class="post-template-default single single-post postid-21332 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-১)

ধ্রুব নীলের রোমান্টিক উপন্যাস কৃ

লেখক : ধ্রুব নীল


পাশের বাড়ির ছাদে এক রূপবতী হেঁটে বেড়াচ্ছে এবং আমি তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছি। মেয়েটাকে দেখে একবারও মনে হলো না যে আমার স্ত্রী রেশমা এ অবস্থায় আমাকে দেখলে দুচার কথা শুনিয়ে দেবে।
মনে হলো মেয়েটার দিকে এভাবেই তাকিয়ে থাকতে পারবো। অনন্তকাল না হোক, আপাতত অফিস কামাই করা যায়। কারণ ছাদের মেয়েটা অবিকল লুনার মতো।
অবিকল কথাটা বাড়িয়ে বলিনি। চোখ, কান বা নাকে নয় শুধু। যমজদের মতো হুবহু মিল! তবে একটা বড় কিন্তু আছে। যে কিন্তুটার জন্য আমার তাকিয়ে থাকার ধরনটা ছিল হ্যাংলা। মেয়েটা দেখতে অবিকল পনের বছর আগের লুনার মতো। এখনকার লুনার মতো নয়। মানে মেয়েটা যে লুনাই হতে পারে সেটাও সম্ভব নয়। কারণ লুনা মারা গেছে তের বছর আগে। সে ছিল আমার প্রথম প্রেমিকা।

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-১)
মহাবিশ্ব মানেই রহস্যের ছড়াছড়ি। ইলেকট্রনের দুই রকম আচরণ, কোয়ান্টাম এনটেঙ্গলমেন্ট, স্পেস-টাইম; এসবের ছিঁটেফোঁটা আমার সাত বছরের দাম্পত্য জীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তারপরও ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা যে লুনা নয়, এটাকে অমীমাংসিত রহস্য বলে মেনে নিতে পারছি না। এর একটা মীমাংসা দরকার।
হাত নাড়ল মেয়েটা। যেন আমাকে চেনে, অনেক দিন ধরে। পনের বছর আগে থেকে চেনার প্রশ্নই আসে না। বয়স কত হবে মেয়েটার? পঁচিশ? আঠাশ? লুনা বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো আটত্রিশ। আমার চেয়ে দুই বছরের বড় ছিল ও।
হাত নাড়ানো থামিয়ে মেয়েটা এবার ছাদে পায়চারি করছে। আমাকে দেখছে না। যেন যা দেখার দেখে নিয়েছে।
লুনার সঙ্গে আমার প্রেমের বয়স পনের দিনের। এরপর কঠিন ছ্যাঁকা। আচমকা একদিন লুনা আর আমাকে চিনতে পারল না।
তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে। দুবার ইন্টার ফেল করার পর লুনা ভর্তি হলো আমার বাড়ির পাশের একটা কলেজে। বাড়ি গিয়েই ছুটে যেতাম তার কাছে। ছ্যাঁকা দেওয়ার প্রথম ও শেষ লক্ষ্মণ হিসেবে লুনা একদিন আমার দিকে ফিরেও তাকাল না। গটগট করে হেঁটে চলে গেল। সেবারই শেষ দেখা।
মারা যাওয়ার আগে দুয়েকবার কথা হয়েছিল। সেসব টেনে আনবো না এখন। এখন টেনে আনতে হবে ছাদের মেয়েটার কথা। যে আবার আমার দিকে তাকিয়েছে। এবার অন্যদিকে ঘুরে আড়চোখে দেখছে।
ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াল রেশমা। আমার স্ত্রী। হাতে একগাদা কাপড়। আমি সতর্ক হওয়ারও প্রয়োজন বোধ করলাম না। রেশমা জানতে চাইল, ‘দশটা বাজে। লেট হবে না?’
‘ছুটি নেব আজ।’
‘নেবেই তো। আজ আমার মারিয়ার বাসায় যাওয়ার কথা, আর তুমি বসে থাকবে ঘরে।’
‘আমার কিছু হবে না।’
‘নাও ছুটি। আমার যাওয়ার আমি যাব। ওর বোনের বিয়ে। না করতে পারব না।’
‘অনলাইনে খাবার অর্ডার দেব। রান্না নিয়ে টেনশন করতে হবে না।’
‘টেনশন করার ঠেকা পড়েনি আমার।’
‘একটা লেখা লিখতে হবে। খাওয়ার সময় পাই কিনা তারই ঠিক নাই।’

