class="post-template-default single single-post postid-21690 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রোমান্টিক উপন্যাস – ফ্যান্টাসি থ্রিলার কৃ (পর্ব-১০)

রোমান্টিক উপন্যাস : ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-১)

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-২)

রোমান্টিক উপন্যাস (ফ্যান্টাসি থ্রিলার) ”কৃ” (পর্ব-৩)

ধ্রুব নীল
১০

হাত ছাড়িয়ে নিল কৃ। বসে পড়ল একটা খালি জায়গা দেখে। আমি পা ভাঁজ করে বসতে পারি না ভালো করে। ডায়াবেটিক নিওরোপ্যাথিক ব্যথা পেয়ে বসেছে। তারপরও বসলাম।

‘ওর কাছে আমাদের একটা স্ক্রিপ্ট আছে। মানে যেটাকে মন্ত্রটন্ত্র বলো তুমি। আমাকে কাছে না পেলে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু, চাইলে ঝামেলা পাকাতে পারে। আমিই প্রথম নই। অনেক কৃর সঙ্গে মানুষের.. যাকে বলে.. মানে যোগাযোগ হয়েছে। প্রেম ট্রেম যে আরো হয়নি তা নয়। এভাবে কৃদের কিছু দুর্বলতার কথা কিছু মানুষ জেনে যায়। তারা সেটাকে নিয়ে একটা কিছু করে… আমাদের ধরাশায়ী করার অস্ত্র বানিয়েছে বলতে পারো।’
‘ওই গ্রামটা খুঁজে বের করতে হবে তা হলে। একেবারে খতম করে দিয়ে আসি ওঝা ব্যাটাকে।’
‘খবরদার এসব বলবে না। ওই দিন যা করেছো, করেছো। দয়া করে ছেলেমানুষী কিছু করতে যেও না। এমনিতে যথেষ্ট চেষ্টা করছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আমি এখন ক্ষমতাহারা পাখি।’
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, ঘুম থেকে উঠে রেশমাকে দেখার রহস্য। আমাকে বাঁচানোর জন্য কৃ আমার গোটা বাস্তবতা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। বাস্তবতায় প্যাঁচ লেগে যাচ্ছে।
‘হুম। ঠিক ধরেছো। আই অ্যাম স্যরি। আমার একবার মনে হলো, তুমি যেমন ছিলেন তেমন রেখে আসি তোমাকে। তুমি ভুলে যাবে আমাকে। সেটা আর হলো কই।’
আহা! কৃর চোখে জিতে যাওয়ার আবেশটুকু দারুণ লাগছে। আমি তাকে ভুলিনি, এতে যেন তার বিশ্বজয় হয়েছে।
‘আমি ভুলিনি ভালো কথা। তুমি আবার ভুলে যাবে না তো! এর আগেও কিন্তু চেষ্টা করেছো কৃ। কাজ হয়নি। আমি অবশ্য তোমার ভুলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত নই।’
‘ওই যে বললাম না, তুমি হলে উটপাখি! চিন্তিত নই বলেই খালাস। সব চিন্তা যেন আমার একার।’
কথাবার্তা ক্রমে দাম্পত্য কলহের দিকে যাচ্ছে। সাবধান হলাম দ্রুত।
‘আচ্ছা, ওই স্ক্রিপ্ট জিনিসটা কী। বুঝলাম না।’
‘ওই ব্যাটা চাইলে কৃদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। অন্যদের ডেকে আনতে পারে। আমাদের যেসব ক্ষমতা সেসব কাজে লাগাতে পারে। আবার চাইলে বাস্তবতা ভ্যানিশ করে দিতে পারে। অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু ও সম্ভবত সব জানে না। ও এটা পেলই বা কী করে।’
‘সম্ভবত কামরূপ কামাখ্যায় গিয়ে নিয়ে এসেছে।’
আমার ইয়ার্কিটা ধরতে পারলো না কৃ। তার ভয়ার্ত চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে হলো না মোটেও। কৃদের ভাষার কিছু কৌতুক জানলে ভালো হতো। ওর মন ভালো করার একটা চেষ্টা করতাম।
