এ নিয়ে কয়েকশবার হাতে চিমটি কাটা হয়ে গেল। তবু একবারও ব্যথা লাগেনি! তারমানে এ নিশ্চয়ই স্বপ্ন। খুব খারাপ স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন মানুষ এতোক্ষণ দেখে কী করে! দু’চার মিনিট হলে না হয় কথা ছিল, তাই বলে টানা তিনদিন! তবে কি ঐ তিনচোখা দানবটার কথাই সত্যি! সে কি তাহলে..!
না এ কিছুতেই সম্ভব নয়। এ হতে পারে না! সে একটা পুরনো পোড়াবাড়িতে না খেয়ে না ঘুমিয়ে তিনদিন একটা চেয়ারে টানা বসে থাকবে, এটা বিশ্বাস করা যায় না কিছুতেই। ঐ তিনচোখা দানব বললেই হলো! ব্যাটা নিজে তো একটা ভূত, বলে কিনা সেও ভূত হয়ে গেছে! অসম্ভব।
– এ সম্ভব ম্যাডাম। পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
দরজা নেই। তাই নক করার দরকার হলো না। বাইরে ফকফকা চাঁদের আলো। যিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বললেন তাকে বেশ ভয়ার্ত দেখাচ্ছে। তার হাতে একটা ব্রিফকেসের মতো ব্যাগ। দুবার কাশি দেয়ার মতো শব্দ করলেন। তবে তাতেও ঘরের ভেতরে যে বসে আছে তার কোনো সাড়া মিলল না।
– ম্যাডাম, শুধু শুধু হাতে চিমটি কাটছেন। ভূতরা চিমটি কাটলে ব্যাথা পায় না। ওটা একান্তই মানুষের ব্যাপার। আমরা চাইলে আমাদের হাত-পা প্রত্যেকটা খুলে..।
– থামো বলছি! জাস্ট শাট আপ! ইউ ভূত!
– ইয়েস ম্যাডাম, আপনি ঠিক বলেছেন, আমি ভূত। আই এম আ ঘোস্ট। এন্ড মাই নেম ইজ ভয়ানস্কি ভুতোকভ। আমি সুদূর রাশিয়া থেকে এসেছি।
একটু থামলেন ভয়ানস্কি। কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে সাড়া না পেয়ে মিনমিন কণ্ঠে আবার বললেন,
– আন্তর্জাতিক ভূতসংঘ আপনার নাম রেখেছে ঠিশা। তাই বলছি, ঠিশা ম্যাডাম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি?
– হোয়াট!
এবার ঝট করে লাফিয়ে উঠলো মেয়েটি। ভয়ানস্কি পিছু হটতে গিয়েও হটলেন না। পিছু হটা মানেই তিনি ব্যর্থ। আর ব্যর্থ হলেই ভুতসংঘ তাকে চেপে ধরবে।
– আরেকবার আমাকে ঐ নামে ডেকেছিস তো তোকে পিটিয়ে কেলে ভূত বানিয়ে দেব।
– তা সম্ভব নয় ম্যাডাম। আমি তিনচোখা ও মামদো প্রজাতির মাঝামাঝি গোত্রের একটা ভূত। কেলে ভূতদের লিকলিকে পা থাকে। আমার পা বেশ শক্ত। তাছাড়া তিনটে চোখ..।
– শাট আপ!
– তবে ম্যাডাম আপনি কিন্তু শাকচুন্নি প্রজাতির মধ্যে পড়েছেন। আয়নায় দেখুন, একটা নতুন চোখ…।
– কী বললে তুমি! কোথায় আয়না!
দুই সেকেন্ডের মধ্যে ভয়ানস্কি ব্রিফকেস থেকে আয়না বের করলেন।
– এই যে দেখুন।
আয়না দেখামাত্রই ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল মেয়েটি। কিন্তু ভয়ানস্কি নির্বিকার। তিনি ভাল করেই জানেন ভূতরা কখনো অজ্ঞান হয় না। পাঁচ সেকেন্ড পর মেয়েটি আবার চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আমার ঘুম কেন ভাঙছে না! এটা স্বপ্ন! স্বপ্ন!’