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-১)
যথারীতি রেশমা এসব ফালতু ও অপ্রয়োজনীয় কথায় কান দিল না। আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে চলে গেল বেডরুমে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে। যেখানে প্রকাণ্ড একটা আয়না। রেশমা তাতে নিজেকে দেখে? কে জানে।
নিজেকে খুব ভাল দেখতে পেত লুনা। সে কী ব্যক্তিত্ব! ওই কঠিন কঠিন চেহারাই আমাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছিল। বেঁচে থাকলে সেও কি এখন রেশমার মতো এখন জাঁদরেল টাইপ শাড়ি পরে বান্ধবীর বোনের বিয়েতে যেত?
এই ফাঁকে আমি আবার বারান্দা থেকে সামনের ছাদ দেখার সুযোগ পেলাম। লুনা নেই। মানে ওই মেয়েটা নেই। আছে আরেকজন। বাচ্চাকে ছাদে ছেড়ে নিজে বসে আছে সিঁড়ির মুখে। এবার আর তাকানোর ইচ্ছে হলো না। লুনার জন্য এতদিন চেপে থাকা হাহাকারওয়ালা স্মৃতিটা গুটিসুটি মেরে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত গুহায় ঢুকে গেল।
একটা কিছু করতে হবে। কী করবো? পাশের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেব? কী জিজ্ঞেস করবো? কাকে করবো? কে আবার কী মনে করে। আমার অত সাহস কোনো কালেই ছিল না। আমি চিকনচাকন চুপচাপ গোছের মানুষ। সাত বছর ধরে বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে না। আমি সেটা নিয়ে বিচলিত হইনি কোনোদিন। বিচলিত হচ্ছি পাশের বাড়ির মেয়েটা দেখতে অবিকল লুনার মতো কেন, সেটা ভেবে।

এখন বিষয়টা পরিষ্কার যে আমি অপেক্ষা করছি কখন রেশমা বিদেয় হবে। ওর তৈরি হতেই এক ঘণ্টা। কিছু কিছু এক ঘণ্টা মানে একটা করে মহাকাল। সময় কাটাতে আমি প্রথমে অফিসে ফোন করে গলাটা খাদে নামিয়ে বসকে বললাম, ‘ব্যাক পেইনটা বেড়েছে খুব। বিছানা ছাড়তে পারছি না।’
স্কুলে থাকতে যেটা ছিল পেট খারাপ বা জ্বর, অফিসের কালে এসে সেটা হয়ে গেল ব্যাক পেইন কিংবা স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অজুহাত। অফিস কামাইয়ের এসব কারণ বলতে কোনো এক রহস্যজনক কারণে আমার ও আমার মতো অনেকের ভেতর অপরাধবোধ কাজ করে না।
নিজেকে চাকরিজীবী মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পা দুলিয়ে গোল চত্বর কিংবা কলেজের মাঠে ইংরেজি স্যারের বাসার সামনে ঘুর ঘুর করছি। একটু পর লুনা বের হবে। তাকে দেখব এবং পিছু নেব।
রেশমার সঙ্গে ঝগড়া হলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। ওই স্মৃতিসংক্রান্ত কোনো একটা রাসায়নিক বিক্রিয়া মগজে গিয়ে এই লুনাকে তৈরি করতে পারে। ছাদের লুনা হয়তো ছাদে নেই। আছে আমার মাথায়।
বিষয়টাকে মিথ্যে প্রমাণ করতেই যেন বেজে উঠল ফোন। অপরিচিত নম্বর। দ্রুত সাইলেন্ট বাটন চেপে দিলাম। রেশমা যথারীতি জানতে চাইল না কে ফোন দিল। আমি-ই বা কী মনে করে ফোন সাইলেন্ট করলাম জানি না।
ফোন হাতে ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়েই চমকে ওঠার অভিনয় করলাম। অভিনয় বললাম কারণ, আমার মন যা বলছিল সেটাই ঘটেছে। চমকে ওঠার কারণ নেই। ছাদে মেয়েটা আবার এসেছে। তার হাতেও ফোন। কানে চেপে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবুজ বাটন চেপে কানে ধরলাম ফোনটা।

(চলবে)

লেখকের অটোগ্রাফসহ মাত্র ২০০ টাকায় ‘কৃ’ এর হার্ডকপি পেতে এই পেইজে ইনবক্স করুন বা কল করুন ০১৪০৭৩৬৫০৭২

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-২)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!