ফারুক আহম্মেদ জীবন : প্রতিবছর মে- মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাংলাদেশে মা- দিবস পালন করা হয়। অবশ্য এ দিবসটি বিশ্বের একেক দেশে একেক ভাবে পালন করা হয়। এ বছর ১২ই মে জান্নাতিদের স্কুলে মা দিবস পালিত হচ্ছে। জান্নাতিদের স্কুলের সকল ছাত্র ছাত্রীদের মতো। ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া আট বছরের ছোট্ট মেয়ে জান্নাতিও সে তার মাকে নিয়ে গেছে স্কুলে।
স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ জান্নাতির মাকে দেখে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হাসি মুখে সালাম দিয়ে। কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে সম্মানের সাথে বসতে দিলো চেয়ারে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সম্মানিত সভাপতি সহ সভাপতিও সদস্য বৃন্দরাও একে একে সকলে এসে উপস্থিত হলো স্কুল প্রাঙ্গণে। অন্য অন্য সকল ছাত্র ছাত্রীর মায়েদেরকেও সম্মানের সাথে সারি সারি চেয়ার পেতে বসতে দিয়েছে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা বৃন্দ। শিক্ষকরা একপর্যায়ে গার্জেনদেরকে চা- নাস্তা, জলের পর সকল শিক্ষার্থীদের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিলো তাদের নিজেদের মায়েদের হাতে দেওয়ার জন্য। এবং মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। আহা! হৃদয় শীতল করা কি চোখ জুড়ানো দৃশ্য। সকল ছাত্র- ছাত্রী হাসি ভরা স্বর্গীয় কচি মুখে তাদের মায়েদের পানি দিয়ে দুটি ধুয়ে দিচ্ছে। আর তাদের মায়েরা ছলছল নয়নে সানন্দে নিজ নিজ সন্তানের মাথায় আশীর্বাদের হাত বুলিয়ে বুকে টেনে মুখে আদর করে স্নেহের চুম্বন দিচ্ছে। একসময় প্রধান শিক্ষক সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, যদিও আমরা আজ হাজির হয়েছি মা- দিবস উপলক্ষে।

কিন্তু সত্যি বলতে মা- মানেই ভক্তি। মা- মানেই শ্রদ্ধা আর সম্মান। মা- মানেই জগত।মা- মানেই হলো জান্নাত। আর তাই মায়ের ভক্তি শ্রদ্ধা করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন তারিখের দরকার হয় না। জীবনের সর্বক্ষণ পায়ের চরণতলে থেকে মাকে যত্ন, সেবা- শুশ্রূষা করার নামই হলো জীবন।
এ বিষয় আমাদের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের মুখ থেকে তাদের মায়েদের স্মরণে আমরা কিছু কথা শুনবো। এরপর এক-এক করে ডাকা হলো তাদের। সকলে তাদের নিজেদের মায়ের স্মৃতিচারণে অনেক কথা বললো..। একসময় ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া ছোট্ট মেয়ে জান্নাতি ডাকলো। তার মাকে নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য। জান্নাতি সকল -কে সালাম দিয়ে বললো..আমি আমার মায়ের স্মরণে মায়ের স্মৃতিচারণের আগে মাকে নিয়ে একটা কবিতা বলতে চাই। যে কবিতাটি আমাদের বাংলাদেশের দেশ, মানুষ, মাটির কবি, ফারুক আহম্মেদ জীবন তার লেখা “রম্য কথার ছন্দে গাঁথা” চিরন্তন রকমারি কবিতার বইয়ে লিখেছেন।
শিক্ষক শিক্ষিরাসহ উপস্থিত সকলে বললো, কবিতাটি বলো জান্নাতি আমরা শুনবো….।
