Monday, December 23
Shadow

বিয়ে না করে ৩ বছর ওর বিছানায় ঘুমাতাম, ব্ল্যাকমেইল করায় খুন করেছি

খুন

৩ বছর রাতের বেলা আমি তার সঙ্গে বিছানায় সময় কাটাই। স্বামী-স্ত্রীর মতো আমরা বসবাস করি। বিয়ের কথা বলে সে একটি ভুয়া কাবিন করে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি ছবি মোবাইলফোনে ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে। এরপর আমার ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে দুধের সঙ্গে বিষ এবং পরে হোটেল মেহেরপুরের ২০৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে খুন করি।’ সিলেটের মদন মোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক সাইফুর রহমানের লোমহর্ষক খুনের ঘটনার বিবরণ এভাবেই দিয়েছে ঘাতক ছাত্রী নিশাত তাসনিম রুপা। গতকাল প্রথমে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিকালে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য জানায়। এ সময় গ্রেপ্তার হওয়া রুপার প্রেমিক মোজাম্মেল হোসেনও আদালতে একই তথ্য জানায়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে টিলাগড়ের জমিদার বাড়ির মেস থেকে নিজ বাড়ি গোয়াইনঘাটে যাওয়ার জন্য বের হন কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমান।

এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। রোববার দুপুরে পুলিশ নগরীর সুনামগঞ্জ বাইপাস এলাকার রেনেটা কোম্পানির সামনে রাস্তার পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সিলেটে। সিলেট মহানগর পুলিশও ঘটনার আদি-অন্ত খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান শুরু করে। প্রথমেই তারা সন্ধান পায় সিলেট শহরতলীর শাহপরান এলাকার খিদিরপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের মেয়ে নিশাত তাসনিম রুপার। লাশ উদ্ধারের দিন রাতেই পুলিশ নিজ বাড়ি থেকেই রুপাকে গ্রেপ্তার করে। পরে নগরীর টিলাগড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রুপার প্রেমিক ছাতকের আলমপুরের মোজাম্মেল হোসেনকে। দু’জনকে গ্রেপ্তারের পরপরই পুলিশের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠে।

রোববার রাতে নিহত কলেজ শিক্ষক সাইফুরের মা রনিফা বেগম বাদী হয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করেন। এদিকে রাতে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ রুপা ও তার প্রেমিককে আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায় খুনের ঘটনাবলী। পরে গতকাল বিকালে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতেও তারা একই ধরনের স্বীকারোক্তি দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে নিশাত তাসনিম রুপা জানায়, কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমান প্রায় ৫ বছর ধরে তাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে বসবাস করছেন। তার কাছে সে ও তার ছোট বোন পড়ালেখা করে। প্রায় ৪ বছর আগে থেকেই সাইফুরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক বছর তাদের মধ্যে প্রেম চলার পর হঠাৎ একদিন সাইফুরের ডাকে বিছানায় যায় সে। তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক হয়। প্রায় তিন বছর ধরে প্রতি রাতেই সাইফুরের সঙ্গে তার ঘরেই ঘুমাতো সে। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতো। রাত একটা হলেই সে ছুটে যেতো সাইফুরের কাছে।

বিষয়টি বাড়ির লোকজন প্রথমে জানতে পারেনি। প্রায় ৬ মাস ধরে বাড়ির লোকজন বিষয়টি একটু একটু শুনতে পান। এ নিয়ে রুপা তার প্রেমিক কলেজ শিক্ষক সাইফুরকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। সাইফুর প্রেমিকার চাপে পড়ে একটি ভুয়া কাবিননামাও করে। এদিকে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রায় সময়ই সাইফুর নিজের মোবাইলফোনে ক্যামেরাবন্দি করে রাখে। এসব ছবি দিয়ে তাকে প্রায়ই ব্ল্যাকমেইল করা হতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে রুপা স্বীকারোক্তি দেয়। এই ফাঁকে রুপার ছোট বোনের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তোলে সাইফুর রহমান। বিষয়টি রুপার চোখে ধরা পড়ে। সে এ নিয়ে প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিষয়টি তাদের পরিবার পর্যন্ত গড়ায়। সবার মধ্যে জানাজানি হয়। এ নিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রুপার ভাই সহ আত্মীয়স্বজনরা সাইফুরকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। সাইফুর এসে উঠে টিলাগড়ের একটি মেসে। কিন্তু ওখানে থাকলেও সে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। এসব ছবি রুপার ভাইয়ের কাছেও পাঠিয়ে দেয়।

এতে সাইফুরের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয় রুপা। শনিবার সকালেই সাইফুরকে ফোন করে রুপা দেখা করতে চায়। ডেকে নিয়ে যায় সিলেটের এমসি কলেজের নির্জন টিলার উপর। সেখানে সাইফুরকে রুপা বিষ মাখানো সেমাই ও দুধ খাওয়ায়। এরপর সাইফুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে চলে আসে নগরীর সুবহানীঘাটের হোটেল মেহেরপুরে। হোটেলের ম্যানেজারকে রুপা কাবিন দেখিয়ে বলে তারা স্বামী-স্ত্রী। ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। একটি রুম দেয়ার জন্য বলেন। কথামতো ম্যানেজার কাবিন রেখে রুপা ও সাইফুরকে ২০৬ নম্বর কক্ষ দেন। সাইফুরকে ওই কক্ষে নিয়ে যান রুপা। সেখানে যাওয়ার পর সাইফুর অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর রুপা তার ভ্যানেটি ব্যাগের ভেতরে রাখা দড়ি বের করে। আর ওই দড়ি দিয়ে সে সাইফুরের গলা পেঁচিয়ে ধরে। এক সময় সাইফুরের দেহ নিথর হয়ে পড়লে রুপা ফোন দেয় তার প্রেমিক মোজাম্মিলকে। একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে আসার জন্য বলে। মোজাম্মিল তখন নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মেহেরপুর হোটেলের ২০৬ নম্বর কক্ষে যায়। ওখান থেকে তারা ‘গুরুতর অসুস্থ’ বলে সাইফুরকে কোলে করে নিয়ে এসে গাড়িতে তোলে।

এ সময় তারা হোটেলে ম্যানেজারকে জানায়, তার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। সিএনজি চালককেও বলে তার স্বামী অসুস্থ। একটু পর রুপা আবার সিএনজি চালককে বলে তার স্বামী মারা গেছে। এখন লাশ কী করবে? পরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েই শনিবার বেলা ১টার দিকে সাইফুরের লাশ সুনামগঞ্জ বাইপাসের রেনেটা কোম্পানির ওখানে রাস্তার পাশে ফেলে আসে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ১টার থেকে কলেজ শিক্ষক সাইফুরের লাশ ওখানে পড়েছিল। কেউ খেয়াল করেনি। রাতেও একই স্থানে ছিল। পরের দিন সকাল ১১টার দিকে তাদের কাছে খবর আসে। এরপর তারা গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, রাতে থানায় রুপা ও তার প্রেমিক মোজাম্মিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারাও খুনের ঘটনা স্বীকার করে। এবং পুরো ঘটনাবলী পুলিশকে জানায়। সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জেদান আল মুছা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রুপার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তারা দৈহিক মিলন করে। আর এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রেখে রুপাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রুপা তার প্রেমিক কলেজ শিক্ষক সাইফুরকে খুন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তিনি বলেন, আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার পর রুপা ও তার প্রেমিকা সাইফুরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ এখন তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেবে। উৎস: মানবজমিন

https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg&t=6s

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!