class="post-template-default single single-post postid-1408 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

আইজি পদকের টাকায় আবদুল্লাহকে হুইলচেয়ার কিনে দেন এসআই টিটু

si titu

পেশাগত দায়িত্ব পালনে দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছরের জানুয়ারিতে আইজি পদক পান টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান টিটু। পদকের সঙ্গে টাকাও দেওয়া হয় তাঁকে। পদক নিয়ে ফেরার পথে সিদ্ধান্ত নেন এ টাকা নিজের প্রয়োজনের পাশাপাশি ভালো কোনো কাজে ব্যয় করবেন। তখন মনে মনে ভাবতে থাকেন ভালো কী কাজ করা যায়। হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে মো. আবদুল্লাহর (১২) কথা।

আবদুল্লাহ টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর এলাকার চা দোকানের মালিক জয়নাল আবেদীনের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে। জন্মের পর দেড় বছর স্বাভাবিক জীবন যাপন করে সে। পরে হঠাৎ টাইফায়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। একপর্যায়ে তার পা অকেজো হয়ে যায়। চলাফেরায় অক্ষম হয়ে পড়ে সে। কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল তাঁর ব্যবসার সব পুঁজি ব্যয় করেন ছেলের পেছনে। সম্পত্তিও গেছে ছেলের চিকিৎসায়। নিরুপায় হয়ে বাড়ির কাছে চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে থাকেন। এর মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। প্রতিবন্ধী ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে বিপাকে পড়েন জয়নাল। পরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই দোকান চালাতে শুরু করেন।

অফিসে যাওয়া-আসার পথে তিন বছর আগে আবদুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় হয় এসআই টিটুর। কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আইজি পদকের টাকা থেকে আবদুল্লাহকে হুইলচেয়ার কিনে দিয়েছেন তিনি। পড়ালেখার জন্য রেখে দিয়েছেন গৃহশিক্ষিকা। আবদুল্লাহ যাতে অন্য শিশুদের মতো বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে পারে সে জন্য রিকশা ঠিক করে দেওয়া আছে। প্রতি শুক্রবার সেই রিকশায় করে শহরের এসপি পার্ক ও ডিসি লেক দিয়ে ঘুরে বেড়ায় আবদুল্লাহ। সে বলে, ‘আংকেল (এসআই টিটু) আমাকে ব্যায়াম করায়। হিসাব শেখায়। স্যারও রেখে দিয়েছে। আমি এখন বলতে পারি—কেউ ৩০ টাকার জিনিস কিনে ১০০ টাকা দিলে তাকে ৭০ টাকা ফেরত দিতে হবে।’

আবদুল্লাহর বাবা জয়নাল বলেন, ‘স্ত্রী চলে যাওয়ার পর খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। এ খবর টিটু সাহেবকে জানালে তিনি অনেক চেষ্টার পর ঢাকা থেকে স্ত্রীর সন্ধান দেন এবং তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। পুলিশ অফিসার আসাদুজ্জামান টিটু ভাই আমার ছেলে ও পরিবারের জন্য যা করেছেন তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাকে ভাবতে শিখিয়েছেন তিনি। অনেক দিন ধরে তিনি আবদুল্লাহর দেখাশোনা করছেন। মানুষ শুধু পুলিশের খারাপটা দেখে। টিটু ভাইয়ের মতো ভালো মানুষও পুলিশে চাকরি করেন।’

এ ব্যাপারে এসআই টিটু বলেন, ‘আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে একজন করে অসহায়-প্রতিবন্ধী মানুষের দায়িত্ব নিই, তাহলে সমাজ তথা দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। সহযোগিতা করার পাশাপাশি তাদের এমন কিছু একটা শিখিয়ে দেওয়া যায়, যাতে পরবর্তী সময়ে সেই কাজের ওপর নির্ভর করেই তারা সারা জীবন চলতে পারে। তা ছাড়া প্রতিবন্ধীরাও আর নিজেকে অসহায় মনে করবে না। আবদুল্লাহর ক্ষেত্রেও তাই করেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!