ভয়ানস্কি বুঝতে পারলেন আগামী এক মিনিট তার কিছু করার নেই। তাই টানা এক মিনিট চুপচাপ মেয়েটির চিৎকার চেঁচামেচি সহ্য করলেন। কিছুটা শান্ত হতেই ভয়ানস্কি আবার শুরু করলেন।
– ম্যাডাম আসলে ব্যাপারটা…।
– আমাকে ম্যাডাম বলবে না, আমার নাম নিশা।
– স্যরি ম্যাডাম, আমি নিশা নামেও ডাকতে পারবো না। কারণ ভূতসংঘ..।
– আমি কোনো ভূতসংঘ টুতসংঘ মানি না! আমাকে উল্টোপাল্টা নামে ডাকলে তোমার..।
– কিন্তু ম্যাডাম, মানুষের দেয়া নামে ডাকলে ভূতদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আমরা ভূতরা…।
ভয়ানস্কি ঠিক কী বলতে চাচ্ছেন তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। এমন উদ্ভট দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপবে জানলে দেশ ছেড়ে পালাতেন। একটা সদ্য ভূতকে বোঝাতে হবে যে সে আর মানুষ নয়, একটা ভূত। এর চেয়ে একটা গিরগিটিকে কুমির ভাবানো অনেক সহজ।
– আমি যদি সত্যিই ভূত হতাম তবে আমি অদৃশ্য হতাম, হাওয়ায় ভেসে বেড়াতাম। আমার বড় বড় শিং থাকতো। আমার..।
– একচুয়েলি.. মিস ঠিশা, এসব আপনি মানুষের লেখা ভূতের গল্প পড়েই জেনেছেন। যারা কিনা জীবনে ভূত না দেখেই গাদাগাদা ভূতের গল্প লিখেছে। তো..।
– মিস্টার ভয়ানস্কি স্টেথিস্কোপ! আপনি আমাকে ঠিশা নামে ডাকলে আমি কোনো কথাই বলবো না!
ভয়ানস্কি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ভেবেছিলেন এখুনি বুঝি ঘুষি বাগিয়ে তেড়ে আসবে। কিন্তু ঠিশা সামান্য রাগ করেছে। হয়তো এখন সে অন্য কিছু নিয়ে বেশি চিন্তিত।
– ম্যাডাম, আপনি যতো তাড়াতাড়ি নিজেকে ভূত বলে মানবেন ততোই আপনার মঙ্গল। আমিও তাহলে যেতে পারি।
– আপনি এসেছেন কেন?
ভয়ানস্কি কিছুটা ভেবে নিলেন। দায়িত্বের প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললেন, ‘আপনি নতুন ভূত। ভাবলাম আপনার মন খারাপ থাকতে পারে। তাই আপনার সঙ্গে গল্প করতে এসেছি।
– আপনি রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছেন শুধু গল্প করতে?
নাহ, এখনো মানুষের মতো খুঁতখুঁতে স্বভাবগুলো রয়ে গেছে। মনে মনে বিরক্ত হলেন ভয়ানস্কি। দায়িত্বের কথা সরাসরি বলে দেবেন ঠিক করলেন। তার আগেই ঠিশা একলাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
– ঠিকাছে মিস্টার ভয়ানস্কি। এখন আমাকে বলুন এ ঘর থেকে বের হবো কী করে। যতোবার বের হতে চাচ্ছি, দরজাটা কেন পেছনে সরে যাচ্ছে?
ঠিশার কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে গেলেন ভয়ানস্কি। হুট করে এমন স্বাভাবিক হয়ে গেল কেন? যাই হোক, উত্তর দিতে দেরি করলেন না।
– আসলে ম্যাডাম, দরজায় বিশেষ সেন্সর লাগানো আছে। মানুষদের যেমন মস্তিষ্ক থাকে, তেমনি ভূতের থাকে টস্তিষ্ক। আর সেই টস্তিষ্ক কখন কী ভাবছে তা ঐ সেন্সরে ধরা পড়ে। আপনি যতোক্ষণ না নিজেকে ভূত ভাববেন, ততোক্ষণ দরজা আপনার কাছে আসবে না।
– হুম! এই তাহলে ব্যাপার। ঠিকাছে, আমি ভূত। আমি ভূ…ত!
