শিশুর শ্বাসকষ্ট সম্বন্ধে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে শ্বাসযন্ত্র কী। শ্বাসযন্ত্র শুরু হয় আমাদের নাক থেকে । নাকের ছিদ্র দুটিকে বলা হয় বহিঃনাসারন্ধ্র। এই পথ মুখগহ্বরের কাছে অন্তঃনাসারন্ধ্রে শেষ হয়। এখানেই আছে ফ্যারিংস। নিশ্বাসের সাথে আসা বাতাসের যত ধুলোবালি এখানে আটকে গিয়ে শরীরের ভিতর শুদ্ধ বাতাস প্রবেশ করে।
ফ্যারিংস-এর উপরে আছে আলজিব। কোনো কিছু খাবার সময় এই আল্জিব শ্বাসনালিকে খাদ্যনালি থেকে আড়াল করে, নাহলে খাবার খাওয়ার সময় খাদ্যনালির পরিবর্তে শ্বাসনালি পথে খাবার চলে যেত। ফ্যারিংসের শেষ থেকেই শ্বাসনালির শুরু।
এর প্রথম কার্টিলেজ ঘেরা অংশকে বলা হয় ল্যারিংস। ল্যারিংস থেকে আমাদের কণ্ঠস্বর বেরোয়। আমাদের শ্বাসনালি বা ট্র্যাকিয়া বক্ষ গহ্বরে গিয়ে ফুসফুসের কাছে দুটি ব্রঙ্কাইতে বিভক্ত হয়ে ফুসফুসে ঢোকে। আমাদের শরীরে ফুসফুস দুটি বক্ষগহ্বর বা থোরাসিক ক্যাভিটির মাঝখানে থাকে। ডান ফুসফুসটি সামান্য একটু বড় ও এর তিনটি ভাগ এবং বামটি ছোট ও দু ভাগে বিভক্ত। শ্বাসনালির আকার ঠিক রাখার জন্য এটি ইউ আকৃতির কতকগুলো কার্টিলেজ দিয়ে ঘেরা থাকে। বাচ্চাদের এই কার্টিলেজগুলো খুব নরম ও সংবেদনশীল হয়, যার ফলে খুব সামান্য কারণেই শিশুর শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালীর অসুবিধা দেখা দেয়।
শিশুর শ্বাসকষ্টের কারণ
১. শ্বাসযন্ত্রে যদি কোনো রকম সংক্রমণ হয়ে থাকে। ফ্যারিসে ফ্যারেনজাইটিস, ল্যারিংসে সংক্রমণ বা ল্যারেনজাইটিস হলে।
২. নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের যে কোনোও সংক্রমণ, ল্যারিঙ্গো ট্রাকিয়ো ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, সর্দি, কাশি।
৩. শ্বাসযন্ত্রের যে কোনো অংশে ত্রুটি থাকলে, হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি।
৪. খাবার সময় গলায় খাবার আটকে গেলে।
৫. গলায় হঠাৎ করে কোনো বস্তু, যেমন- পিন, পুঁতি, পয়সা বা অন্য শক্ত কিছু আটকে গেলে।
৬. শিশু জন্মের সময় যদি কোনো কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয় বা গর্তের তরল পদার্থ বাচ্চার শ্বাসনালিতে ঢুকলে।
৭. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মেনিনজাইটিস ও সেন্টিসেমিয়ার কারণে হতে পারে।
সদ্যজাত একজন শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বড়দের চেয়ে বেশি থাকে। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের প্রতি মিনিটে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার ১৮ থেকে ২০ বার। সদ্যজাত শিশুরা এই হার ৩০ থেকে ৪০ বার বা তার কমবেশি হতে পারে। জন্মের পরে কয়েক মাস শিশু শুধু নাক দিয়ে নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে, মুখ দিয়ে পারে না। তাই কোনো কারণে যদি ওদের নাক বন্ধ থাকে (যেমন- সর্দি) তাহলে শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়।
কী করে বোঝা যাবে শিশুর শ্বাসকষ্ট
যে শিশু কথা বলতে পারে তার কথা থেকে সহজেই বোঝা যায় কিন্তু যে কথা বলতে পারে না বা একেবারে ছোট্ট শিশু তাদের স্বাসকষ্ট বোঝা যাবে, যদিঃ
১. শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে আওয়াজ হয়।
২. শিশুর গিলতে অসুবিধা হয় যার জন্য সে খেতে চায় না।
শিশুর শ্বাসকষ্ট : কী করণীয়
যেহেতু শিশুর শ্বাসনালীর ভিতরের পর্দা অল্পতেই ফুলে যায় এবং শ্বাসনালির বাইরের চারপার্শ্বে যে কার্টিলেজের আবরণ থাকে তা খুব নরম, তাই যে কোনো সংক্রমণেই শিশুর নিশ্বাস-প্রশ্বাসের খুব অসুবিধা হয়। এইজন্য প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুর যাতে কোনো রকম সংক্রমণ না হতে পারে। শিশুর বাসস্থান, পরিধেয় বস্ত্রাদি, আশেপাশের পরিবেশ যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুকে খাওয়াতে হবে। পরিষ্কার হাতে ও পরিষ্কার পাত্রে। খোলামেলা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুকে রাখতে হবে। শিশুকে খাওয়ানোর সময় খুব সাবধানে খাওয়াতে হবে যাতে গলায় না আটকায়, শুইয়ে কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না। দুধ খাওয়ানোর সময় মাথা সামান্য উঁচু করে খাওয়াতে হবে যাতে গলা থেকে দুধ কানে না যায়।
বাচ্চাদের একটু কাত করে শোয়ালে বাচ্চারও আরাম হয় আর ভাল ফলও পাওয়া যায়। যে কোনো কারণেই শ্বাসকষ্ট হউক না কেন এ অবস্থায় অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ঔষধ দেয়া যাবে না। জন্মগত ত্রুটি থাকলে অস্ত্রোপচার বা ঔষধের মাধ্যমে সেটাও ভাল করা সম্ভব। তবে তা চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী করাতে হবে।