টমেটোকে বলা হয় সৌরশক্তি চালিত প্রাকৃতিক চিনির কারখানা। শুরুর দিকে একটি টমেটো গাছ যে পরিমাণ চিনি তৈরি করে তার পুরোটাই ব্যয় করতে চায় নতুন পাতার বৃদ্ধিতে। এই পর্যায়ে, টমেটো গাছগুলি দ্রুত বাড়ে। প্রতি ১২-১৫ দিন পর টমেটো গাছের আকার দ্বিগুণ হয়। এক পর্যায়ে গাছটি এত বেশি চিনি তৈরি করে যখন তা আর অগ্রভাগের পাতার বৃদ্ধিতে কাজে লাগে না। তখনই উদ্ভিদটি নতুন শাখা তৈরি করতে এবং ফুল ফোটার সংকেত পায়। এ প্রক্রিয়া সাধারণত ১০-১২টি পাতা প্রসারিত হওয়ার পরেই ঘটে। ওই সময় টমেটো গাছ ১২-১৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। আর ওই সময়ই টমেটো গাছ ছাঁটাই করার জন্য উপযুক্ত হয়।
রোপণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, টমেটো গাছের সম্পূর্ণ চরিত্র বদলে যায়। কোনো সাপোর্ট না পেলে তখন গাছটি একাধিক শাখার ভারে নুয়ে পড়ে। মূল কাণ্ডটি অনুভূমিক হয়ে গেলে, তখন শাখা বাড়ার প্রবণতা আরও বাড়ে। এ কারণেই টমেটো গাছ ছাঁটাই (Tomato plant Pruning) করা জরুরি।
টমেটো গাছ ছাঁটাই
মূল মূল কাণ্ডের ফাঁকে তৈরি হয় সাকার। প্রথম ফুলের গুচ্ছের নিচেও থাকে এই সাকার। সবগুলো আঙুল দিয়ে ছেঁটে ফেলুন। এতে শক্তিশালী মূল কাণ্ডটা উৎসাহ পায়।
সঠিকভাবে ছাঁটাই করা হলে এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মতো উপযুক্ত সাপোর্ট পেলে টমেটো গাছের সমস্ত পাতায় রোদ পড়বে। এতে গাছে উৎপাদিত সমস্ত চিনিই ফল উৎপাদনে পরিচালিত হয়। যদি আরও ডালপালা বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে কিছু মূল্যবান চিনি চলে যাবে নতুন নতুন অগ্রভাগ উৎপাদনের পেছনে।
আর বেশি ডালপালা মানেই কম ফল হবে ও টমেটো হবে ছোট আকারের। আর বেশি পাতা ও শাখা মানেই রোগের ঝুঁকিও বেশি হবে। আবার সব পাতা যদি রোদ না পায় তবে টমেটো গাছে সুগার উৎপাদনও কমে যাবে। বিশেষ করে যখন টমেটো গাছ মাটিতে পড়ে থাকে, বা যখন ঘন করে লাগানো হয়, তখন এর অনেক পাতায় স্থায়ী ছায়া পড়ে। এতে টমেটোর উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।
টমেটো গাছের জন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- টমেটো গাছটি যেন খাড়া থাকে, কিছুতেই যেন মাটিতে নুয়ে না পড়ে
- টমেটো গাছের প্রতিটি পাতায় রোদ লাগা নিশ্চিত করতে গাছটির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ স্থান ছেড়ে দিতে হবে
- টমেটো গাছের পাতা ভেজা থাকা অবস্থায় গাছ বাঁধা বা ছাঁটাই করা যাবে না।
- প্রথম ফুল আসার পর টমেটো গাছকে দণ্ডের সঙ্গে বাঁধুন। তার আগে নয়।
টমেটো গাছ ছাঁটাই করা হলে তা গাছের স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। ছাঁটাই করা এবং সাপোর্ট পেলে উদ্ভিদের পাতা দ্রুত শুকিয়ে যায়, তাই ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকজনিত রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ কম থাকে।
খাড়া গাছগুলিতে পাতার দাগ এবং ফলের পচনের সমস্যা কম থাকে। কারণ তাদের পাতাগুলি শুষ্ক থাকে এবং রোগজীবাণু-বোঝাই মাটি থেকে আলাদা থাকে।
টমেটো গাছের সাকার চেনার উপায় How to find suckers in a tomato plant
উদ্ভিদের নিচ থেকে ক্রমানুসারে সাকার ডালগুলো তৈরি হয়। গাছে যত দূরে একটি সাকার তৈরি হবে, সে গাছ ততই ফলনে দুর্বল হবে। কারণ গাছের উপরে সাকার তৈরি হওয়ার মানে এতে তৈরি সুগারের ঘনত্ব কমবে। প্রথম ফুলের গুচ্ছের নিচ থেকে উৎপন্ন পার্শ্ব কাণ্ড থাকলে সেটাও গাছের মূল কান্ডের তৈরি খাদ্যে ভাগ বসায়। তাই টমেটো গাছ বহু-কান্ডযুক্ত হলে সেটার সব ডালপালার আকার মোটামুটি একই রাখতে পারলে ভালো। তাই টমেটোর যে অংশে বা যে ডালে গুচ্ছ ফল ধরে তার পাশে বা বিপরীতের ডালটি ছেঁটে দিলে ফলগুলোর আকার বড় হবে।
টমেটো গাছের সাকার চেনা বেশ সহজ। দুটো ডালের মাঝেই দেখবেন ছোট করে ঠিক ৪৫ ডিগ্রি কোণে নতুন ডাল তৈরি হচ্ছে। প্রথম ফুল আসার পর ওই ফুলের নিচে থাকা এমন সমস্ত সাকার হাত দিয়েই অনায়াসে ছিঁড়ে ফেলা যায়।
সাকার ছেড়ার জন্য হাতই যথেষ্ট। দুই আঙুলে ধরে কয়েকবার সামনে পেছনে নড়ালে সাকারটি উঠে আসবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সাকার ছেঁড়ার জায়গায় হাতের স্পর্শ না লাগে। এতে গাছে ইনফেকশন হতে পারে। ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করলেও সেটাকে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
ফুল আসার পর ফলযুক্ত ডালটিকে একটি সাপোর্ট দণ্ড বা খাঁচার সঙ্গে এমনভাবে বাঁধতে হবে যাতে ফল বড় হতে থাকলেও গাছটি হেলে না পড়ে।