– এইভাবে চেঁচালে কাজ হবে না মিস ঠিশা। আপনাকে এই কাগজগুলোয় সাইন করতে হবে। এবং লেখাগুলো জোরে জোরে পড়তে হবে।
আবারো ভয়ানস্কিকে অবাক করে দিয়ে একটুও রাগলো না ঠিশা। দেরি না করে হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে নিল।
– হুহ। এতো হিজিবিজি নিয়মকানুন পড়তে পারবো না। সাইন করে দিচ্ছি। কলম দিন।
– পাঁচ নম্বর নিয়মটা আপনাকে মানতেই হবে।
ঘরটা ছেড়ে বের না হওয়া পর্যন্ত ভয়ানস্কির কথামতো চলবে বলে মনে মনে ঠিক করেছে ঠিশা। তাই বিরক্তি সত্ত্বেও পাঁচ নম্বর লাইনে চোখ বুলালো। তাতে বেশ বড় বড় করে লেখা,
‘পারতপক্ষে মানুষকে ভয় দেখানো চলবে না। কারণ মরার আগে আমিও মানুষ ছিলাম।’
– হুম। ঠিকাছে। মানলাম। এই নিন, সাইন করলাম।
কাগজটা আবার বাক্সে ঢোকালেন ভয়ানস্কি।
– এবার? এবারতো যেতে পারবো?
– জ্বি অবশ্যই, আসুন আমার সঙ্গে।
ঠিশা প্রাণপনে চেষ্টা করছে, অন্তত এক মিনিটের জন্য নিজেকে ভূত ভাবতে। তা না হলে দরজার সেন্সর আবার তাকে আটকে দিতে পারে। মনে মনে ছোটবেলার কথা ভাবলো। একবার অন্ধকার রাতে সাদা কাপড় পরে পাশের বাসার মিতুকে এমন ভয় দেখিয়েছিল। ঘুটঘুটে রাত। গোটা শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা। ধীর পায়ে দেয়াল ঘেঁসে এগিয়ে যাচ্ছে সে। মুখে গোঁ গোঁ শব্দ।
– ওকে ম্যাডাম! আপনি পেরেছেন! কনগ্রাচুলেশন। ভূতের জগতে আপনাকে স্বাগতম।
ঠিশা সঙ্গে সঙ্গে খুশিতে ইয়াহু বলে দুটো চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু…। কিন্তু তারপরও সে দেখতে পাচ্ছে কেন? চোখ না বন্ধ করলো!
– ইয়ে ম্যাডাম আপনার তিন নম্বর চোখটা খোলা।
মুহূর্তে মনটা বিষিয়ে গেল ঠিশার। এখন উপায়? বাসায় ফিরে গেলে এই তিন নম্বর চোখটা নিয়ে তো তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাবে।
– ম্যাডাম আপনি আসলে এখনো…।
– হ্যাঁ একদম ঠিক। আমি ভূত নই, ভূত নই। আন্ডারস্ট্যান্ড মিস্টার ভয়ানস্কি? আর আপনি যদি ভূত হয়ে থাকেন, তবে আপনি জেনে খুব কষ্ট পাবেন যে, আমি আপনাকে দেখে একটুও ভয় পাচ্ছি না। আফটার অল, আপনাকে আমার একটা বড় ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ, কেননা..।
ঠিশার কথায় কান নেই ভয়ানস্কির। তিনি তিন নম্বর হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছেন আর ভাবছেন কী করা যায়। ঠিশাকে বিশ্বাস করানোটা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু ভূত হয়ে গেছে বুঝতে পেরে যদি মেয়েটা হাউ মাউ চিৎকার শুরু করে দেয়, তখন কী হবে।
– আমি গেলাম। লা.. লা.. লা।
ভয়ানস্কি বাধা দিলেন না। তিনি ভাল করেই জানেন, দুই মিনিটের মধ্যে ঠিশা আবার ফিরে আসবে। কেননা, সে যতোক্ষণ মন থেকে নিজেকে ভূত না ভাববে, ততোক্ষণ কোনো মানুষ তাকে দেখতে পাবে না। সব কিছু ভেদ করে চলে যেতে পারবে, কিন্তু কেউ কিছু টেরও পাবে না।
ভয়ানস্কি ভুল ভেবেছেন। দুই মিনিটও লাগলো না। দেড় মিনিটের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো ঠিশা। ভয়ানস্কির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
– আমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না কেন! আমি! আমার ভেতর দিয়ে দেখলাম সাঁই করে একটা পাখি উড়ে গেল। আমাকে দেখতেই পেল না!
