রাজধানীতে বাস করা মানেই মনের মধ্যে কিছুটা গর্ব অনুভব করা। উন্নত নাগরিক সুবিধা, বিলাস বহুল জীবনযাত্রা ও রঙের ছটায় বসবাস নগরবাসীকে ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবায়। তবে বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে যাদের রাজধানীতে বসবাস করা তো গর্বের নয়-ই বরং মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করা। আসুন, এরকম ৫টি দেশের ভয়ংকর শহরগুলো থেকে ঘুরে আসা যাক-
মোগাদিসু, সোমারিয়া
সাধারণভাবেই সোমালিয়া একটি যুদ্ধাক্রান্ত দেশ। দেশটিতে জাতিগত বিভেদ বেশ আগেই থেকেই অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমালি সরকার বাহিনীর সঙ্গে ইথোপিয়ানদের যুদ্ধের মধ্যেই বিষফোরা হয়ে জেকে বসেছে ইসলামি দলের গেরিলা হামলা। অপহরণ এবং উপকুলে জলদস্যুদের উপদ্রবে সারা দেশের জনগণ তো বটেই এমনকি পর্যটকরাও সেখানে নিরাপদ নয়। এই ভয়ংকর দেশটির রাজধানী মোগাদিসু বিশ্বের ভয়ংকর ১০টি শহরের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৯৯১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেয় নি এবং সারা দেশেই সরকারের উলেখযোগ্য কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ পরিস্থিতিতে ক্রমেই দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে যার ফলে রাজধানী মোগাদিসু হয়ে পড়েছে আইন শৃঙ্খলাবিহীন একটি ভয়ংকর নগরী। বোমাবাজি, গোলাগুলি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, দাঙ্গা, গেরিলা হামলা এখানে সবার কাছে নিত্যদিনের ঘটনার মতই মনে হয়। ইতোমধ্যেই রাজধানীর প্রায় অর্ধেক জনগণ পালিয়ে বেঁচেছে। জনশূণ্য রাস্তার পাশে সারি সারি বোমার আঘাতে ক্ষত ভবনগুলো দেখলে ভূতুরে নগর হিসেবেই অনেকে মনে করবে। শহরের হাসপাতালগুলোতে প্রত্যেক দিনই হাজার হাজার আহত ব্যক্তি ভির করছে এবং এরই সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে আত্মঘাতি বোমা হামলা।
বাগদাদ, ইরাক
ইসলামিক বিশ্বে শতাব্দী সেরা সংস্কৃতি-আচার ও বুদ্ধিজীবিদের শহর হিসেবে পরিচিত বাগদাদ এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর শহরের মধ্যে একটি। ভয়ংকর মরণাস্ত্র আছে সন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমন করে। তারপর থেকেই দেশটিতে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়। যদিও রাজধানী বাগদাদসহ গোটা দেশেই নিরাপত্তার জন্য মার্কিন সৈন্য মোতায়েন আছে তথাপি দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহীর হামলা অব্যাহত আছে। আর রাজধানী বাগদাদ তো এখন মৃত্যু নগরী। কুর্দি বিদ্রোহীদের হামলা ও আল-কায়েদা জঙ্গির আত্মঘাতী হামলার মধ্যে সেখানে দূর্নীতি ও অচলবস্থা ও সহিংসতা এখন নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা।
কারাকাস, ভেনিজুয়েলা
ভেনিজুয়েলার সবচেয়ে বড় শহর ও রাজধানীর নাম কারাকাস। এ শহরে খুনের হার এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ খুনের ঘটনা-ই অমিমাংসীত রয়ে গেছে এবং ছিনতাই, ডাকাতি ও মারামারি এখনকার নিত্য দিনের ঘটনা। মাদক চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্য হচ্ছে কারাকাস নগর। ডাকাতি ও অন্যান্য চলমান অপরাধের বিষয়ে পুলিশের চোখে পড়ার মত তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ নাই।
সিউদাদ জুয়ারেজ, মেক্সিকো
মেক্সিকো ধারাবাহিকভাবেই মাদক চোরাচালানীদের স্বর্গরাজ্য। সেখানকার সীমান্ত শহর সিউদাদ জুয়ারেজ এখন একটি ভীতির নাম। অশান্ত শহরটি আরও বেশি অস্থির হয়ে উঠে ১৯৯৪ সালে নাফটা (নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) চুক্তির পর থেকে। শহরটিতে শিল্প সংস্থা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাজারো নতুন মানুষের বসতি শুরু হয়েছে। কারখানাগুলোয় কাজ করছে হাজার হাজার মহিলা। কিন্তু পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। গত ১০ বছরে প্রায় ৪০০ নারী শ্রমিক ধর্ষিত হওয়ার পর খুন হয়েছে এবং নিখোঁজ হয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি। মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় শহরটিতে শুধু ২০০৯ সালেই খুন হয় ২৬০০ মানুষ এবং পরিস্থিতি খুব সহসা ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন বোদ্ধারা।
কাবুল, আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ইতিহাসের স্থান করে নেওয়া একটি শহর। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক দখল হওয়া এ শহরের শুধুই রক্তের ইতিহাস। পরবর্তীতে মার্কিন হামলার পর থেকে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে এ রাজধানী শহরটি। আল-কায়েদার বাসস্থান হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তান এমনিতেই সহিংসতায় ভরপুর সেখানে রাজধানী কাবুল বিগত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের ভয়ংকর শহরের মধ্যে অন্যতম হয়ে আছে। স¤প্রতি তালিবানের হাতেছ কাবুলের ক্ষমতা যাওয়ায় জননিরাপত্তা বিষয়টি এখানে এখনও অনিশ্চিত। মুক্তচিন্তার নারীরাও আছেন বিপদে।
লিখেছেন সজল সরকার