‘তোমার আমার মাঝে যা আছে, সেটাও চাইলে কাটিয়ে দিতে পারে।’
আমি বেশ খানিকটা অবাক হবার ভাণ করে বললাম ‘ও..। আমার আর তোমার মাঝে। আমার আর তোমার মাঝে যে কিছু আছে, মাঝে মাঝে সেটাই তো ভুলে যাই।’
এটা শুনে কৃ যা করলো, তার জন্য লম্বা লম্বা কাশফুলের গাছগুলোকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না। আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে চড়ে বসলো আমার পেটের ওপর। কাশফুলের জন্য আশপাশের মানুষজন আমাদের দেখতে পাচ্ছে না নির্ঘাৎ।
কৃর শরীরে যেন অসুর ভর করেছে। ঘাড়ে হাত রেখে টেনে আমার মুখটাকে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। এই বুঝি ঠোঁট হারাতে হলো! কিন্তু না। ঠোঁট অক্ষতই রইল। যা হারিয়েছি তা হলো কৃর ভালোবাসার গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস। আমাদের মাঝে সত্যিই অনেক বড় কিছু আছে।

গাড়ি নিয়ে ছুটছি অজানার উদ্দেশ্যে। ভুল বললাম। কৃ জানে কোথায় যাচ্ছি। আমি জানি না।
হঠাৎ কড়া ব্রেক। সিটবেল্ট বাঁধা না থাকলে উড়ে পড়তাম। সামনে পেছনে তাকালাম। সুনসান রাস্তা। কৃর কপালে ভাঁজ। একটা কিছু আঁচ করতে পারছে। আরো ভালো করলে তাকালে মনে হবে একটা কিছু অনুভব করছে ও এবং অবশ্যই তা বাজে কিছু।
কৃর কাঁধে হাত রাখতে গিয়েও রাখলাম না। অভয় দেওয়ার চেষ্টা বৃথা। নিজেকে উটপাখি নয়, বরং বেজি টাইপের প্রাণী মনে হচ্ছে এখন।
‘শোনো তুষার! মন দিয়ে শোনো। তুমি মনে রাখার চেষ্টা করো। সব কিছু। যত কিছু ঘটেছে।’
‘ঠিক কী ঘটতে চলে..।’
কথা শেষ হওয়ার আগে বড় একটা ধাক্কা খেলাম। ধীরলয়ে শূন্যে উঠে ভাসতে ভাসতেই আছড়ে পড়লাম অন্তত বিশ ত্রিশ হাত দূরে। কৃ তার জায়গাতেই আছে। ভীষণ ভয় পেয়েছে মেয়েটা। আমার জেদ চেপে গেল। মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়েই ছুটে যেতে চাইলাম তার কাছে। কৃ হাত বাড়িয়ে আমাকে ইশারা করলো যেন না আসি। আমি থামলাম না। বদলে যেতে লাগল সব। মনে হলো এতক্ষণ ধরে স্বপ্ন দেখছি এবং যেকোনোভাবে স্বপ্নের ভেতরই আমি বুঝতে পারছি যে আমি স্বপ্ন দেখছি।
গাড়ি উধাও। রাস্তাটাও। একটা জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। কৃর পরনের কাপড় বদলে যেতে লাগল ঘন ঘন। দুহাতে কপাল চেপে আছে ও। যেন মাইগ্রেনের ব্যথা উঠেছে। নাকি সেও একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। কী সেটা?
এমন সময় আবছা একটা ছায়ামূর্তি দেখলাম। কৃর দিকে এগিয়ে আসছে ওটা উড়ে উড়ে। মানুষের অবয়ব নিলেও পুরোপুরি পারেনি। মাথাটা বেঢপ আকারের লম্বাটে হয়ে আছে। এ কি তবে আরেক কৃ?
প্রথমে মনে হলো বাতাসের শব্দ। পরে বুঝতে পারলাম এটা ওদের ভাষা। বোঝার চেষ্টা করা নিরর্থক। মনে হলো লোকটা, মানে অন্য কৃ, যাকে দেখতে অনেকটা আমার এক দুসম্পর্কের ক্রিমিনাল আত্মীয়ের মতো দেখাচ্ছে, সে আমার দিকে একবার কড়া দৃষ্টি হানল। নাহ, ভস্ম হয়ে গেলাম না। কৃ যতক্ষণ আছে চিন্তা নাই। আমার ক্ষতি কেউ করবে বলে মনে হলো না। কৃকে দুর্বলও মনে হচ্ছে না। এভাবে কেটে গেল কিছুটা সময়।
আচমকা আবার হাতে টান পড়ল। কৃ আবার আমাকে নিয়ে ছুটতে শুরু করেছে।
‘আস্তে! ফ্র্যাকচার হয়ে যাবে!’