– হুম।
– হুম মানে! আমার কী হয়েছে! অ্যাঁ…..।
ভয়ানস্কি এমন আশঙ্কাই করছিলেন। ভোর হতে বেশি বাকি নেই। সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ অদৃশ্য থাকা সম্ভব নয় ভয়ানস্কির পক্ষে। এদিকে ঠিশা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই যাচ্ছে। তার একটা ব্যবস্থা না করে ভয়ানস্কি যাবেন কী করে।
– এ্যাঁ, ইয়ে ম্যাডাম। কাঁদবেন না প্লিজ। অন্য ভূতরা শুনলে কী ভাববে বলুন তো। তাছাড়া এখানে, মানে ভূতের জগতে সবাই আপনার আপনজন। শুধু দুয়েকটা গেছো ভূত প্রথম কিছুদিন।
– অ্যাঁ…..। অ্যাঁ….। আমি কিসসু জানি না।
ভয়ানস্কি সবে গেছো ভূতদের ব্যাপারে সতর্ক করতে যাচ্ছিলেন। তার আগেই দুটো গেছো ভূতের দেখা। বিজ্ঞানী-ভূত ভয়ানস্কিকে তারা সম্ভবত চেনে না। তাই হেলেদুলে অক্টোপাসের মতো আটটা লিকলিকে পা চালিয়ে একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালো। একজন দাঁত কেলিয়ে হেসে হেসে বলল, ‘কিঁ গোঁ খুঁকি, কাঁদছো কেঁন। মাঁনুষে ভঁয় দেঁখিয়েছে বুঁজি!’
কান্না থামিয়ে হা করে তাদের দুজনের দিকে তাকালো ঠিশা। প্রথমে ভেবেছিল গলা ফাটিয়ে চিৎকার দেবে। কিন্তু তার কেন জানি মোটেও ভয় লাগছে না। মনে হচ্ছে এরা তো তার মতোই, ভয় পাওয়ার কী আছে।
– কে তোমরা!
– হেঁ হেঁ, আঁমার নাঁম মঁটকানো অঁষ্টপদী, আঁমার ভাঁইয়ের নাঁম মঁটকানো সঁপ্তপদী। ওঁর এঁকটা পাঁ কঁম আঁছে তোঁ তাঁই, হেঁ হেঁ হেঁ।
পাশে দাঁড়ানো সাত পাওয়ালা গেছো ভূতটার খেপে যেতে দেরি হলো না।
– তুই কিরে! পুরনো ভূতদের মতো নাকি সুরে কথা বলিস! লজ্জা করে না! মানুষকে ভয় দেখাতে গিয়েই তো আমার একটা পা গেল।
ঠিশা হা করে দুজনের ঝগড়া দেখতে লাগলো। ভয়ানস্কি বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন। দশ বারোটা মৃদু কাশি দিয়েও যখন তিনি ঠিশার মনযোগ সরাতে পারছেন না দেখে বাধ্য হয়ে কিছুটা কঠোর গলায় বললেন।
– মিস ঠিশা, সূর্য উঠে যাবে একটু পর। আপনি নতুন ভূত। তাই প্রথমদিন গায়ে সূর্যের আলো লাগানো ঠিক হবে না। আমাদের এখন নির্ধারিত বাসায় ফেরা উচিৎ।
কেলে ভূতদের ঝগড়া শোনার ধৈর্য বেশিক্ষণ হলো না ঠিশার। ওরা এখন হরর সিনেমা নিয়ে ঝগড়া শুরু করেছে।
– তুঁই ফিঁল্মের কি বুঁজিস! স্টিঁলবার্গের দ্যঁ লাঁস্ট ঘোঁস্ট সিনেমায় আঁমিই অঁভিনয় কঁরেছি। ওঁটা কোঁনো মাঁনুষ ছিঁল না। স্টিঁলবার্গ স্যাঁর সঁবকিছুতে অঁরিজিনাল পঁছন্দ কঁরেন।
– বলেছে তোকে! আর নামটা স্টিলবার্গ হবে না, ওটা স্পিলবার্গ হবে, টাধা কোথাকার!
ঠিশাকে নিয়ে একটা গাছের ছায়ায় বসলেন ভয়ানস্কি। দিনের কড়া আলো ফুটতে এখনো অনেক দেরি আছে। গত দশ মিনিট তিনি কোনো কথা বলেননি। ঠিশাও কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সে বোধহয় এতোক্ষণ চিন্তা করেছে। ভয়ানস্কির কথায় কিছুটা বিশ্বাসও করতে শুরু করেছে। এবং কিছুটা অবাকও হয়েছে। কারণ সে যতো গভীরভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে ততোই মজা পাচ্ছে। যেন ভূত হওয়াটা দারুণ একটা ব্যাপার। তারচেয়েও অবাক করার মতো ব্যাপার হলো গত তিনদিন না খেয়ে থাকলেও তার একটুও খিদে পায়নি।
– ম্যাডাম, মানুষের খাবার হচ্ছে আলু। আর ভূতের খাবার আলো। দূষণমুক্ত পরিষ্কার আকাশের চাঁদের আলো হচ্ছে আমাদের জন্য সবচেয়ে মজার খাবার।
– আইসক্রিম! ভূতদের জন্য আইসক্রিম নেই!
