Monday, February 17
Shadow

আরও যতভাবে বই পড়া যায়

বই পড়া শুধু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি নিজেকে আবিষ্কার করার একটি সূক্ষ্ম প্রক্রিয়াও বটে। আমরা যেভাবে বই পড়ি, তার পদ্ধতি অনেক সময় আমাদের চিন্তাভাবনা ও জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে।

আমি একটি নতুন পদ্ধতি শিখেছি জাপানের মিয়ামতো মুসাশির জীবন থেকে। মুসাশি ছিলেন কিংবদন্তি তলোয়ারবাজ এবং “দ্য বুক অব ফাইভ রিংস” বইয়ের লেখক। তার জীবন থেকে আমি বুঝেছি, বই পড়ার মানে শুধুই জ্ঞান অর্জন নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা উন্নত করার অংশ। তিনি শিখিয়েছেন—আপনার মস্তিষ্ক যে জিনিসটি শিখছে, শরীর দিয়ে সেটিকে প্রমাণ করতে না পারলে শিখন সম্পূর্ণ হয় না। প্রতিটি অধ্যায়ের মর্মার্থ বোঝার পর নিজেকে প্রশ্ন করা—“এটি আমার জীবনে কীভাবে প্রাসঙ্গিক?”

এভাবে বই পড়া মানে কেবল অক্ষর বোঝা নয়, বরং জ্ঞানকে কাজের মাধ্যমে নিজের জীবনে প্রবাহিত করা।

যুক্তির খেলা: লেখকের সাথে বিতর্ক

আমি দার্শনিক আলবার্ট ক্যামু-র কাছ থেকে একটি মূল্যবান অভ্যাস শিখেছি। তিনি বিশ্বাস করতেন, বইয়ের প্রতিটি বাক্য আমাদের মস্তিষ্কে প্রশ্ন জাগানো উচিত। যখনই তিনি কোনও কল্পনা বা তত্ত্ব পড়তেন, তিনি সেটির সত্যতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন। “কেন?” এবং “কীভাবে?”—এই দুই প্রশ্ন তার পড়ার সঙ্গী ছিল।

একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “যে বই আপনাকে ভেতর থেকে অস্বস্তিতে ফেলে না, সেটা পড়াই হয়নি।” ক্যামুর এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরও বই পড়ার সময়ে আত্মসমালোচনামূলক মনোভাব আনতে সাহায্য করে।

আমি নিজেও এই পদ্ধতি প্র্যাকটিস করি। এমন অনেক মুহূর্ত আসে, যখন আমি একটা প্যারা পড়ে সেখানে থেমে যাই। লেখকের চিন্তায় ভুল খুঁজি, আমার জীবনের সাথে সেটির মিল খুঁজে দেখি। এই আলোচনাগুলো আমাকে শুধু নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয় না, বরং আমার নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে আরও শানিত করে।

শূন্যতা এবং মনের খাতার পুনরায় পাঠ

যখন ক্লান্তি এসে ভর করে, তখন অনেক সময় একটা বিশাল বই পড়তে ইচ্ছা করে না। সেজন্য আমি একসময় একটা কৌশল আয়ত্ত করেছি। আমি বই পড়ার সময় এমন কিছু বাক্য লিখে রাখি, যেগুলো এক-দুই লাইনের হলেও আমাকে ভাবাতে বাধ্য করে। আমার কাছে এই লিখে রাখা বাক্যগুলো একেকটা থার্মোসের মতো, ক্লান্ত মনে কফির তাজা উষ্ণতা এনে দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, মার্কাস অরেলিয়াসের “মেডিটেশন্স” থেকে আমার নোট খাতায় লেখা আছে:

“যা-ই হোক, মানুষ যদি তার কাজটা ঠিকভাবে করতে পারে, তবেই সেই জীবনের মূল্য। অন্যরা কী করছে, তা দেখা একান্তই অপ্রাসঙ্গিক।”

এই বাক্য যখন পড়ি, মনে হয় আমি আবার শুরু করতে পারি। ব্যর্থতা যে কোনও সময় পার হতে পারে, শুধু নিজের কাজটায় মনোযোগ দিতে হবে।

অভ্যাসের চাবিকাঠি

একবার এক বুদ্ধিজীবীর কাছ থেকে শোনা একটি কথা আমার মনে গভীর দাগ কেটেছিল: “সফলতার গল্প নয়, বরং অভ্যাসের গল্প শুনো।” অনেকেই জানে, কিছু জানতে হলে প্র্যাকটিস জরুরি। কিন্তু সবাই সেটা অনুশীলন করার সাহস বা ধৈর্য দেখাতে পারে না।

মনে আছে, প্রথমবার রান্না শিখতে গিয়ে কীভাবে হাত কেটেছিল। আমি শিখেছিলাম, অভ্যাসের প্রাথমিক রূপটাই কঠিন। মুসাশির মতো ‘ধৈর্যশীল অভ্যাস’ গড়তে হয়। অভ্যাস এমনভাবে তৈরি হলে, সেটা অটোপাইলটে কাজ করবে।

যখন কোনও সমস্যা আসে, আমার কাছে নিজেকে তৃপ্ত করার মতো আরেকটা লাইন আছে—

“খরচের অভ্যাস দেখো না, বরং সময় খরচের অভ্যাস দেখো। সময় যেভাবে ব্যবহার করো, জীবনও ঠিক তেমন হয়।”

পাঠকের সাথে শেষবারের মতো বলি, অভ্যাস হলো সেই ব্যাসার্ধ, যেটা জ্ঞানের পরিসরকে ক্রমশ প্রশস্ত করে। বই যেমন আমাদের শিক্ষকের ভূমিকা নেয়, তেমনি আমরা এই অভ্যাসগুলোর চর্চা করে জীবনকে গড়ার প্রস্তুতি নিই।

এইখানে যে লেখকের নাম বলা হয়েছে বা বইয়ের নাম বলা হয়েছে। এটা সত্যতা কতটুকু? 

মুহিতুল ইসলাম মুন্না 

শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা। 

গল্প সম্ভার: https://matinews.com/category/stories

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!