‘দৌড়াও’
দুদ্দাড় করে ছুটছি। মাঝে মনে হলো উড়েও যাচ্ছি কিছুটা। জঙ্গলের ভেতর। আমরা এখন কোথায়? ঝরনা টরনা আর খাল দেখে মনে হচ্ছে খাগড়াছড়ির মতো কোনো একটা জায়গা হবে। নাকি সীমানা পার হয়ে মিয়ানমারে চলে গেছি! উটকো ঝামেলা পড়লাম দেখি।
‘আমরা অন্য এক বাস্তবতায় আছি তুষার।’
কৃর মুখে আমার নিজের নামটা শুনতেও কেমন যেন লাগল। নাম ধরে ডাকার মাঝেও যে কিঞ্চিৎ প্রেম প্রেম ভাব থাকতে পারে সেটা টের পেলাম। রেশমা কখনো আমাকে নাম ধরে ডাকেনি। ওগো হ্যাঁগো শুনে শুনে কান পচে যাওয়ার দশা। স্ত্রীরা এসব কবে বুঝবে কে জানে! নাকি কখনই বুঝবে না।
আমি থামলাম। এভাবে ছোটা অর্থহীন মনে হলো।
‘কৃ দাঁড়াও।’
আমার কথায় জোরাল এমন কিছু ছিল যে কৃ দাঁড়াতে বাধ্য হলো। তার চোখে উপচে পড়ছে টেনশন। মদিরা বারে যে টিশার্ট আর শর্টস পরে ছিল এখন আবার সেই পোশাক। জঙ্গলে মানাচ্ছে না। কিন্তু কাপড় নিয়ে চিন্তা করার সময় নয় এখন। আমি ভাবলাম। মানুষ হিসেবে কৃর কাছে আমি নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন একটা কিছু হতে পারি। অস্বীকার করবো না যে বিষয়টা কিছুটা আত্মসম্মানেও লেগেছে।
‘শোনো, বিষয়টা বুঝিয়ে বলো। আমার মন বলছে আমি এর একটা বিহিত করতে পারবো।’
‘আমি তোমাকে হারাতে চাই না! আমি জানি না কিভাবে কী করবো! কিন্তু সব ওলট পালট হয়ে যাবে তুষার!’
কৃ আমাকে জড়িয়ে ধরল। কোনো অনুভূতির কণার আদান-প্রদান ঘটল না। মানে এখন সেই প্রেম নয়, কৃকে ছেঁকে ধরেছে একগাদা উদ্বেগ। আমি কৃকে ছাড়িয়ে নিলাম।
‘আসল ঘটনা বল। নকল ঘটনা বলে আমাকে এখন ভোলাতে পারবে না। উটপাখি এখন মাথা তুলে তাকাবে।’
‘রিরিসা এসেছিল। সে তোমাকে কেড়ে নেবে। সে আমাদের বাস্তবতা বদলে দেবে। এটা মানুষ…।’
‘ও এটা ওই হতচ্ছাড়ার নাম? তা তোমার নামটা তো বললে না। তোমার নাম কি নিরিশা?’
‘আমি তোমার কৃ। শুধু কৃ। তুমি বুঝেছো আমি কী বলেছি?’
আমি পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমে আরো ভারী হতে লাগলো। ঘোলাটে ভাবটা কাটছে না। আমার মনে হলো একটু পর আমার ঘুম ভাঙবে। নিজেকে আবিষ্কার করলো পুরনো সেই বেডরুমে। যেখানে এক সময় পা দুলিয়ে আমি আর রেশমা বসে কৃর অর্ডার করা বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। সম্ভবত ওটাই আমার আসল বাস্তবতা। হয়তো বা নয়। ভাবতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলাম। কৃ তো মনের কথা পড়তে পারে, ভুলেই গিয়েছিলাম!
‘ও! তুমি তাই চাও? বলো! মুখেই বলো। বললে এই মুহূর্তে সেটা হয়ে যাবে।’
‘আর তোমার? তুমি কোথায় থাকবে তখন?’
‘আমার চিন্তা তোমার আছে? সত্যি করে বলো, তুমি আমাকে ভালোবাসো?’