ভয়ানস্কি কিছুটা চমকে উঠলেন। কিছুদিন আগেই তিনি ভূতদের জন্য আইসক্রিম তৈরির এক অসাধারণ রেসিপি আবিষ্কার করেছেন। কেউ খেতে রাজি হয়নি। কারণ ওতে তিনি জোনাকির আলোর সঙ্গে আয়নায় প্রতিফলিত সূর্যের আলো মিশিয়েছেন। এতে নাকি আইসক্রিমের মধ্যে মানুষ মানুষ ভাব চলে এসেছে। কারণ মানুষের সব শক্তির উৎস তো ঐ সূর্য।
– ইয়ে মিস ঠিশা, আমার ব্যাগেই আছে আইসক্রিম। তবে ওটা ভূতদের জন্য তৈরিতো। মানুষের মতো করে খেতে পারবেন না। বাক্সটা খুলে কপ করে আলোটা গিলে নিতে হবে।
– জলদি দিন!
কালো বাক্সটা বেশ হাল্কা। ভেতরে কিছু আছে বলে মনে হলো না ঠিশার। তারপরও ভয়ানস্কির কথা মতো বাক্সটা খুলে ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে সুরুৎ করে একটা টান দিল। একটা আলোর ঝলক দেখা গেল শুধু। মুখের ভেতর অদ্ভুত এক স্বাদ টের পেল।
– আলোটা গিলে ফেলতে পারেন। বিভিন্ন রকম স্বাদ…।
– অসাধারণ! ইয়ামম ইয়ামমম! থ্যাংকু ভয়ানস্কি। আর আছে!
একে একে দশ বাক্স আইসক্রিম সাবাড় করার পর ঠিশা বুঝতে পারলো ভূত হওয়াটা কত্তো মজার। কিন্তু সে যে ভূত হয়ে গেছে সেটা এখনো তার টস্তিষ্কে ঠিকমতো গেঁথে যায়নি। তাই খুশিতে একছুটে চলে এসেছে সূর্যের আলোতে।
ঠিশার আইসক্রিম খাওয়া দেখতে দেখতে ভয়ানস্কি প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাই চিৎকার শুনতে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে।
– ওমাগো! আমি নাই হয়ে যাচ্ছি কেন! হাতের মধ্যে ফুটো হয়ে যাচ্ছে কেন!
– সাবধান! একদম নড়াচড়া করবেন না! একদম না! ফ্রি..জ!
ভয় পেয়েছে ঠিশা। কথামতো একদম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গেল। একছুটে এগিয়ে গেলেন ভয়ানস্কি। ব্রিফকেস থেকে বিশেষ সিকিউরিটি ছাতা বের করে আনলেন। সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ভূতদের এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। তবে নিরাপত্তা ছাতা থাকলে আর চিন্তা নাই। ওটা ভয়ানস্কির নিজস্ব আবিষ্কার।
– আপনি তো নিজেকে রীতিমতো অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছিলেন ঠিশা!
– সরি।
ব্যস এরপর আর কিছুই বললো না ঠিশা। ভয়ানস্কির পেছন পেছন ঘন জঙ্গলে সূর্যের আলোর একদম আড়ালে গিয়ে একটা বট গাছের তলায় বসলো।
রাত দশটা পর্যন্ত ঘুমালেন ভয়ানস্কি। চোখ মেলে দেখলেন ঠিশা নেই। আবার চোখ বুজলেন ভয়ানস্কি। এবার তার কাছে মনে হচ্ছে এতোক্ষণ তিনি দুঃস্বপ্ন দেখেছেন।
– হেই ভয়ানস্কি! দেখো দেখো!
