Monday, December 23
Shadow

পালমোনারি হাইপারটেনশন : ঝুঁকি ও চিকিৎসা

ফুসফুসের ভেতরে থাকে পালমোনারি ধমনি। এর ভেতরের নালি সরু হয়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এতে হার্ট থেকে ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন বাধা পায় এবং রক্ত পাম্প করতে হৃৎপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। এতে হার্টের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। একেই বলে পালমোনারি হাইপারটেনশন ।

পালমোনারি হাইপারটেনশন

পালমোনারি হাইপারটেনশন এর লক্ষণ

  • প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই পালমোনারি হাইপারটেনশন থাকতে পারে। যত সময় যায়, রোগের প্রভাব বাড়ে।
  • পালমোনারি হাইপারটেনশন এর লক্ষণের মধ্যে আছে— শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। বিশ্রামরত অবস্থায়ও শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
  • এ ছাড়া অবসাদ ঘিরে ধরে, বুক ধড়ফড় করে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়, অল্প সময়ের জন্য জ্ঞান হারানোর ঘটনাও ঘটতে পারে।
  • পালমোনারি হাইপারটেনশন হলে কারও হাত-পায়ে পানি আসে, পেট ফুলে যায় এবং ঠোঁট নীলচে হয়।

পালমোনারি হাইপারটেনশন এর কারণ

জিনগত ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার কারণে পালমোনারি হাইপারটেনশন হতে পারে। যখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার কারণে হয়, তখন সেটিকে সেকেন্ডারি পালমোনারি হাইপারটেনশন বলে। উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে—শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, ফুসফুসের রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া, বুকের পাঁজরের কাঠামোগত ত্রুটি, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওর, ফুসফুসে রক্ত জমা, হার্টের জন্মগত ত্রুটি, লিভারের অসুখ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অটোইমিউন ডিজিজ ও মাদক সেবন।

পালমোনারি হাইপারটেনশনের পরীক্ষা

ইকোকার্ডিওগ্রাম : এটি হার্টের এক ধরনের আল্ট্রাসনোগ্রাম, যার সাহায্যে পালমোনারি ধমনির রক্তচাপ মাপা যায়।

সিটি স্ক্যান : পালমোনারি ধমনির পরিবর্তনগুলো দেখা হয়। শ্বাসকষ্টের অন্য কোনো কারণ ফুসফুসে আছে কি না সেটা নির্ণয় করা হয়।

ভিকিউ স্ক্যান : ফুসফুসের ধমনিগুলোর কোথাও রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে কি না তা এর মাধ্যমে বের করা যায়।

বুকের এক্স-রে : হার্টের আকার বড় হলো কি না কিংবা ধমনি প্রসারিত হলো কি না তা দেখা হয় এতে।

ডান হার্ট ক্যাথেটারাইজেশন : এ পরীক্ষায় রোগীর শিরায় একটি নমনীয় টিউব বা ক্যাথেটার স্থাপন করা হয়। এই ক্যাথেটারটি পরে ডান নিলয় এবং পালমোনারি ধমনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে চিকিৎসক বুঝতে পারেন পালমোনারি হাইপারটেনশনের ওপর বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব কী হতে পারে।

এ ছাড়া ইসিজি, ইটিটি, পালমোনারি এনজিওগ্রাফি, পালমোনারি ফাংশন টেস্ট, এমআরআই, বায়োপসির মতো কিছু পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।

পালমোনারি হাইপারটেনশন এর জটিলতা

  • পালমোনারি হাইপারটেনশনের কারণে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে হার্টের ডান অংশ রক্ত পাম্প করার শক্তি হারিয়ে ফেললে দেখা দেয় রাইট সাইডেড হার্ট ফেইলিওর।
  • ফুসফুসের রক্তনালি জমাটবদ্ধ হয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হতে পারে। দেখা দিতে পারে অ্যারিদমিয়া বা অনিয়মিত স্পন্দন এবং রক্তপাত।

পালমোনারি হাইপারটেনশন এর চিকিৎসা

  • প্রায় সব রোগীকেই রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধক ওয়ারফারিন সেবন করতে হয়। সঙ্গে ডাইউরেটিক্স, ডিগক্সিনও লাগতে পারে। পালমোনারি চাপ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, প্রোস্ট্যাগ্ল্যান্ডিন, সিলডেনাফিল, বসেনট্যান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার লাগে। যেমন—হার্ট বা ফুসফুস ট্রান্সপ্লান্টেশন, পালমোনারি থ্রম্বো অ্যান্ড আর্টারেক্টোমি, এট্রিয়াল সেপ্টোস্টমি।
  • অনেককে আবার অক্সিজেন থেরাপিও দেওয়া হয়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি হয়। শ্বাসকষ্ট হলে বা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলে এটি উপকারী। আবার যদি কারও রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি থাকে, তবে চিকিৎসক তাকে ওষুধের মাধ্যমে রক্ত পাতলা করার পরামর্শও দিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে হার্ট-ফুসফুস প্রতিস্থাপনও বিকল্প হতে পারে।
  • বিশেষত অল্পবয়সী ব্যক্তিদের জন্য যাদের ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি আর্টারিয়াল হাইপারটেনশন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপন করানো হয়ে থাকে।

পরামর্শ

  • রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। অবসাদ লাগলে জোর করে কাজ করা যাবে না। মানসিক চাপে থাকলে তা কমাতে হবে। এ জন্য ইয়োগা করা যেতে পারে।
  • এ ধরনের রোগীদের সাধারণত ২০ কেজির বেশি ওজন বহন করতে নিষেধ করা হয়।
  • ধূমপান একেবারেই করা যাবে না। খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • পালমোনারি হাইপারটেনশন এ আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণ করা উচিত নয়। গর্ভধারণ করলে তা মা ও শিশু উভয়ের জীবনের জন্যই হুমকি হতে পারে। গর্ভনিরোধী পিলও সেবন করা যাবে না। এতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • উঁচু স্থানে গেলে পালমোনারি হাইপারটেনশন বাড়ে। তাই এ রোগে আক্রান্তদের উঁচু এলাকায় থাকা যাবে না বা ওই সব এলাকায় বেড়াতে যাওয়া যাবে না।

 সূত্র: মায়োক্লিনিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!