এই প্রথম মনে হলো মানুষের মতো একটা প্রশ্ন করেছে কৃ। নিরবতাকে আপাতত সম্মতির লক্ষ্মণ ধরা যাক। কিন্তু আমার কেন যেন নিরব থাকতে ইচ্ছে করছে না। আজ সকালেই ডাক্তারের কথা মতো এক পাতা রিলাক্সেশন ট্যাবলেট কিনেছি এবং অর্ধেকটা সাবাড় করে ফেলেছি এরইমধ্যে। কৃ খেয়াল করেনি অবশ্য। মাথাটা কেমন ফাঁকা মাথা। ফাঁকা মাথা কবিতার কারখানা। আমি নিজেই ইদানীং সায়েরি লেখা শুরু করেছি। এবার সাহস করে শব্দ করেই কৃকে বললাম, ‘এটা গালিবের দুর্ভাগ্য যে সে তোমাকে ভালোবাসি বলতে পারেনি। আর আমি তো ভাগ্যেই বিশ্বাস করি না।’
‘উফফ.. তোমরা মানুষরা এই একটা জিনিস পারো!’ পট করে আরেকটা চুমু খেল কৃ। আমিও বুঝলাম না আমি ঠিক কী আওড়ে গিয়েছি খানিক আগে। তবে যেটাই বলি না কেন, কৃর ক্ষমতাকে ধন্যবাদ দিলাম। সময়ে সময়ে মনের অবস্থা বুঝে নেওয়ার ব্যাপারটা মন্দ না। রেশমা জীবনেও সেটা পারবে না।
‘যাক, এ যাত্রা জিতে গেলাম। এখন এক কাজ করো। একটা বুদ্ধি এসেছে। তুমি আমাকে সেই গ্রামে নিয়ে চলো। ওঝার সঙ্গে বোঝাপড়া বাকি। আর তোমার কাছে আমার একটা বাসর রাতও পাওনা আছে।’
কৃর চোখ আবার আর্দ্র হতে শুরু করলো। আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘একটা কেন, আমাদের হাজার রূপে হাজারটা বাসর হবে। আমি সব ঠিক করে দেব। সব।’
আমি বোকার মতো মাথা নাড়লাম। যেন আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
জঙ্গলে অস্বাভাবিক বাতাসটা টের পেয়েছি আগেই। অবচেতন মন সতর্ক হয়ে গেল খানিকটা। এবার আর ছিটকে পড়লাম না। কৃকে শক্ত করে ধরে রেখেছি। বলা যায় সে-ই আমাকে ধরে রেখেছে। সামনে আবার সেই ছায়ামূর্তি।
‘রিরিসা! কৃর কাছে কী চাও তুমি!’
এলিয়েনের মতো দেখতে উড়ন্ত লোকটা আমার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো এখনো মানুষের মতো এক্সপ্রেশন দেওয়া শেখেনি।
‘কৃ তুমি এখনো সিদ্ধান্ত নাওনি?’
পরিষ্কার গমগমে মানুষের কণ্ঠে কথাটা বলল লোকটা, নাকি প্রাণীটা বলবো? আশা করেছিলাম চিঁ চিঁ জাতীয় একটা শব্দ শুনবো। লোকটা সম্ভবত আমাকে শোনাতেই কথাটা বাংলায় বলেছে।
কৃর দিকে তাকালাম। ও মাথা নিচু করে আছে।
‘কী চান আপনি?’ তুমি থেকে আপনিতে গেলাম। কাজ হলো না। রিরিসার চোখের দৃষ্টি বদলালো না। হাত-পা ছুড়ে একটা কিছু করতে যাবে, তার আগেই কৃ তাকে থামাল।
‘প্লিজ রিরিসা! আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। এর জন্য যেটা স্বীকার করতে হয় করবো।’
কী বলছে কৃ? কী স্বীকার করতে হবে তাকে। লোকটাই বা অমন চোখ বুঁজে ধ্যান করছে কেন? উত্তর না পেয়ে আমি কৃকে আরো শক্ত করে ধরে রাখলাম।