পিট পিট করে তাকালেন ভয়ানস্কি। শাকচুন্নি প্রজাতির হলেও ঠিশাকে এখন ঠিক পেতিœদের মতো দেখাচ্ছে। চুলগুলো খাড়া করে দাঁড় করানো। মাঝের চোখটায় কাজলের মতো কালো রংয়ের কী যেন লাগিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সে তার মাঝের তিন নম্বর হাতটাকে নাড়াতে পারছে। তারমানে সে নিজেকে ভূত বলে মেনে নিয়েছে! লাফিয়ে উঠলেন ভয়ানস্কি। তবে খুশিতে কিছু বলে ওঠার আগেই ঠিশা তাকে ইশারায় চুপ করিয়ে দিল। দূরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসা একটা মানুষের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। ভয়ানস্কির খুশি খুশি ভাব মুহূর্তে পানসে হয়ে গেল। নতুন ভূতদের নিয়ে এই আরেক যন্ত্রণা। ভয় দেখানোর লোভ সামলাতে পারে না।
– ভয়ানস্কি, তোমরা ভয় দেখাও কী করে?
– দেখুন মিস ঠিশা, এটা আমরা, আমরা মানে আমি নিজেও খুব একটা পছন্দ করি না।
– আরে মাত্র একবার! বলো না কী করতে হবে!
ভয়ানস্কির মনে হলো অনন্তকাল ধরে তর্ক করেও লাভ হবে না। ঠিশার মাথায় যা ঢুকেছে তা সে করেই ছাড়বে।
ভয়ানস্কি একপলক আকাশ দেখে নিলেন। পরিষ্কার আকাশ। আজকের চাঁদের আলোটা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। সঙ্গে একটু জোনাকির আলো হলে মন্দ হতো না। আকাশ থেকে চোখ নামাতেই চমকে উঠলেন ভয়ানস্কি। ঠিশা যেভাবে চোখ মুখ বাঁকা করে ভয়ংকরভাবে তাকিয়েছে তাতে ভূত হয়েও তিনি ভয় পাচ্ছেন। কী ভয়ংকর! শিউরে উঠলেও মনে মনে কিছুটা খুশি হলেন ভয়ানস্কি। ঠিশা বেশ দ্রুত ভূতের জগতে পা রেখেছে। তার তেমন কষ্টই হয়নি।
– হাঁউ মাঁউ খাঁউ। মাঁনুষের গন্ধ পাঁউ।
তিনটে হাত নাড়িয়ে ঠিশা এমনভাবে কথাটা বলল যে ভয়ানস্কি রীতিমতো মুগ্ধ। কিন্তু খানিকটা হতাশও হলেন। মানুষের বানানো এমন উদ্ভট শব্দ দিয়েই ভয় দেখাতে হবে কেন ভূতদের।
– এক্সিউজমি ঠিশা। একটু ভুল হয়েছে। ভূতরা মানুষের গন্ধ পায় না। তাছাড়া..।
– আরে ধুর! রাখ তোমার নীতিবাক্য। আমি যাচ্ছি। ব্যাটাকে আজকে এমন ভূতের ভয় দেখাবো। ওহ সরি সরি। আমি তো ভূতই। হে হে হে।
ভয়ানস্কি ঠিশার পিছু নিলেন। প্রথমবার ভয় দেখানোর অভিজ্ঞতা কোনো ভূতেরই ভাল নয়। সবাই ভয় দেখাতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে যায়। উল্টোপাল্টা করে ফেলে। ঠিশার বেলায় তেমন কিছু হলে ভয়ানস্কিকেই জবাবদিহি করতে হবে।
মানুষটার বয়স চলিশের মতো হবে। বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। হাতে একটা অল্প পাওয়ারের টর্চ লাইট। ভয়ানস্কি আন্দাজ করলেন এতো অল্প আলোতে তেমন কিছু হবে না। সামান্য এলার্জি হলেও হতে পারে। তবে ওটা তেমন কিছু নয়। শত হলেও প্রথম ভয় দেখানো বলে কথা।
দুপাশে ঘন জঙ্গল। মানুষটাকে দেখে বেশ সাহসী মনে হচ্ছে। ঠিশা ও ভয়ানস্কি দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে আসতে আরো দুই মিনিটের মতো হাঁটতে হবে মানুষটাকে। ভয়ানস্কি আড়চোখে ঠিশার দিকে তাকালেন। তাকে কেমন যেন চিন্তিত দেখাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে না তো আবার! ভয়ানস্কি সত্যিই আতঙ্কিত। মানুষটা যদি ঠিশাকে দেখে ভয় না পায় তবে গোটা ভূত সমাজের দুপুর বারোটা বেজে যাবে।
ঠিশার কাণ্ড দেখে আতঙ্ক মাথার তালুতে গিয়ে পৌঁছাল। মেয়েটা করছে কি! একটা হাত জামার ভেতর গুটিয়ে নিল। আরেক হাত দিয়ে এমনভাবে কপালের চোখটা ঢেকে দিল যেন কপালে ব্যাথা পেয়েছে। তাকে দেখতে একদম মানুষ মেয়ের মতো দেখাচ্ছে! ভয়ানস্কি কিছু বলার আগেই ঠিশা ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল।
মানুষটা এগিয়ে আসতেই ঠিশা একদৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভয়ানস্কি ভুলে গেলেন তার মাথার ওপরের সুস্বাদু চাঁদের আলোর কথা। হা করে তাকিয়ে আছেন সামনে। ঠিশার কথা যেন বাজের মতো লাগলো তার কানে।
– ওমা! এ দেখি মুকুল আঙ্কেল!
