নজরকাড়া নকশা এবং অবকাঠামোগত দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম অধুনিক শহর জাপানের রাজধানী টোকিও। এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যায়বহুল শহরও বটে।
প্যাগোডা, মন্দির থেকে শুরু করে টিনএজারদের হালফ্যাশন, সেই সঙ্গে আকাশচুম্বি সব রেস্তরাঁ; সুশি ফিক্সের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। মাত্র একদিনের ভ্রমণেও টোকিও তার বুনিয়াদি ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এমন এক চমৎকার মিশেল আপনার সামনে মেলে ধরবে যা অতুলনীয়।
সকাল
আপনার টোকিও ভ্রমণটি শুরু করুন আসাকুসা বা সেনসোজি মন্দির দিয়ে। ৬৪৫ সালে নির্মিত এই মন্দিরটি দেশটির সবচেয়ে পুরনো মন্দির এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়ও। স্থানীয়দের মুখে মুখে প্রচলিত আছে যে এখানকার মন্দিরের দেবতা আসাকুসা কাননের পৃথিবীর অভাবনীয় অনেক কল্যাণ করার ক্ষমতা আছে। জাপানসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তিন কোটি পর্যটক মন্দিরটি দেখতে আসে। এদো সংস্কৃতির (বর্তমান আধুনিক টোকিওর গোড়াপত্তন যেখান থেকে) পীঠস্থান বলা হয়ে থাকে এই মন্দিরটিকে। এখনও খুঁজলেই পুরনো এই সংস্কৃতির চিহ্ন এখনও পাওয়া যায়। সকালে অনেক ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনও হয় এখানে, যার মধ্যে আছে হজুকি (চীনা লণ্ঠন) বাজার এবং হাগোইতা (কাঠের বৈঠা) বাজার। কামিনারি (বজ্র) ফটকে ঝুলে থাকা অতিকায় লণ্ঠণ পুরো জাপানজুড়ে বিখ্যাত।
পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে মোরি আর্ট জাদুঘর। এটি রোপোঙ্গি হিলস টাওয়ারের ৫৩ তলায় অবস্থিত। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা আধুনিক শিল্পের গ্যালারিও। সমসাময়িক ও আন্তর্জাতিক দুই দিকের প্রতিই সমান গুরুত্ব দিয়ে মোরি আর্ট মিউজিয়াম সৃষ্টিশীল আধুনিক শিল্পের প্রদর্শনী করে থাকে। অতিরিক্ত দুর্বোধ্য ও জটিল শিল্প না রেখে সাধারণ দর্শকদের বোধগম্য শিল্পকর্ম এই জাদুঘরে রাখা হয়। একই ভবনের সবচেয়ে উপরের তলায় অবস্থিত টোকিও সিটি ভিউ অবজারবেশন ডেক। যেটি চারপাশে স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা। এখান থেকে পুরো শহরের চমৎকার একটি দৃশ্য পাওয়া যাবে। সঙ্গে খোলা ছাদের একটি স্কাই ডেকও আছে। তবে সেখানে যাওয়া যাবে যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে। আপনার যদি শিল্পানুরাগী হন তাহলে এখানে থেকে টুয়েন্টি ওয়ান টুয়েন্টি ওয়ান ডিজাইন সাইটে যেতে পারেন। বাংকারের মতো দেখতে এই আর্টি মিউজিয়ামে আছে আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যালারি। এটির নকশা করেছেন জাপানি ডিজাইনার ইসি মিয়াকে এবং স্থপতি তাদাও আন্দো।
বিকাল
জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার সুশির জন্য কোনও ভূমিকার দরকার নেই। যদি আপনি টোকিওতে প্রথমবার যেয়ে থাকেন তাহলে সোজা সুকিজি ফিশ মার্কেটে চলে যান। যেখানে পাওয়া যাবে টোকিওর সবচেয়ে তাজা ও খাঁটি সমুদ্রিক মাছ। আপনি চাইলে বিখ্যাত সুশি দাইওয়ার লম্বা লাইনে দাঁড়াতে পারেন, অথবা তুলনামূলক কম জনপ্রিয় কোনও সুশি দোকানে যেতে পারেন। কম জনপ্রিয় হলেও এসব স্থানেও মানসম্পন্ন সুশি পাওয়া যায়। তবুও যদি আপনার পেট না ভরে তাহলে সুকিজি আউটার মার্কেটে চলে যান, সেখানে আপনি আরও অনেক অনেক স্ট্রিট ফুড পাবেন। এক কাপ গ্রিন টি দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করুন। আসলে টোকিওতে আপনি যে কোনও খবারের সঙ্গেঈ গ্রিন টি পান করতে পারেন।
টোকিওর মধ্যে তরুণদের শহরখ্যাত হারাজুকু শপিংয়ের জন্য একটি বিখ্যাত স্থান। পুরনো দিনের ফ্যাশন থেকে শুরু করে আধুনিক হাই ফ্যাশন সামগ্রি পর্যন্ত সবকিছুই পাওয়া যাবে এখানে। স্থানীয় এবং বিদেশি পর্যটকের আনাগোনায় এখানকার রাস্তাগুলো লোকারণ্যে পরিণত হয়। পাশের পথচারী রাস্তা তাকেশিদা দোরি ধরে এগিয়ে যেতে থাকুন, এটা রংধনু রঙ্গীন আদিবাসী তরুণদের প্রধান স্থান। এরপর প্রধান শপিং মল ওমেতেসান্দোর শাখা রাস্তাটি ধরে এগুতে থাকুন, যেটি ব্যক্তিমালিকানাধীন সব বুটিক দোকান ও ক্যাফেতে ঠাসা।
সন্ধ্যা
শিশু এবং যারা পরিবার নিয়ে বেড়াতে গেছেন তাদের জন্য একটি মজার স্থান হচ্ছে টোকিও ডিজনিল্যান্ড। ১১৫ একরের ওপর স্থপিত এই থিম পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াল্ট ডিজনির সিনেমার আদলে। ১৯৮৩ সালে স্থপিত এই থিম পার্কটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ডিজনির প্রথম থিম পার্ক। পর্যটক আকর্ষণের দিক থেকে এটি বিশ্বের চতুর্থ থিম পার্ক। বিশ্বব্যাপি ডিজনির ১১টি থিম পার্কের মধ্যে এটি নবম। সমুদ্রের রূপকথার ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে টোকিও ডিজনিসি, সেখানে সাতটি থিম বন্দর আছে, যেগুলোর নাম মেডিটেরেনিয়ান হারবার, মিস্টেরি আইল্যান্ড, মারমেড লেগুন, এরাবিয়ান কোস্ট, লস্ট রিভার ডেল্টা, পোর্ট ডিসকভারি এবং আমেরিকান ওয়াটারফ্রন্ট।
আকিহাবারা, যা ইলেক্ট্রনিকস টাউন নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি জায়গা যেখান থেকে টেলিভিশন থেকে শুরু করে সব ইলেট্রনিকস পার্টস কেনা যায়। এই শহরটিতে এখন বহু সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে। ইলেক্ট্রনিকসের দোকানগুলো এখন ম্যাঙ্গা ও এনিমে থেকে শুরু করে জাপানি জনপ্রিয় পপ ধারার যাবতীয় উপকরণ দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত। পুরো শহরটি যেন ঝকমকে আলোর সারি, চড়া সঙ্গীত ও উদ্দীপনায় ভরপুর… যেখানে আপনার দিনের একটি সুন্দর সমাপ্তি ঘটতে পারে।