মগজে শিরশিরে অনুভূতিটা পেতেই বুঝতে পারলাম কী ঘটতে চলেছে। রিরিসা আমার মাথার ভেতর ঢুকে একটা কিছু ঘটানোর চেষ্টা করছে। হয় আমার স্মৃতি নষ্ট করবে কিংবা নতুন কিছু যোগ করবে। ততক্ষণে আমারও একটা বুদ্ধি এসেছে। একটার পর একটা হিজিবিজি জিনিস ভাবছি। হিজিবিজি ভাবতে আমার জুড়ি নেই। লেখালেখির সময় ব্রেইনস্টর্মিং করতে হয় অনেক। সেটাই করছি। হাজারো উপমা, জীবনানন্দের বিষণ্ন কোনো পেঁচা, বিনয় মজুমদারের স্বচ্ছ ডানা মেলে উড়ে যাওয়া ফড়িং, গালিবের শূন্য মদের গ্লাস; রিরিসা হার স্বীকার করতে বাধ্য হলো। শুধু হারই স্বীকার করলো না। আমার হিজিবিজি ভাবনা থামাতে তেড়ে এলো আমার দিকে। বাধা হয়ে দাঁড়াল কৃ। তিন হাত দূরে থামল রিরিসা। কৃর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি তোমার ভালোবাসায় সম্মান করি কৃ। কিন্তু ও দুর্বল, ও ক্ষণস্থায়ী। ওকে তোমার হারাতেই হবে। তুমি আমার সঙ্গে চলো। তা না হলে তুমি জানো কী ঘটবে।’
‘আমি দুর্বল নারে রিরিসা! তুই দুর্বল! তোর চৌদ্দগুষ্টি দুর্বল। হারামজাদা এখান থেকে ভাগ, না হয় তোকে বটি কাবাব বানাবো!’
কাঁহাতক আর মাথা ঠিক রাখা যায়। আমার গালিগালাজ শুনেও রিরিসার ভাবান্তর হলো না যদিও, তবে অবাক হলো কৃ। এতটা সাহস আশা করেনি? হাসলাম। ডাকাতের কল্লা ফেলে দেওয়া লোক আমি। এ চিন্তটাই সাহস যোগাচ্ছে আপাতত।
‘কৃ তুমি টেনশন করো না। তুমি সাথে থাকলে এই রিরিসাকে সরিষা খাইয়ে দেব।’
রিরিসা চোখ বুঁজে কী যেন বিড়বিড় করছে। মন্ত্রপাঠ চলছে! আফসোস, এত কিছু লিখি, কেন যে দুচারটা জাদুমন্ত্র শিখলাম না।
কৃ আমাকে আরো শক্ত করে ধরেছে। এবার কবজির হাড়টা বুঝি ভাঙবে আমার। রিরিসার দিকে হাত উঁচিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো কৃ। কিন্তু উল্টো আমাকেসহ পেছনে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। বুঝতে পারলাম কৃর চেয়ে বেশি শক্তি রাখে ওই রিরিসা। শুধু বুঝতে পারলাম না যে কী ঘটতে চলেছে। কৃর কথা মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম। বাস্তবতা সংক্রান্ত একটা কিছু। পুরোটা মনে পড়ল না।
খানিক পর বদলে যেতে লাগল দৃশ্যপট। আমার চোখে নেমে আসতে লাগল ঘুমের সুনামি। কানে বহুদূর থেকে বাজছে কৃর অস্পষ্ট কিছু কথা। ‘তুষার, আমায় খুঁজে বের করবে। কথা দাও। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, লক্ষীটি আমার, আমাকে খুঁজে বের করবে তুমি।’
কৃর কণ্ঠে প্রবল আকুতি আতঙ্ক আর প্রেম সব মিলেমিশে একাকার। আমার বুকের হাহাকার কি ও শুনতে পাচ্ছে। কোথায় খুঁজবো ওকে। কোনোমতে কৃর হাত ধরতে চাইলাম। পারলাম না। মনে হলো সে অনেক অনেক দূরে। আবার খুব কাছে।
রিরিসাকে দেখালাম উড়াল দিতে। ওঝার মতো ওকেও থামাতে হবে। তবে এখন নয়। সময় হোক। কিন্তু কৃ কোথায় যাচ্ছে যে তাকে আমার খুঁজে বের করতে হবে।
আমিও যেন কোথায় হারিয়ে যেতে শুরু করেছি। মারা যাচ্ছি না। তবে বদলে যাচ্ছি। আমার নিজের নামটাও মনে পড়ছে না। শুধু মনে হচ্ছে কাকে যেন আমি খুব ভালোবাসি। একটি বার তার হাতটা ধরতে না পারলে আমার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!