মুকুল আঙ্কেল নামধারী মানুষটাও বেশ চমকে উঠলেন। তবে তার মুখ হাসি হাসি! ভয়ানস্কি মাঝের হাত দিয়ে বুক চেপে ধরলেন। হার্ট নেই, তা না হলে নির্ঘাৎ হার্ট অ্যাটাক হতো। ভূত দেখে মানুষ কিনা হাসছে!
– এ যে দেখি আমাদের নিশা মামনি! এতো রাতে এখানে কী করছো! আর.. আর…আমি তো শুনেছি..।
কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারলো মানুষটা। তবে কথাটা কী হতে পারে তা ঠিশার কথা শুনেই বুঝে গেলেন ভয়ানস্কি।
– আপনি কী শুনেছেন আমি জানি। জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে সাপের কামড়? হিহিহি।
মানুষটা হাসি মুখে মাথা উপর নিচ করলো। তারমানে ঠিশাকে সে এখন মানুষই ভাবছে। ‘ও মাই গড! আমি এখন কী করবো!’ ভয়ানস্কির আর্তচিৎকার কেউ শুনলো না।
– মুকুল আঙ্কেল আমার কপালে ব্যাথা পেয়েছি। আপনি কি আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারবেন?
– হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয়! কেন নয়!
– আসুন তাহলে।
দুজনের পিছু নিলেন ভয়ানস্কি। ঠিক করেছেন ঠিশা যদি শেষপর্যন্ত মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে চায় তবে তিনি…। ‘উফ্! ঠিশার পালায় পড়ে আমিও কি ভুলে যাচ্ছি যে আমি ভূত! ভূতের আবার আত্মহত্যা কিসের!’ বিড়বিড় করে নিজের মাথা চাপড়ালেন ভয়ানস্কি। তবে পিছু নিতে ভুল করছেন না।
– এদিক দিয়ে কেন মা! এতো জঙ্গল।
– আমাদের বাড়িতে যাওয়ার তো এই একটাই রাস্তা।
– কিন্তু মা, এদিকটা তো বেশ ঘন জঙ্গল। কতো কী থাকতে পারে।
ভয়ানস্কিও বুঝতে পারছেন না কিছু। রাস্তা ফেলে রেখে ঠিশা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটছে কেন।
– আঙ্কেল জঙ্গলে কী আছে?
– এই যে মা, যেমন ধর সাপ, বাঘ, উনারা।
– উনারা?
– এই নিশুতি রাত্তিরে উনাদের নাম মুখে আনতে নেই মা।
ঠিশা কিছু বললো না। ভয়ানস্কি অদৃশ্য হয়ে ঠিশার ঠিক পাশে দাঁড়ালেন। তাকে মানুষটা না দেখলেও ঠিশা ঠিকই দেখছে।
– এসব তুমি কী করছো ঠিশা।
– জাস্ট ওয়েট এন্ড সি মিস্টার ভয়ানস্কি।
মানুষটা খানিকটা চমকে উঠলো।
– কী বললে মা?
– আপনাকে না আঙ্কেল। নিজে নিজে কথা বলেছি।
– মা আমার মনে হয় আবার রাস্তায় ফিরে যাওয়া ভাল।
– আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আঙ্কেল?
– না ঠিক তা নয়। আমি আবার উনাদের একদম ভয় পাই না। তবে ঘন জঙ্গল। উনারা যদি সংখ্যায় বেশি হন।
– উনাদের নাম কি?
