ত্যাগ, অপেক্ষা ও ভালোবাসার  এক নীরব সংগ্রাম প্রবাস জীবন  - Mati News
Friday, December 5

ত্যাগ, অপেক্ষা ও ভালোবাসার  এক নীরব সংগ্রাম প্রবাস জীবন 

রাহেলা আক্তার 

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এর অর্থনীতির মূল উৎস কৃষি, তৈরি পোশাক, বিদেশি রেমিট্যান্স। গ্রামের মানুষ কৃষি কাজ করে, আর শহরের মানুষ বিভিন্ন কল-কারখানায়, ও অফিস আদালতে চাকরি করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটা অংশ হচ্ছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থান কম। বর্তমান বিশ্বে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে লাখো মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাড়ি জমান। একজন স্বজন যখন প্রবাসে যান, তখন তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবারের উপর কিছু ইতিবাচক, এবং নেতিবাচক প্রভাব দুটোই পড়ে। 

প্রবাসে থেকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বজনরা পরিবারের জন্য যে অর্থ পাঠান, তা পরিবারকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করে তোলে। সেই অর্থে মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের উন্নত  চিকিৎসা ও শিক্ষা  সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব হয়। অনেক পরিবার গ্রাম থেকে শহরে আসে, পাকা ঘর তৈরি করে, সমাজে মর্যাদা পায়। স্ত্রী প্রায়ই সংসার পরিচালনায় স্বনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এক অর্থে প্রবাসীদের পরিশ্রম দেশের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে—রেমিট্যান্স আজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস।

তবে এর পাশাপাশি কিছু গভীর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। স্বামী দীর্ঘদিন ঘরে না থাকায় পরিবারে মানসিক শূন্যতা তৈরি হয়। স্ত্রীকে একাই সংসারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা প্রায়ই তাকে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে। সন্তানরা পিতার ভালোবাসা ও দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়; তাদের মানসিক বিকাশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক সময় দূরত্ব ও যোগাযোগের অভাবে দাম্পত্য সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস বা ভাঙনও দেখা দেয়। সমাজে কখনও কখনও স্ত্রীকে একা থাকার কারণে অযথা গুজব বা চাপের মুখে পড়তে হয়।

সব মিলিয়ে, প্রবাসে  থাকা একদিকে অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের পথ, অন্যদিকে মানসিক বিচ্ছিন্নতার বাস্তবতা। পরিবারের সদস্যদের বোঝাপড়া, নিয়মিত যোগাযোগ এবং পারস্পরিক আস্থাই পারে এই দূরত্বের প্রভাবকে কমিয়ে আনতে। সমাজের উচিত এসব পরিবারকে সহানুভূতির চোখে দেখা এবং তাদের মানসিক সমর্থন দেওয়া। কারণ, প্রবাস জীবন কেবল অর্থ উপার্জনের গল্প নয়, এটি ত্যাগ, অপেক্ষা ও ভালোবাসার এক নীরব সংগ্রামের নাম।

পানিরছড়া, হোয়ানক,মহেশখালী, কক্সবাজার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *