আজ আমরা জানবো কেমন হবে ভবিষ্যতের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা এআই
ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি এরই মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপট কিন্তু মোটেও কৃত্রিম নয়। গুগল ও মাইক্রোসফটের চীনে যে শাখা ছিল সেটার সাবেক প্রধান কাই-ফু লি একটি বই লিখেছেন। বইটার নাম ‘এআই-টু থাউজেন্ড ফর্টি ওয়ান’। আর সেই বইতে তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে দিয়েছেন অনেকগুলো পূর্বাভাস।
এআই শব্দটি শুনলে এখনো আমাদের মাথায় ভেসে আসে সায়েন্স ফিকশন ছবির দৃশ্য। অবশ্য সায়েন্স ফিকশনও সত্যি হয়। এইচি ওয়েলস, ফিলিপ কে ডিক ও জুলভার্নের মতো সায়েন্স ফিকশন লেখকদের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু ফলে গেছে।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যে একের পর এক বিপ্লব ঘটে চলেছে তাতে করে আর কয়েক বছর পরই ঘটবে অনেকগুলো পরিবর্তন।
তবে হ্যা, রোবটেরা হয়তো পৃথিবী দখল করবে না, তবে তারা কিন্তু এরই মধ্যে মানুষের চাকরি দখল করতে শুরু করেছে।
এআই টু থাউজেন্ড ফরটি বইটির লেখক কাই-ফু লি বলছেন, টারমিনেটর সিনেমার মতো এ আই-এর ঠেকা পড়েনি যে তারা পৃথিবীর ক্ষমতা দখল করতে আসবে। কারণ, যত যাই ঘটুক, লোভ হিংসা কিংবা ক্ষমতা দেখানোর ইচ্ছা, এসব মানুষেরই লক্ষণ, মেশিনের নয়।
মূলত চ্যাটজিপিটি বা এর মতো এ আইগুলো যা করছে সেটাকে বলা যায় এক ধরনের ইল্যুশন। ডিপ লার্নিং নামে একটি শিখন প্রক্রিয়ার ভোজবাজি। মানুষ যেভাবে কথা বলতে শেখে, যন্ত্রের মধ্যে সেই প্রক্রিয়াটাই শুধু প্রোগ্রামিং করে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যন্ত্রে। তাই এ আই দিয়ে অনেক কাজ সহজ হয়ে গেলেও পৃথিবী রোবটেরা দখল করে ফেলবে এমনটা ভাবার কোনো কারণই নেই।
প্রথমেই আসা যাক স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রসঙ্গে। মানুষের মতো দেখা ও সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে রাস্তায় স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালানো সম্ভব নয় রোবটের পক্ষে। তাদেরকে গাড়ি চালাতে হলে পঞ্চম স্তরের বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হতে হবে। রোবট বিজ্ঞানীরা যে বুদ্ধিমত্তার নাম দিয়েছেন এল-ফাইভ। তখন আর গাড়িকে আর কিছু বলে দিতে হবে না। শহরগুলোর রাস্তা ততদিনে অগমেন্টেড রিয়েলিটির আওতায় এসে গেলে যাত্রীরাও পেছনের সিটে আরাম করে ঘুমাতে পারবে আর রাস্তা বুঝে এক রুট থেকে আরেক রুটে গিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে এআই চালিত গাড়ি।
স্বাস্থ্যখাতেও এআই-এর কাজ চলছে জোরেসোরে। হংকং ও ইসরায়েলসহ আরও অনেক দেশে এখন এআই দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ওষুধ।
চ্যাটজিপিটি যখন উন্মুক্ত হয়, তখন তার ভেতর ছিল ৫৭০ গিগাবাইট তথ্য। এ তথ্যের উৎস ছিল ইন্টারনেটে থাকা বইপত্র, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া। একইভাবে এআইকে যদি কোনো ব্যক্তির শরীরের যাবতীয় তথ্য দিয়ে দেওয়া যায়, তখন সেটা নিজেই বের করে ফেলবে কোন রোগ হওয়ার আশঙ্কা কত, কিংবা তার জন্য কোন চিকিৎসাটা ভালো কাজ করবে। এই ক্ষেত্রে এআই যদি ডিএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করতে শুরু করে তবে সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনের নকশাও বানাতে পারবে এআই।
পড়াশোনাই বা বাদ যাবে কেন? এক চ্যাটজিপিটির ভান্ডারেই আছে ৩০ হাজার কোটি শব্দ। গুগলের জিপিটি-৩ এখন মানুষের মতোই কথা বলতে পারে। সুতরাং এসবের সঙ্গে আমাদের পড়ার কারিকুলামটা যোগ করে দিলেই তো হলো। ক্লাসরুমে অনায়াসে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারবে রোবট-শিক্ষক। আর এটা সেটা প্রশ্নের উত্তর ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা যে কেমন চালিয়ে যেতে পারবে সেই নমুনা এখনকার চ্যাটবটগুলোই তো দেখাচ্ছে। এর বাইরেও, শিশুদের নিখুঁত উচ্চারণ শেখানো ও তার সঙ্গে মানুষের মতো কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার কাজটাও কিন্তু দ্রুত চেপে বসতে পারে এআইয়ের ঘাড়ে।
এআই নিয়ে আসতে পারে নতুন খাবার
কদিন আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ৫০ বছরের পুরোনো একটি বায়োলজির ধাঁধার সমাধান জানা গেছে। সেটা হলো প্রোটিন ফোল্ডিং। এর বাইরে বিভিন্ন মলিকিউল তৈরি ও একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে নতুন কিছু তৈরিতেও সক্ষমতা দেখিয়েছে গুগলের সুপার কম্পিউটার। ধারণা করা হচ্ছে বায়োলজির যাবতীয় তথ্যওয়ালা এসব এআই ভবিষ্যতে সিনথেটিক, নিরাপদ ও নতুন স্বাদের খাবার বানাতে পারবে ল্যাবরেটরিতেই। এতে করে আপনার চাকরি থাকুক বা না থাকুক, ঘরে একটা খাবার তৈরির মেশিন থাকলেই হবে।
আপাতত এআই নিয়ে অত দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কেবল রচনা লেখকদের চাকরি নাই হয়ে যেতে পারে সামনের পাঁচ-দশ বছরে, তবে নতুন করে কোনো কৌতুক কিংবা গা ছমছমে ভূতের গল্প সহসাই লিখতে পারবে না এআই।