মুকুল নামের মানুষটা এবার সত্যিই কেমন যেন হাঁসফাঁস করছে। দুই কদম এগিয়ে থেমে গেল। ঠিশার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললো, ‘অনেক এসেছি, এবার তুমি যাও। আমি গেলুম।’
ঠিশা ঝট করে ঘুরে দাঁড়ালো। ভয়ানস্কিও সরে গেলেন বেশ খানিকটা। ঠিশার চোখ দিয়ে খানিকটা উজ্জ্বল আলো বেরোতে দেখলেন ভয়ানস্কি। সঙ্গে সঙ্গে যেন বুকটা হাল্কা হয়ে গেল। যাক মেয়েটার ভৌতিক লক্ষণগুলো নষ্ট হয়নি।
– আঙ্কেল আপনি আমার সঙ্গে যাবেন না কেন?
– এ্যাঁ, ইয়ে উনারা যদি।
– উনারা কে! বলছেন না কেন!
– উনাদের নাম মুখে আনতে নেই নিশা।
– তাহলে এতোক্ষণ যে আমার নাম মুখে আনলেন? তার জন্য কী শাস্তি দেয়া উচিৎ?
মানুষটা হা করে সামনে তাকিয়ে আছে। ঠিশা দেরি না করে ঝট করে কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিল। তিন নম্বর হাতটাও ঝটপট বের করে আনলো।
– এতোক্ষণ আমার নাম ডেকেছ কেন? জবাব দাও! নইলে নইলে!
মানুষটার হাত থেকে টর্চ পড়ে গেল। তার কাঁপুনি দেখে ভয়ানস্কিও খানিকটা সাহস পেলেন। দৃশ্যমান হয়ে সামনে এগিয়ে এলেন। ঠিশার দিকে তাকিয়ে রোবটের মতো বললেন, ‘ম্যাডাম, কে আপনার নাম ধরে ডেকেছে? শুধু বলুন এখুনি এর পেট ফুটো করে তেঁতুল বীজ রেখে দিয়ে আসি। এক রাতের মধ্যে চারা গজাবে।’
অনেক কষ্টে হাসি আটকালো ঠিশা। ভাবছে মানুষকে ভয় দেখানো এতো সহজ! মুখে বলল-
– হ্যাঁ ভয়ানস্কি। যাও কুমিরের দাঁতটা নিয়ে আসো। আমি নিজের হাতে ওর অপারেশন করবো। উহাহাহাহা। উহাহাহাহা।
কুমিরের দাঁতের কথা শোনার পর অদ্ভুত ষষ্ঠ মাত্রার হাসি! দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না মানুষটা। কাটা কলাগাছের মতো ধপাস করে পড়ে গেল। আর খানিক্ষণ হাসি আটকে রাখলে ঠিশা নিজেও জ্ঞান হারাতো। তবে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই হো হো খিক খিক হি হি করে হাসতে শুরু করলো ঠিশা। ভয়ানস্কি তাল মেলাতে গিয়ে দুচারবার হো হো শব্দ করার চেষ্টা করলেন। তবে নতুন দুশ্চিন্তা ভর করায় তার মুখ দিয়ে হাসি ঠিকমতো বের হলো না। ঠিশাকে ভয় দেখানোর রোগে ধরেনি তো!
– ভয়ানস্কি চলো যাই, ভূতসংঘের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে আসি। তাছাড়া, আমি তো বুঝতে পারছি না, এখন আমার কাজ কী।
– হুম। যাওয়া যাক। পোড়াবাড়ির পেছনে আমার হাওয়াই সাইকেল রাখা আছে। সকালের আগেই মস্কো পৌঁছে যাব।
– কিন্তু এরপর আমি কী করবো?
– অনেক কিছু করার আছে ম্যাম। চাইলে আগামী একশ বছর আপনি শুধু পড়াশোনাই করতে পারবেন। এরপর আমাদের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা টাঁসায় চাকরি করবেন। ভিনগ্রহের ভূত খুঁজে বেড়াবেন।
– হুম..। কিন্তু ভয়ানস্কি, আরেকজন।
– মানে!
– ঐ যে দেখ আরেকটা মানুষ। একেও আমি চিনি। আমার টিচার ছিল। ভয়ংকর রাগী। উনাকে একটু ভয় দেখাই?
– কিন্তু উনি শিক্ষক, উনাকে ভয় দেখানো..।
ভয়ানস্কি সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছেন আর বলে যাচ্ছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ঠিশা ততোক্ষণে ভয় দেখানোর নতুন আইডিয়া নিয়ে পৌঁছে গেছে মানুষটার কাছে।