জান্নাতি বললো…কবিতার নাম: মা জননী”
কলমে- ফারুক আহম্মেদ জীবন
“মা ” শব্দটি বড়ই সুন্দর
যেনো, ডাকতে লাগে মধু,
মায়ের মুখের কথায় আছে
স্নেহের মমতাময়ী যাদু।
দশ মাস, দশ দিন ” মা “
সন্তান গর্ভে রাখিয়া,
জন্মের পর মুখটি দেখে
” মা ” ওঠেন হাসিয়া।
পুরো ত্রিশটি মাস বুকের দুধে
” মা ” যে বড় করে,
একটু ব্যথা পেলে সন্তানের
মায়ের চোখে অশ্রু ঝরে।
” মা ” শব্দটি যে অতি আপন
যেনো পরশ মাখা ” মা,
শত অপরাধ করলেও আমি
মা -তা- মনে রাখে না।
পেটের খিদেই আমার যদি
একটু শুকায় মুখটি,
খাওয়াতে না পারিলে ” মা “
যে, কেঁদে ভাসাই বুকটি।
শত দুঃখে থাকলেও ” মা “
আমি একটু যদি হাসি,
আমার মুখের হাসি দেখে
মা -যে, হয় অনেক খুশি।
তাই, যতো দূরেই রইবো আমি
থাকবো মায়ের বুকে,
কাঁদবো আমি মায়ের দুঃখে
আমি, হাসবো মায়ের সুখে।
আল্লার পরেই আপন হলো “মা “
পরম স্নেহ মমতায়,
তাই তো বলি মায়ের কোনো
জগতে তুলনা তো নাই।
জান্নাতির কবিতা বলা শেষ হলে সকলে করতালি দিয়ে জান্নাতির শুভেচ্ছা জানালো। জান্নাতি বলা শুরু করলো। আমি আমার বাবাকে দেখিনি। শুনি আমার জন্মের পরেই বাবা- রোড-এক্সিডেন্ট করে
মারা,গেছে। মা অনেক কষ্ট করে আমাকে মানুষ করছে। পড়া-লেখার খরচ বহন করছে। এইতো কয়েকদিন আগে আমার খুব জ্বর হয়েছিল। জ্বরে বেঘোরে ভুল বকছিলাম। আমার মা সারারাত জেগে মাথায়,জলপট্টি দিয়ে দেছে। গভীর রাতে নামাজ পড়ে দু,চোখের জল ফেলে মহান আল্লাহু তায়ালার কাছে দু,হাত তুলে আমার সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। আমার মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাওয়ান। তাই আমি মনে করি যে মায়ের জন্য আমি পৃথিবীর আলো- বাতাস উপভোগ করছি। মানবকূলে জন্ম লাভ করেছি। যে মায়ের চরণ তলে আমার মহান রব আমার জান্নাত রেখেছেন।
সেই মা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ। আমার কাছে সবচেয়ে সম্মান, শ্রদ্ধা, আর মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। আমার কাছে আমার মা-ই জান্নাত। আমার চলার পথের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আপনারা সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেনো লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে আমার মাকে শ্রদ্ধা আর ভক্তির আসনে বসিয়ে তাকে খেদি খেদমত করতে
পারি। জান্নাতির কথা গুলো সকলে মন্ত্র-মুগ্ধের মতো শুনছিলো। জান্নাতির কথা শেষ হতে প্রধান শিক্ষক বললেন, আমরা সকলেই দোয়া করি তার বলা কথা গুলো মহান আল্লাহ কবুল করুন, আমিন। আরো বললেন ঐটুকু মেয়ে জান্নাতি যে মহামূল্যবান কথা গুলো বলেছেন জন্মদাত্রী মাকে নিয়ে। সেটা আমার সকলের জন্য চলার পথের পাথেয় হবে আশা করি। এরপর মা- দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হলে। স্কুল থেকে সকলেই যে যার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো। জান্নাতিও তার মায়ের সাথে বাড়ি বাড়ি এলো।
তাং-১৬/৫/২০২৫/ইং
নারাংগালী ঝিকরগাছা যশোর বাংলাদেশ।