একটা মেয়ে। চাইলেই নিজের মেধা খাটিয়ে জব করতে পারতো। কিন্তু সে জব করে নি। সংসারটা মন দিয়ে করছে।
এখন তুই বল, যে মেয়েটা আমার জন্য এতোটা সেক্রিফাইজ করছে তার সাথে সংসার না করে উপায় আছে?
আমার কথা শুনে মামুন তখন বললো,
~”তাহলে তুই কেন ভাবীকে বুঝতে পারিস না?”
আমি আবারও মুচকি হেসে বললাম,
— কে বলেছে আমি আমার স্ত্রীকে বুঝতে পারি না! আমি সব বুঝি। তবুও আমি ইচ্ছে করে গাধামি করি কারণ আমি চাই না আমি শ্রাবণীর চোখে পরিবর্তন হই। ভার্সিটি জীবনে শ্রাবণী আমাকে ভালোই ভেসেছিলো আমার বোকা বোকা কাজ দেখে।
মামুনের সাথে কথা বলে হাঁটতে হাঁটতে বাসার সামনে এসে গেলাম। মামুনকে তখন বললাম,
— একটা সিগারেট দে তো
মামুন সিগারেটের প্যাকেটটা আমার হাতে দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~” তুই তো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি। আবার ধরলি নাকি?”
আমি সিগারেটে আগুন ধরিয়ে বললাম,
–উপরে বেলকনিতে তাকিয়ে দেখ শ্রাবণী আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি সিগারেট খেয়ে বাসায় যাবো। ও রেগে যাবে। আমায় প্রচন্ডরকম বকাঝকা করবে। ওর রাগী চেহারা আর ওর শাসনটা আমার খুব ভালো লাগে। তাই একটা সিগারেট খাচ্ছি আর কি….।
——
পিয়াস বাসার ভিতর ঢুকে গেছে আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মামুন ভাবছে,
সময়ের বিপরীতে পিয়াস, শ্রাবণী হাঁটছে। যে সময়ে স্বামী- স্ত্রী টুকটাক কথা কাটাকাটি হলেই ডিভোর্স হয়ে যায়। সেখানে ওরা দিনের পর দিন রাগারাগি ঝগড়া করে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে….
লিখেছেন আবুল বাশার পিয়াস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!